০৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

পকেটে পিস্তল অথচ তারা বলতো শিক্ষা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলবে না

  • Akash Md. Jasim Editor
  • আপডেট: ০৬:১২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • ১০৩

দিশারী ডেস্ক। ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমি মনে করি এযাবৎকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে ছাত্ররাজনীতি চলতো সেই ভাবে আর ছাত্ররাজনীতি চলা উচিত হবে না।

আমি দেখেছি সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি, পেশিনির্ভর, সাম্প্রদায়িক ছাত্ররাজনীতি এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি। ছাত্রদের যেটা সমস্যা সেগুলো হলের সমস্যা, থাকার সমস্যা, খাবারের সমস্যা, লাইব্রেরির সমস্যা, ক্লাস রুমের সমস্যা নিয়ে কোনোদিন আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মিছিল-মিটিং করতে দেখিনি।

তারা শুধু জাতীয় রাজনীতি নিয়ে বলেছে, ‘ নেত্রী তুমি এগিয়ে চলো, নেতা তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সঙ্গে’। এই সব কথা তারা বলতো এবং এত ভণ্ডামি আমি দেখেছি- পকেটের মধ্যে পিস্তল অথচ তারা বলছে শিক্ষা এবং সন্ত্রাস একসঙ্গে চলবে না, শিক্ষা এবং মারামারি একসঙ্গে চলবে না। ’ এই ধরনের জিনিসগুলো আমরা দেখেছি এবং বিএনপি’র সময়ে দেখেছি যারা ছাত্রদল করতো তারা কীভাবে হল দখল করে থাকতো এবং ছাত্রলীগ তাদেরকে অনেকগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

গেল ১৬ বছর ছেলে এবং মেয়েদের প্রত্যেকটা হল যেভাবে দখল করেছে। বিভিন্ন কলেজে যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন করতো, অত্যাচার করতো এবং তারা নিজেরা বরং ফাও খেতো বাকিরা মানবেতর জীবনযাপন করতো। গেস্ট-রুম কালচার ছিল- মধ্যরাতে তাদের নিয়ে মিছিল করানো হতো। ছেলেদের মারা হতো।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমি দেখেছি অনেক ছেলে সিট না পেয়ে বারান্দায় শুয়ে থাকতো এবং নিউমোনিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছেলে মারাও গেছে। সাম্প্রদায়িক, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক, সন্ত্রাসনির্ভর, পেশিনির্ভর ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।

তাহলে আমরা কি ছাত্ররাজনীতি চাই না। তিনি বলেন, আমরা চাই ছাত্ররা অবশ্যই রাজনীতি করবে। ২০২৪- এর যে গণঅভ্যুত্থান এটা কিন্তু ছাত্ররাই করেছে এবং তারা একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং দলের প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হটিয়ে দিয়েছে। এরচেয়ে বড় রাজনৈতিক আন্দোলন আর কী হতে পারে।

কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখেছি রাজনীতি করে এই আন্দোলন যারা করলো তারাই আবার বলছে- আমরা ছাত্ররাজনীতি চাই না। তার মানে একটি দ্বিধা এখানে কাজ করছে তারা হয়তো ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কিংবা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে না কিন্তু এদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ছাত্ররাজনীতি, এরমধ্যে শিবির আছে, হিযবুত তাহরীর যারা বর্ণচোরা তারা কিন্তু লুকিয়ে আছে।

আমরা তাদেরকে দেখেছি আওয়ামী লীগের মধ্যে, ছাত্রদলের মধ্যে, ছাত্রলীগের মধ্যে লুকিয়ে থেকে তাদের রাজনীতিগুলো করা এবং এখন তারা তাদের রাজনীতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের এই রাজনীতি যদি বন্ধ হয় তাহলে কি হিজবুত তাহরীর নাকি ছাত্রশিবির প্রধান হয়ে ওঠবে ? তিনি বলেন, এই প্রশ্নগুলো সবার মধ্যেই আছে।

এ জন্য আমরা বলছি- সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিও আমরা চাই না। আমরা এমন ছাত্ররাজনীতি চাই- যে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের পড়ালেখার কথা বলবে, ক্লাস নিয়ে কথা বলবে, লাইব্রেরিতে বই নেই কেন, হলে কেন সমস্যা, খাবারের মান কেন খারাপ- এগুলো নিয়ে কথা বলবে।

তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা অবশ্যই জাতীয় রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ফিলিস্তিন নিয়েও কথা বলবে কিন্তু দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রদের কাজ করা-সেটা হবে না।

শিক্ষক রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, আমরা শুধু ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে না দলীয় লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। শিক্ষকদের কাজ এভাবে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি করা না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীল দল হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ শাখা এবং সাদা দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপি শাখা। এইভাবে রাজনীতি চলতে পারে না। শিক্ষকদের রাজনীতি হবে তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে, আবাসন সমস্যা নিয়ে, থাকার ব্যবস্থা নিয়ে, ক্লাস রুমের মান নিয়ে, গবেষণার টাকা বাড়বে কিনা- এই সব নিয়ে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করবে। সকল ছাত্র এবং শিক্ষকের রাজনীতি হবে শিক্ষাকেন্দ্রিক পড়াশোনা এবং জ্ঞানকেন্দ্রিক বিতর্ক হবে।

কিন্তু এভাবে মানুষকে মারা, সন্ত্রাসী, পেশিশক্তি, টাকার খেলাকে এবারের দেয়াল লেখনীর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা না করে দিয়েছে।

