দিশারী ডেস্ক ।০৬ মার্চ,২০২৫।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির অভিজাত লুটিয়েন্স বাংলো জোনের একটি সুরক্ষিত বাড়িতে তাকে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তথ্য-প্রমাণে জানা গেছে, ওই বাংলোর ঠিকানা ১১ রাজাজি মার্গ। শেখ হাসিনার এই বাংলোর ঠিকানা ভারত সরকার গোপন রেখেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শেখ হাসিনার এখানে থাকার বিষয়টি দেখভাল করছেন ভারতের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
হাসিনা এখন যেখানে থাকছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তার পাশেই ১০ রাজাজি মার্গকে অবসরকালীন বাংলো হিসেবে ব্যবহার করতেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। এই বাংলোতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম ২০১৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন। এখন সেখানে থাকেন কংগ্রেস সভাপতি ও সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে।
সন্দেহজনক বিষয় হচ্ছে, এই বাংলোর আশপাশে অসংখ্য নারী পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী দেখা যাচ্ছে। দিল্লির লুটিয়েন্স এলাকায় এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিরাই থাকেন। খুবই পশ এলাকা। মনে করা হচ্ছে, সেখানেই শেখ হাসিনা রয়েছেন ‘র’-এর তত্ত্বাবধানে।
লুটিয়েন্স দিল্লি হলো নয়াদিল্লির একটি অভিজাত এলাকা। ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্সের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান নিউজ পেপার সোসাইটির সিনিয়র এক সাংবাদিক (যিনি বাংলাদেশ কাভার করেন) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, রাজাজি মার্গে ব্যাপক নিরাপত্তা। আগের চেয়ে কড়াকড়ি বেড়েছে। তবে কেউই নিশ্চিত নয় যে হাসিনাকে কোথায় রেখেছে ভারত সরকার।
বিষয়টি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল দেখভাল করছেন বলে জানা যাচ্ছে। ১০ ও ১১ রাজাজি মার্গের কোনো একটি বাংলোয় হাসিনাকে রাখা হয়েছে, এমন অনুমান উড়িয়ে দেয়ার নয়। কারণ এর উল্টোদিকে আর্মির ‘ কাশ্মীর হাউস ’, দুই পাশে আর্মির বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার্স। জবরদস্ত নিরাপত্তা। কোনো মাছিও এই নিরাপত্তা বলয় ভেঙে শেখ হাসিনার কাছে যেতে পারবে না। ছবি তোলাও নিষেধ।
এখন সন্দেহ ১০ ও ১১ রাজাজি মার্গের বাড়ি নিয়ে। এই রাস্তায় যে কটি বাংলো রয়েছে, তাতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, দু’জন বিচারপতি এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে থাকেন। আর রয়েছে আর্মির কয়েকটি বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার্স। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ১০ রাজাজি মার্গের বাইরে খাড়গের নেমপ্লেট থাকলেও ১১ রাজাজি মার্গের বাড়িটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই দৈনিকের প্রতিবেদক তন্ন-তন্ন করে খোঁজ করেন রাস্তার দুই ধারে। কিন্তু ১১ রাজাজি মার্গের বাংলোর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ১২ রাজাজি মার্গে রয়েছে আর্মির দপ্তর। মাঝে ১১ নম্বর বাড়িটি থাকার কথা। কিন্তু সেটি উধাও!
