আকাশ মো. জসিম : নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে স্পষ্ট ও মিষ্টভাষী সুবক্তার বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। এখানে রাজনীতির নামে প্রায় নেতা ও কর্মীরা ব্যক্তি বন্দনার গুণকীর্তন করা ছাড়া রাজনীতি বিজ্ঞানের দ্বারে কাছেও নেই বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন রাজনীতিক ও সমাজ বিশ্লেষকরা।
নিজ দলের অবদান কিংবা বিরোধীদের জনসমর্থহীন কোন কর্মকান্ডের পরিষ্কার পরিস্যংখ্যান নিয়ে এখন আর কোন বক্তায় ভালো বলতে পারেননা। প্রায়জনেই শুধু ‘অমুক ভাই, তমুক ভাই ধন্যবাদ; ভাই ছাড়া বাঁচবোনা, চিনবোনা ইত্যাদি ধরনের অপ্রয়োজনীয়, অশিক্ষণীয়, অগ্রহণযোগ্য ও হতাশাজনক কথাবার্তাকেই বক্তৃতাকারে চালিয়ে দিয়ে রাজনীতির জীবন্ত অধ্যায় বিনষ্ট করছেন।
এ জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ৯০ দশক থেকে মোটামুটি ভাল ছিল রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গন। ২০০১ সালের পরই শূণ্যতা শুরু হয়ে বর্তমানে তা পূর্ণতায় পরিণত হয়েছে।
এক সময় এ জেলার রাজনীতিকেরা রাষ্ট্রীয় ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে তথ্যভিত্তিক জ্ঞান গরিমায় ভরা বক্তৃতার চর্চা করতেন। হালে এসব আর কারো কাছে শোনা যায়না। সবই যেন দিনদিন গোয়াল ঘরেই চলে গেছে।
অবশ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ যেভাবে নিজ দলের উন্নয়ন, ইতিহাস ও গ্রহণযোগ্যতার বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে সুন্দর, সুচারু ও মিষ্টভাষায় বলতেন পারতেন ; সে দলে একইভাবে এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনও অনেকের কাছে ধরাজকণ্ঠের প্রিয় বক্তা হিসেবে কমবেশি সমাদৃত রয়েছে।
আবার এ দলে উদীয়মানদের মধ্যে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলও উস্কানিহীন, গঠনমূলক ও সময়োপোযোগি বক্তৃতা দিতে পারছেন বলেও মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আবার, নোয়াখালী জেলা বিএনপিতে সাবেক সাংসদ মো. শাহজাহান যেভাবে সাজিয়ে, গুছিয়ে ও বজ্রকণ্ঠে নিজ দলের পক্ষে সভা সেমিনারে বলতে পারেন ; সে দলে সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন ফারুক এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব আলমগীর আলোর বক্তৃতাও পরিসংখ্যান ভিত্তিক বলে প্রশংসিত হয় বিভিন্ন মহলে।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক বিপ্লব ও যুবদলে নুরুল আমিন খাঁন অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সুন্দর ও সুপাঠ্য শব্দ চয়নে বক্তৃতা চর্চার চেষ্টাও কমবেশি অনেকেরই নজর কাড়ে।
এসব নিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, একসময় ছাত্র রাজনীতি ছিল জ্ঞান অর্জনের সূচিকাগার। হালে এটি অস্ত্রাগারেই চলে গেছে। ছাত্র রাজনীতির প্রায়জনই এখন ক্যাম্পাস ছেড়ে বড় ভাইদর পেছনে দৌড়ায়। একপর্যায়ে, পাওয়া না পাওয়ার নানা হিসেবে নিকেশের গরমিলে হতাশায় ভর করে তাদের জীবন। এ সময় তারাই অস্ত্র চালনোর পাশাপাশি ইয়াবা নেশায়ও জর্জরিত হয়। যা কোন সভ্য, সমৃদ্ধময় জাতির সুস্থ্য মনোবিকাশের পক্ষে সুখকর নই বলেও মনে করছেন ওই প্রবীন রাজনীতিক।
আরেকজন সচেতন নাগরিক বলেন, ছাত্ররাজনীতি এক সময় ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেখানে আদর্শিক বক্তৃতার চর্চা হতো। আবার কলেজে কলেজে চলতো জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। আজ সবই যেন অতীত হয়ে গেছে। সবই হারিয়ে চলছে। এ ছাত্ররা শিখবে কোথা থেকে।
জ্ঞান অর্জনের সিঁড়িগুলো দিনদিন ক্ষয়ে যাওয়ায় সঙ্গতকারণে এ যুগের প্রায় ছাত্ররাই এখন ক্যাম্পাস ছেড়ে বড়ভাইদের পেছনে নাম লিখায়। বড় ভাইরাও নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করে একটা সময় ছুঁড়ে দেয়। ফলে রাজনীতির পাতার এক ছেদে তাদের জীবন হয় হতাশাময়।
তিনি আরো বলেন, এখন তো মূল রাজনীতিতে নিজ দলেই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ছাড়া আর কোন জ্ঞানার্জনের কথা শোনা হয়না। আর যেহেতু ছাত্ররাজনীতি এখন জনপ্রতিনিধিদের খপ্পরে চলে গেছে। সুতরাং এ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়না।
নোয়াখালী সরকারী কলেজের একজন শিক্ষাবিদ মন্তব্য করেন, এটি সভ্য, সুন্দর ও প্রত্যাশিত জাতির জন্যে যার যথাস্থান তাকে সেস্থানেই জায়গা করে দিতে হবে। তবেই এ জাতি সমৃদ্ধময় হতে পারে।
Leave a Reply