———————————
মুফতি সুহাইলুল হাসান
৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
——————————
ইদানীং মানুষের স্বভাব-চরিত্রে দ্বিচারিতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ কিছু মানুষ একদিকে মদের ব্যবসা করছে, অন্যদিকে সমাজে দানবীর হিসেবে খ্যাতি লাভের আশায় মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করছে।
কখনো দেখা যায়, মদের ফ্যাক্টরির পাশেই গড়ে তুলছে মসজিদ বা উপাসনালয়। অথচ তাদের এই জ্ঞানটুকু আছে কি না সন্দেহ যে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ইবাদত বা দান করলে তা কবুল হয় না।
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য সব খরচ নিখুঁত, পবিত্র, সৎ অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ হে রাসুলরা! তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং নেক কাজ করো।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
এখানে দুটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে— এক. হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করা। দুই. সৎ কর্ম করা।
এ দুটি আদেশকে একসঙ্গে বর্ণনা করার মধ্যে ইঙ্গিত এই যে সৎকর্ম সম্পাদনে হালাল খাদ্যের প্রভাব অপরিসীম। (ইবনে কাসির)
————————————————————————————————-
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ হে লোকেরা ! আল্লাহ নিজে পবিত্র, তাই তিনি পবিত্র জিনিসই পছন্দ করেন। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন এবং বলেন, এক ব্যক্তি আসে সুদীর্ঘ পথ সফর করে। দেহ ধূলিধূসরিত।
মাথার চুল এলোমেলো। আকাশের দিকে হাত তুলে প্রার্থনা করে—হে প্রভু ! হে প্রভু ! কিন্তু অবস্থা হচ্ছে এই যে তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, কাপড়চোপড় হারাম এবং হারাম খাদ্যে তার দেহ প্রতিপালিত হয়েছে। এখন কিভাবে এমন ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে ?’ (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)
————————————————————————————————-
অনেকের ধারণা, অবৈধ উপার্জন করে কিছু দান করে দিলে, মসজিদ নির্মাণ করলে বা হজ করলে সব সম্পদ বৈধ হয়ে যায়! অথচ বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। অবৈধ উপার্জনের জন্য অবশ্যই কিয়ামতের দিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ কিয়ামতের দিন কোনো মানুষ নিজের স্থান থেকে এক বিন্দু পরিমাণ সরতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে চারটি প্রশ্নের জবাব দিতে না পারবে। তার মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন হলো- ‘ ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ, আর কোথায় ব্যয় করেছ ? ’ (তিরমিজি, হা. ২৪১৭)
আবার মাদকসেবনকারী ব্যক্তি নামাজ পড়লেও তার নামাজ কবুল হয় না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাদকসেবন করবে এবং নেশাগ্রস্ত হবে, তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হবে না। এ অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (নাসাঈ, হা. ৫৬৬৫)
মনে রাখতে হবে যে হারাম অর্থ থেকে দানের কারণে সে কোনো সওয়াব পাবে না এবং হারাম পন্থায় উপার্জনের জন্য সে নিজেই দায়ী হবে, দান গ্রহণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়। (ইবনু তায়মিয়া, মাজমুউল ফাতাওয়া : ২৮/২৮৩)