সংকট, সংলাপ, সমাধান, তবে কোন পথে …

  • আপডেট সময় শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
  • 223 পাঠক

সংবাদ ভাষ্য

————-
সংকট-সংলাপ-সমাধান; নির্বাচনের বছরে দেশের রাজনীতিতে এই ত্রিভুজের মিলে যাওয়ার সংকেত মিলছে কি এখন? অনেক দিন থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সংকট একটি বাস্তবতা।

এই অবস্থায় আগামীতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা এখন জনআকাঙ্ক্ষা। সমঝোতা চাই জাতীয় স্বার্থে। দেশের বড় দুই দল শেষ পর্যন্ত সংলাপের পথে হাঁটবে কি না এ প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে সামনে আসছে। তাই দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে নিবিড়ভাবে খোঁজা হচ্ছে সংলাপের সম্ভাবনার কোনো বীজ লুকানো রয়েছে কি না। তবে দুদলই যার যার বর্তমান অবস্থানে অনড় থাকলে সংলাপ শেষ পর্যন্ত ‘দূরের বাঁশি’ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেও সংলাপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে নানান কার্যকারণ সূত্রে। সম্প্রতি কূটনৈতিক মহলের টানা তৎপরতার পর রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কয়েক দিনের বক্তব্যের সুরে ‘সংলাপের বার্তা’ শুনতে পাচ্ছেন অনেকেই।

ওবায়দুল কাদের সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন ইস্যুতে অন্য কোনো পথ থাকলে তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির প্রতি। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘তিনি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না’- এমন কোনো শর্ত ছিল না বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের পর অনেকেই ভাবছেন- বরফ বুঝি গলছে! আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার পথেই বিচক্ষণতার সঙ্গে হাঁটছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। যদিও এসব বক্তব্য এখনও সহজবোধ্য মনে করছেন না বিএনপি নেতারা। তাই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি তাদের।

তবে যোগাযোগ করলে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জানান, সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তখন দেখা যাবে। তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তেমন আস্থা পাচ্ছেন না।

বিএনপি নেতারা বলেন, তাদের দল একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন চায়। এর জন্য সংসদে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তারাই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়কের বিধান সংযোজন করতে পারে। এমন উদ্যোগ নিলে অন্য কোনো পথ খোঁজার প্রয়োজন হবে না। অন্যদিকে বিএনপির এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আওয়ামী লীগের দিক থেকে সংলাপের সংকেত পাওয়াটা হয়তো সহজ হবে না।

প্রসঙ্গ যখন সংলাপ :

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংলাপের ইতিহাস একেবারেই নতুন নয়। অতীতে অন্তত তিনবার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ হয়েছে, যার মধ্যে দুবার হয়েছে বিদেশিদের মধ্যস্থতায়।

১৯৯৪ সালে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিরোধে মধ্যস্থতা করতে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে ঢাকায় আসেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টেফান। কিন্তু তা সফল হয়নি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে তৎকালীন সদ্যবিদায়ি প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে আওয়ামী লীগ মেনে না নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সংসদ ভবনে সংলাপে বসেন। সে সংলাপেও সফলতা আসেনি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। সেবার শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান রেখেই নির্বাচনের একটি ফর্মুলা বের করার চেষ্টা করেন জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি। কিন্তু বিএনপি তাতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

তারানকো তার সফরকালে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। কিন্তু উভয়পক্ষ তাদের দাবিতে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান ছাড়াই ফিরে যান তারানকো।

এর বাইরেও ২০১৮ সালে অর্থাৎ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ হয়েছিল। তবে সেটা পরবর্তী রাজনৈতিক গতিপথ নির্ণয়ে কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি।

সংলাপ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে সহজে সেটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

সমাধানের জন্য পর্দার অন্তরালে ৬০:৪০ (জাতীয় সংসদের আসন) অনুপাতের ভাগাভাগি- এ ধরনের কতগুলো আলোচনার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করা যেতে পারে বলে মনে হয়। কিন্তু সেগুলো যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে বড় ধরনের শর্টসার্কিটের আশঙ্কা থেকে যায়।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সরকার চায় বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।

এই ভাবনা থেকেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বা অন্য কারও অন্য কোনো চিন্তা থাকলে তার উপায় খুঁজে বের করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের নেতারা। মূলত এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক মনোভাব বোঝারও চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই বলে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে সরকারের নমনীয় মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এখন বিএনপি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে বা দলটির অবস্থান পরিষ্কার জানা গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে বিএনপি যদি ইতিবাচক সাড়া না দেয় তাহলে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে কেউ আর অন্তত প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে না। বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দিলে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তুতি নেওয়া হবে- এমন আভাস মিলেছে দলটির উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে।

ওই সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই উদার। অতীতের এত অপমান সহ্য করে তিনি জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে হয়তো সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বসবেন। তবে এক্ষেত্রে সবাইকেই ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছে। আমাদের নেত্রী একটা জিনিস বিশ্বাস করেন, সেটা হচ্ছে- বড় রাজত্ব ছোট আত্মা দিয়ে চলে না। নেত্রী বড় রাজত্ব বড় আত্মা নিয়েই চালাচ্ছেন। তাই সামনের দিনে তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপই নেবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির কোনোটাই অব্যবহৃত রাখব না। আমাদের আচার-আচরণ-পদক্ষেপ গণতন্ত্রসম্মত হবে। বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হয় কি না এটা হচ্ছে বিষয়।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধানে অন্য পথ থাকলে বিএনপি খুঁজে বের করুক। এর আগের দিন তিনি বলেন, দেশের বিভক্ত রাজনীতিতে সেতু তৈরি না হয়ে দেয়াল উঁচু থেকে উঁচু হচ্ছে। এই অলঙ্ঘনীয় দেয়াল ভেঙে সম্প্রীতির সেতু তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য জীবনধারায় ও গণতন্ত্রচর্চার জন্য রাজনীতিতে সেতু নির্মাণ আবশ্যক হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, এটা তার নলেজে নেই। এরকম কোনো উদ্যোগের কথা তিনি জানেন না।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সূত্র ধরেই সিনিয়র আইনজীবীরা বলেছেন- বর্তমান সংবিধানের মধ্যে ভিন্ন কোনো পথ নেই। ভিন্ন কোনো পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, বর্তমান সংবিধানে ভিন্ন কোনো পথের সুযোগ নেই। সংবিধানের মধ্যে থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এর বাইরে কোনো পথ আমার জানা নেই।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, সংবিধানের ৫৭ ধারার ৩নং উপধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে- আরেক প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করবেন। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধন না করে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে অন্য কোনো পদ্ধতি বের করার সুযোগ নেই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইইউ সদস্যরা বিএনপিসহ বিরোধীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে আরেকটু স্পেস করে দিতেও বলেন তারা। এরপর থেকেই সরকারি দলের নেতারা এমন কিছু কিছু বক্তব্য দিচ্ছেন যা পূর্বের অবস্থান থেকে কিছুটা আলাদা।

এর আগে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে বলেছেন, এমন একটা নির্বাচন করতে হবে যেখানে জনগণ তাদের মতামত নির্ভয়ে দিতে পারে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, রাজনীতিতে আলোচনা একটি চলমান বিষয়। আগের নির্বাচনেও আমরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু বিএনপি সাড়া দেয়নি। এবারও আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে সব দল অংশ নেবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এবার আর একতরফা নির্বাচনের ‘অপবাদ’ নিতে চায় না সরকার। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করার বিষয়েই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদের সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছেন- ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন এবার হবে না। এ বিষয়টা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিতে হবে। একই বার্তা বিদেশিদেরও দেওয়া হয়েছে। আর এগুলো শুধু কথার কথা নয়।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মো. জমির বলেন, সব দিক থেকেই আমরা কথা বলার জন্য প্রস্তুত। আমাদের নেত্রী তো দরজা খুলেই রেখেছেন, তিনি তো দরজা বন্ধ করেননি। আপনারা (বিএনপি) আসুন, বসুন, কথা বলুন। সংবিধানের কোন কোন জায়গায় মতান্তর রয়েছে সেটা তুলে ধরুন।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের সাম্প্রতিকতম বক্তব্য-বিবৃতিতে আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না বিএনপি নেতারা। হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ নেতাদের এরকম কথাবার্তায় বরং সংশয় বোধ করছেন তারা। এ নিয়ে গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য-বিবৃতিকে আপাতত পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

এ ছাড়া তাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো ধরনের জবাব না দিয়ে আরও অপেক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করার কথাও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের স্বার্থে সংবিধান থেকে দলনিরপেক্ষ সরকারের বিধান বাতিল করেছে। সংসদে সংবিধান পরিবর্তন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তাদের। তারাই চাইলে তত্ত্বাবধায়কের বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে পারে। এমন একটি উদ্যোগ নিলে অন্য কোনো পথ খোঁজার প্রয়োজনই হবে না।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা তো বলেই দিয়েছি যে নিরপেক্ষ সরকার ব্যতীত কোনো নির্বাচন হবে না। এর বাইরে আর কিছু নেই।এর বাইরে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না- এটা সবাই জানে।

সংলাপের ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সংলাপের পরিবেশ-পরিস্থিতি হলে সেটা তখন দেখা যাবে। এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। তবে সংবিধান তো কুরআন শরিফ না যে পরিবর্তন করা যাবে না। ওরা যদি উঠিয়ে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান) দিতে পারে, তাহলে বসাতেও পারবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না- এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের স্ট্যান্ড। তবে সরকার যদি আহ্বান জানায়, তাহলে তারা কী বলতে চায় তা শোনা উচিত।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দাবিই হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের বিধান করে সংসদ বাতিল করুক। নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হলে আমরা সেখানে অংশ নেব। এটাই তো আমাদের দাবি- যার ভিত্তিতে আমরা আন্দোলন করছি।

তিনি মনে করেন, সরকার উদ্যোগ নিলে এখনই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজন করা যায়।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আসলে সংলাপ ছাড়া তো পলিটিক্যাল সিস্টেম চলতে পারে না। যেকোনো গণতন্ত্রেই সংলাপ ছাড়া সমস্যার সমাধান হয় না। তিনি বলেন, কোনো পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থায় ‘হাউস ডিজলভড’ (সংসদ বিলুপ্তি) ছাড়া নির্বাচন হয় না। সংলাপের প্রধান শর্তই হবে ওনাদের হাউস ডিজলভড করতে হবে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে অন্যের হাতে ক্ষমতা দেবেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!