সেনাবাহিনী ও খাড়গের বাড়ির সিকিউরিটিদের ১১ নম্বর রাজাজি মার্গের বাংলোটি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে কেউই জবাব দিতে চাননি। তারা সরাসরি এড়িয়ে যান। বলেন. ১১ নম্বর রাজাজি মার্গের বাড়িটি কোথায় আমরা জানি না।
একটি বিখ্যাত রাস্তার আস্ত একটি ঠিকানা লাপাত্তা কেন ? প্রশ্ন ওঠতেই পারে। ১১ নম্বর রাজাজি মার্গ গুগল ম্যাপে সার্চ দিলে কিন্তু দেখাচ্ছে খাড়গের ১০ নম্বর বাড়িটির পেছনেই। পেছনে গিয়ে সেটি আর দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি আর্মি দপ্তর ও খাড়গের বাড়ির মাঝখানেই ক্যামোফ্লেজ করে রাখা হয়েছে ১১ নম্বর রাজাজি মার্গের বাড়িটি ? নতুন করে ফেন্সিং করে আর্মি দপ্তর ও ১১ রাজাজি মার্গের বাড়িটিকে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে ! কেননা গুগল ম্যাপে ঠিকই দেখাচ্ছে ১০ ও ১২ রাজাজি মার্গের মাঝে ১১ রাজাজি মার্গ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে উধাও।
—————————–
সৌজন্য : একটি জাতীয় দৈনিক
—————————–
আর নিরাপত্তারক্ষীরাও স্পিকটি নট। অনুমান করা যায়, অজিত দোভাল ক্যামোফ্লেজ করে ধোকা দেয়ার জন্য আর্মি দপ্তর ও ১১ রাজাজি মার্গের বাড়িটিকে মিলিয়ে দিয়েছেন ফেন্সিং ব্যবহার করে। খুলে ফেলেছেন নেমপ্লেট। তাই ১০নং রাজাজি মার্গে খাড়গের বাড়ির পেছনে ১১ নম্বর বাংলোর লোকেশন দেখালেও তাতে ঢোকার কোনো পথ নেই। খাড়গের বাংলো কিংবা আর্মি দপ্তরের ফটক দিয়েই শেখ হাসিনা বাইরে চলাচল করেন বলে অনুমান করা যায়। সেজন্যই সেখানে মহিলা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।
১১ হাজার ৭৭৬ বর্গফুটজুড়ে বাংলোটি। এখানকার সব বাংলোতেই রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। বাংলোগুলো দেখতে প্রায় একই রকমের।
১ রাজাজি মার্গে থাকেন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। ৬ নম্বরে আর্মি কোয়ার্টার। ৭-এ রিনোভেশন চলছে। ৮নং-এ থাকেন জাস্টিস মনমোহন। ১০-এ খাড়গে, ১১ লাপাত্তা? ১২ আর্মি হেডকোয়ার্টার। এর মাঝেই লুকিয়ে আছেন অর্থাৎ র-এর গোপন আশ্রয়ে আছেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা শেখ হাসিনা।
দিল্লির সাংবাদিক মহলের বক্তব্য, তারা ফোন ইন ইন্টারভিউয়ের জন্যও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মোদি সরকার হাসিনার ব্যাপারটিকে একদম গোপন রাখতে চাইছে। অজিত দোভাল ও আরো দু-তিনজন ছাড়া কেউই জানেন না হাসিনা কী করছেন, কোথায় থাকছেন। হাসিনা রেস্তোরাঁয় খেতে যাচ্ছেন বা বাজার করছেন- এসবই গুজব বলে জানালেন এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।
এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট বলেছে, ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে আসা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে নয়াদিল্লির লুটিয়েন্স বাংলো জোনের একটি সেফ হাউসে বসবাস করছেন। লুটিয়েন্স বাংলো দেশের মন্ত্রী, সিনিয়র এমপি এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
শেখ হাসিনার মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে লুটিয়েন্স বাংলোয় রাখা হয়েছে। ভারত সরকার তার জন্য কড়া নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করেছে। তবে দ্য প্রিন্ট সূত্রের নাম প্রকাশ করেনি।
এতে বলা হয়েছে, যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রটোকল নিয়ে শেখ হাসিনা মাঝেমধ্যে লোদি গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করেন। তার জন্য একটি শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণ পোশাকে সেসব কর্মকর্তা তাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেন। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই সুরক্ষা পাচ্ছেন এবং দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে বসবাস করছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার কাছের কয়েকজন গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ করে ভারতের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেন।
এরপর দু’দিনের মধ্যে ওই জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যান। হিন্দন ঘাঁটিতে পৌঁছলে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আরেকটি সূত্র জানাচ্ছে, শেখ হাসিনা বেশি সময় ওই বিমান ঘাঁটিতে থাকতে পারতেন না। সেখানে ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না। সুতরাং, মাত্র ক’দিনের মধ্যে তাকে একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয় এবং তারপর লুটিয়েন্স দিল্লির নিরাপদ ও সুরক্ষিত এলাকায় একটি সেফ হাউসের ব্যবস্থা করা হয়।
Leave a Reply