পকেটে পিস্তল অথচ তারা বলতো শিক্ষা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলবে না

আপডেট: ০৬:১২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

দিশারী ডেস্ক। ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমি মনে করি এযাবৎকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে ছাত্ররাজনীতি চলতো সেই ভাবে আর ছাত্ররাজনীতি চলা উচিত হবে না।

আমি দেখেছি সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি, পেশিনির্ভর, সাম্প্রদায়িক ছাত্ররাজনীতি এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি। ছাত্রদের যেটা সমস্যা সেগুলো হলের সমস্যা, থাকার সমস্যা, খাবারের সমস্যা, লাইব্রেরির সমস্যা, ক্লাস রুমের সমস্যা নিয়ে কোনোদিন আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মিছিল-মিটিং করতে দেখিনি।

তারা শুধু জাতীয় রাজনীতি নিয়ে বলেছে, ‘ নেত্রী তুমি এগিয়ে চলো, নেতা তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সঙ্গে’। এই সব কথা তারা বলতো এবং এত ভণ্ডামি আমি দেখেছি- পকেটের মধ্যে পিস্তল অথচ তারা বলছে শিক্ষা এবং সন্ত্রাস একসঙ্গে চলবে না, শিক্ষা এবং মারামারি একসঙ্গে চলবে না। ’ এই ধরনের জিনিসগুলো আমরা দেখেছি এবং বিএনপি’র সময়ে দেখেছি যারা ছাত্রদল করতো তারা কীভাবে হল দখল করে থাকতো এবং ছাত্রলীগ তাদেরকে অনেকগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

গেল ১৬ বছর ছেলে এবং মেয়েদের প্রত্যেকটা হল যেভাবে দখল করেছে। বিভিন্ন কলেজে যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন করতো, অত্যাচার করতো এবং তারা নিজেরা বরং ফাও খেতো বাকিরা মানবেতর জীবনযাপন করতো। গেস্ট-রুম কালচার ছিল- মধ্যরাতে তাদের নিয়ে মিছিল করানো হতো। ছেলেদের মারা হতো।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমি দেখেছি অনেক ছেলে সিট না পেয়ে বারান্দায় শুয়ে থাকতো এবং নিউমোনিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছেলে মারাও গেছে। সাম্প্রদায়িক, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক, সন্ত্রাসনির্ভর, পেশিনির্ভর ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।

তাহলে আমরা কি ছাত্ররাজনীতি চাই না। তিনি বলেন, আমরা চাই ছাত্ররা অবশ্যই রাজনীতি করবে। ২০২৪- এর যে গণঅভ্যুত্থান এটা কিন্তু ছাত্ররাই করেছে এবং তারা একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং দলের প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হটিয়ে দিয়েছে। এরচেয়ে বড় রাজনৈতিক আন্দোলন আর কী হতে পারে।

কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখেছি রাজনীতি করে এই আন্দোলন যারা করলো তারাই আবার বলছে- আমরা ছাত্ররাজনীতি চাই না। তার মানে একটি দ্বিধা এখানে কাজ করছে তারা হয়তো ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কিংবা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে না কিন্তু এদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ছাত্ররাজনীতি, এরমধ্যে শিবির আছে, হিযবুত তাহরীর যারা বর্ণচোরা তারা কিন্তু লুকিয়ে আছে।

আমরা তাদেরকে দেখেছি আওয়ামী লীগের মধ্যে, ছাত্রদলের মধ্যে, ছাত্রলীগের মধ্যে লুকিয়ে থেকে তাদের রাজনীতিগুলো করা এবং এখন তারা তাদের রাজনীতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের এই রাজনীতি যদি বন্ধ হয় তাহলে কি হিজবুত তাহরীর নাকি ছাত্রশিবির প্রধান হয়ে ওঠবে ? তিনি বলেন, এই প্রশ্নগুলো সবার মধ্যেই আছে।

এ জন্য আমরা বলছি- সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিও আমরা চাই না। আমরা এমন ছাত্ররাজনীতি চাই- যে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের পড়ালেখার কথা বলবে, ক্লাস নিয়ে কথা বলবে, লাইব্রেরিতে বই নেই কেন, হলে কেন সমস্যা, খাবারের মান কেন খারাপ- এগুলো নিয়ে কথা বলবে।

তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা অবশ্যই জাতীয় রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ফিলিস্তিন নিয়েও কথা বলবে কিন্তু দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রদের কাজ করা-সেটা হবে না।

শিক্ষক রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, আমরা শুধু ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে না দলীয় লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। শিক্ষকদের কাজ এভাবে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি করা না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীল দল হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ শাখা এবং সাদা দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপি শাখা। এইভাবে রাজনীতি চলতে পারে না। শিক্ষকদের রাজনীতি হবে তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে, আবাসন সমস্যা নিয়ে, থাকার ব্যবস্থা নিয়ে, ক্লাস রুমের মান নিয়ে, গবেষণার টাকা বাড়বে কিনা- এই সব নিয়ে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করবে। সকল ছাত্র এবং শিক্ষকের রাজনীতি হবে শিক্ষাকেন্দ্রিক পড়াশোনা এবং জ্ঞানকেন্দ্রিক বিতর্ক হবে।

কিন্তু এভাবে মানুষকে মারা, সন্ত্রাসী, পেশিশক্তি, টাকার খেলাকে এবারের দেয়াল লেখনীর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা না করে দিয়েছে।