মাইমুনা আক্তার । ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
জীবনে চলার জন্য আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে প্রয়োজন মতো ধন-সম্পদ অর্জন করা দূষণীয় নয়। কিন্তু প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া দোষণীয়। লোভ-লালসা মানুষকে প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়। অন্যদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার নেশা মানুষকে এতটাই নিচে নামিয়ে দেয় যে তারা হেন কোনো অপরাধ নেই, যা করতে দ্বিধাবোধ করে না।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। এমনকি (এ অবস্থায়ই) তোমরা কবরে এসে পড়ো। কখনো নয়, শিগগিরই তোমরা জানবে, আবার বলি, মোটেই ঠিক নয়, শিগগিরই তোমরা জানতে পারবে।
কখনো নয়, তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে! (জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহাচ্ছন্ন হতে না), তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে; তারপর তোমরা তা নিশ্চিত চাক্ষুষ দেখবে। তারপর তোমাদের অবশ্য অবশ্যই (যা কিছু দেয়া হয়েছে এমন সব) নিয়ামত সম্পর্কে সেদিন জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সুরা : তাকাসুর, আয়াত : ১-৮)
উপরোক্ত সুরায় মহান আল্লাহ মানুষের লোভ ও ভোগবাদী স্বভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এ স্বভাব মানুষকে প্রতিনিয়ত দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে অন্যের চেয়ে এগিয়ে যেতে প্ররোচিত করতে।
তারা সবাইকে পেছনে ফেলার নেশায় হায়েনার চেয়েও হিংস্র হয়ে ওঠে। প্রয়োজনে লাশের সিঁড়ি বেয়ে তারা ওপরে উঠতে চায়। তবু যেন একে একে নিজের জাগতিক সব কিছু যেন অন্যের চেয়ে ভালো হয়। অন্যকে ঘায়েল করে এগিয়ে যেতে পারা তাদের পৈশাচিক সুখ দেয়। ফলে তাদের মধ্যে অব্যাহত এগিয়ে থাকার প্রতিযোগী মানসিকতা জেগে ওঠে।
এই মানসিকতা ধীরে ধীরে মানুষকে তার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে বহুদূরে নিয়ে যায়। সে একসময় তাকে আল্লাহ কর্তৃক দুনিয়ায় প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যায়। আখিরাতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। দুনিয়ার মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে গোটা জীবন শেষ করে দেয়। অথচ ঈমান ও শোকর না থাকলে দুনিয়ার সব কিছু পেয়েও কেউ তুষ্ট হতে পারবে না।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো আদম সন্তানের অধীনে যদি দুই উপত্যকা ভর্তি স্বর্ণ থাকে, তবু সে তৃতীয় একটি স্বর্ণভর্তি উপত্যকা অর্জনের ইচ্ছা করবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৭)
তাই আমাদের উচিত সব ক্ষেত্রে আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া। কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে দুনিয়া থেকে যেতে পারে এবং আখিরাত অর্জন করতে পারে তার চেয়ে সফল আর কেউ নেই। আর কেউ যদি গোটা দুনিয়ার সব সম্পদ ও সর্বোচ্চ পদ-পদবির মালিক হয়ে যায়, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হয়, আখিরাতের ব্যাপারে উদাসীন হয়, তাহলে তার চেয়ে হতভাগা ব্যর্থ আর কেউ নেই। তাই দুনিয়ার প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় না নেমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতিযোগিতায় সময় ব্যয় করা প্রকৃত মুমিনের কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখিরাত কত বেশি উত্কৃষ্ট ও কত বেশি স্থায়ী।’ (সুরা : আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে অস্থায়ী প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় না নেমে স্থায়ী সফলতার পথে হাঁটার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply