দিশারী ডেস্ক। ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
ছয় বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই ছিলেন অটোরিকশাচালক শেখ নয়ন হোসেন (২০)। গত ৫ই আগস্ট ভোরে ঘুম থেকে উঠে নয়ন তার মা’কে ডেকে তুলে বলেছিলেন, মা আমি গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছি। বিদ্যুৎ বিল জমে গেছে। রোজগার করে বিলটা দিতে হবে।
এ ছাড়া দুপুরে আবার আমাদের মিছিল আছে। তাই সকাল সকাল কিছু রোজগার করে বিল দেবো। পরে এসে নাশতা খাবো। ছেলের সঙ্গে শেষ কথার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নয়নের মা ঝরনা বেগম।
তিনি বলেন, সেই যে আমার ছেলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল, তারপর রাতে বাড়ি ফিরে এলো লাশ হয়ে। গত ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বানিয়াচংয়ে নিহত হন অটোরিকশাচালক শেখ নয়ন।
বানিয়াচং উপজেলার কামালখানি গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে নয়ন। ছয় বোন এক ভাইয়ের মধ্যে নয়ন চতুর্থ। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট দুই বোন তোহা আক্তার ও সুমনী আক্তার স্কুলে লেখাপড়া করে। তাদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখন।
অপরদিকে আইরিন ও রুহিন দুই বোন বিয়ের উপযুক্ত। নয়নের বাবা মারা যান প্রায় ৪ বছর আগে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন নয়ন। ব্র্যাক এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে একটি টমটম অটোরিকশা কিনেছিলেন। সেই টমটমের রোজগার দিয়েই চলতো সংসার। এক শতক জায়গার ওপর আধাপাকা একটি বসতঘর তাদের। সেই ঘরের অর্ধেক মালিক চাচা আর অর্ধেক নয়নরা। নয়নকে হারিয়ে শোকে কাতর তার ছয় বোন। এখনও ভাই হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।
সরজমিন দেখা যায়, নয়নকে হারিয়ে মা ঝরনা বেগম এখন পাগলপ্রায়। বারবার ছেলের কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। স্থানীয়রা জানান, নয়ন ছোটবেলা থেকেই পরিবারের হাল ধরেছে। এক শতক জায়গার ওপর ভাগাভাগি করা টিনশেডের একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি।
সরকারের কাছে দাবি- এই অসহায় পরিবারটিকে যেন একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। নয়নের ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমনী আক্তার বলে, আমার ভাই প্রতিদিন রাতে বাড়িতে আসার সময় আমার জন্য আলাদা করে চানাচুর ও চকোলেট নিয়ে আসত। ভাই মারা যাওয়ার পর এখন আর কেউ এনে দেয় না। নয়নের মা ঝরনা বেগম বলেন, ৫
আগস্ট সোমবার দুপুর পর্যন্ত নয়ন বাড়িতে না আসায় আমি ফোন দেই। তখন অন্য একজন ফোন ধরে বলেন, নয়ন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলে মারা গেছে। অভাব-অনটনের কারণে আমার ছেলে লেখাপড়া করতে পারেনি। মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। নয়নের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারের হাল ধরে আমার ছেলে।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। তিনি আরও বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমাদের কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র যদি আমার মেয়েদের দায়িত্ব নেয় তা হলে আমি মরেও শান্তি পাবো।
Leave a Reply