০৯:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

নবীজির জীবদ্দশায় নির্মিত ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ

  • Akash Md. Jasim Editor
  • আপডেট: ১২:৪৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২
  • ৪৮৪

মাইমুনা আক্তার   

—————-

মুসলমানদের ভারত জয়ের বহু আগেই এ অঞ্চলে ইসলামের সুশীতল শামিয়ানায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল আরব বণিকদের হাত ধরে। হাজার হাজার বছর ধরেই ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর সঙ্গে আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রায় তিন হাজার বছর আগে সুলাইমান (আ.)-এর সময় থেকেই মিসরীয়দের মসলা ক্রয়ের জন্য এ এলাকায় আসার ইতিহাস পাওয়া যায়। আরবীয় বণিকরা মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ভারতে আসতেন, এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ করে পরবর্তী ঋতুতে বিপরীত দিকের বায়ুপ্রবাহের জন্য অপেক্ষা করতেন এবং এরপর সেই বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে আবার ফেরত যেতেন।

এরই ধারাবাহিকতায় মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই আরবদের মুসলিম বণিক দল এ অঞ্চলে আসে, তাদের দাওয়াতে এ অঞ্চলের একজন রাজাসহ অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে মহানবীর যুগেই এখানে নির্মিত হয় ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ। এটি শুধু ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদই না, আরববিশ্বের বাইরে নির্মিত পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি।

ভারতবর্ষের কোনো এক রাজা যে মহানবী (সা.)-এর জন্য উপহার পাঠিয়েছেন তার একটি বর্ণনা হাদিসেও পাওয়া যায়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.)-এর কাছে ভারতবর্ষের রাজা আদাভর্তি একটি কলসি উপহার পাঠান। রাসুল (সা.) প্রত্যেককে এক টুকরা করে খেতে দেন। আমাকেও এক টুকরা দিয়েছিলেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭১৯০)

ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে, আরব সাগরের উপকূলে, বর্তমান কেরালা রাজ্যে এক হিন্দু রাজা ছিলেন, যাঁর নাম ছিল চেরামন পেরুমল। কথিত আছে, একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে আকাশের চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাজা তাঁর সভার বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে স্বপ্নের অর্থ জানতে চাইলে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। রাজার মনে অস্বস্তি থেকেই যায়।

রাজার স্বপ্নের কিছুদিন পরেই একদল আরব মুসলমান বণিক, রাজা চেরামনের সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছে। তখন দিকে দিকে ইসলামের জয়জয়কার। এই বণিকদের কাছ থেকে রাজ্যে এই নতুন ধর্ম ইসলাম ও এর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একসময় মহানবী (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করার কাহিনিও রাজার কানে এসে পৌঁছায়।

রাজা বণিকদের ডেকে তাঁদের কথা শোনেন এবং বুঝতে পারেন যে তাঁর স্বপ্নে তিনি এই ঘটনাটিরই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বণিকদলের সঙ্গে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেন। কথিত আছে, সেখানে তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ‘তাজউদ্দিন’ নাম গ্রহণ করেন।

মক্কা থেকে ভারতে ফেরার আগেই যাত্রাপথে ওমানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর আরব সঙ্গীদের ভারতে গিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য অনুরোধ করেন এবং তাঁদের হাতে তাঁর রাজ্যের সভাসদদের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠি তুলে দেন। সেই চিঠিতে তিনি নিজ রাজ্যে একটি মসজিদ স্থাপনের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন।

বণিকদল রাজার চিঠি নিয়ে আবারও কেরালায় আসে। রাজার নির্দেশ অনুযায়ী তারা ৬২৯ সালে ভারতের বুকে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করে। রাজা চেরামনের নাম অনুসারে মসজিদের নাম রাখা হয় চেরামন জুমা মসজিদ। মালিক ইবনে দিনার ছিলেন এই মসজিদের প্রথম ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক। তাঁর পরে হাবিব ইবনে মালিক ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন।

নবীজির জীবদ্দশায় নির্মিত ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ

আপডেট: ১২:৪৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২

মাইমুনা আক্তার   

—————-

মুসলমানদের ভারত জয়ের বহু আগেই এ অঞ্চলে ইসলামের সুশীতল শামিয়ানায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল আরব বণিকদের হাত ধরে। হাজার হাজার বছর ধরেই ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর সঙ্গে আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রায় তিন হাজার বছর আগে সুলাইমান (আ.)-এর সময় থেকেই মিসরীয়দের মসলা ক্রয়ের জন্য এ এলাকায় আসার ইতিহাস পাওয়া যায়। আরবীয় বণিকরা মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ভারতে আসতেন, এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ করে পরবর্তী ঋতুতে বিপরীত দিকের বায়ুপ্রবাহের জন্য অপেক্ষা করতেন এবং এরপর সেই বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে আবার ফেরত যেতেন।

এরই ধারাবাহিকতায় মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই আরবদের মুসলিম বণিক দল এ অঞ্চলে আসে, তাদের দাওয়াতে এ অঞ্চলের একজন রাজাসহ অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে মহানবীর যুগেই এখানে নির্মিত হয় ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ। এটি শুধু ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদই না, আরববিশ্বের বাইরে নির্মিত পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি।

ভারতবর্ষের কোনো এক রাজা যে মহানবী (সা.)-এর জন্য উপহার পাঠিয়েছেন তার একটি বর্ণনা হাদিসেও পাওয়া যায়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.)-এর কাছে ভারতবর্ষের রাজা আদাভর্তি একটি কলসি উপহার পাঠান। রাসুল (সা.) প্রত্যেককে এক টুকরা করে খেতে দেন। আমাকেও এক টুকরা দিয়েছিলেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭১৯০)

ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে, আরব সাগরের উপকূলে, বর্তমান কেরালা রাজ্যে এক হিন্দু রাজা ছিলেন, যাঁর নাম ছিল চেরামন পেরুমল। কথিত আছে, একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে আকাশের চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাজা তাঁর সভার বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে স্বপ্নের অর্থ জানতে চাইলে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। রাজার মনে অস্বস্তি থেকেই যায়।

রাজার স্বপ্নের কিছুদিন পরেই একদল আরব মুসলমান বণিক, রাজা চেরামনের সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছে। তখন দিকে দিকে ইসলামের জয়জয়কার। এই বণিকদের কাছ থেকে রাজ্যে এই নতুন ধর্ম ইসলাম ও এর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একসময় মহানবী (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করার কাহিনিও রাজার কানে এসে পৌঁছায়।

রাজা বণিকদের ডেকে তাঁদের কথা শোনেন এবং বুঝতে পারেন যে তাঁর স্বপ্নে তিনি এই ঘটনাটিরই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বণিকদলের সঙ্গে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেন। কথিত আছে, সেখানে তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ‘তাজউদ্দিন’ নাম গ্রহণ করেন।

মক্কা থেকে ভারতে ফেরার আগেই যাত্রাপথে ওমানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর আরব সঙ্গীদের ভারতে গিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য অনুরোধ করেন এবং তাঁদের হাতে তাঁর রাজ্যের সভাসদদের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠি তুলে দেন। সেই চিঠিতে তিনি নিজ রাজ্যে একটি মসজিদ স্থাপনের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন।

বণিকদল রাজার চিঠি নিয়ে আবারও কেরালায় আসে। রাজার নির্দেশ অনুযায়ী তারা ৬২৯ সালে ভারতের বুকে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করে। রাজা চেরামনের নাম অনুসারে মসজিদের নাম রাখা হয় চেরামন জুমা মসজিদ। মালিক ইবনে দিনার ছিলেন এই মসজিদের প্রথম ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক। তাঁর পরে হাবিব ইবনে মালিক ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন।