নোয়াখালীর ইটভাটায় কৃষি জমির হৃদপিন্ড

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
  • 158 পাঠক

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক দিশারী

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩

——————–
নোয়াখালী জুড়ে অবাধে চলছে ফসলী জমির মাটি কাটার হিড়িক। জেলা জুড়ে মাটি বিক্রি করে দেয়ার সর্বনাশা কান্ডে মেতেছে সামান্য মুনাফা লোভী ভূমির মালিক ও কৃষক। এতে একদিকে ক্রমশ: হ্রাস পাচ্ছে ফসলী জমি, অপরদিকে মাটির উর্বারতা কমে অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে শতশত হেক্টর কৃষি জমি।

মাটি পরিবহনে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গ্রামীন রাস্তা-ঘাট। শুকনো মৌসুমের ধুলোবালিতে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ।

সূত্রে জানা যায়, জেলায় আগে যে পরিমাণ আবাদি জমি ছিল গত তিন বছরে তা হ্রাস পেয়েছে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানে ! মূল কারণ হিসেবে ফসলী জমির টপ সয়েল কেটে নেয়াকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলা, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, চাটখিল, সোনাইমুড়ি, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ফসলী জমির মাটি কেটে ওই মাটি স্থানীয় ইটভাটাগুলোর জোগান দিচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও ড্রেজিং করে ফসলী জমির মাটি দিয়ে বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গড়তে ভরাটের কাজ চলছে।

স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে ২/৪টি অভিযান চলানোর ফলে কোথাও কয়েকদিন বন্ধ থাকে আবার কোথাও প্রশাসনের গাড়ি বহর চলে গেলে পুরানো চিত্রে ফিরে আসে ওই মাটি খেকো শ্রেণী পেশার মানুষ। আবার কোথাও কোথাও স্থানীয়দের রোষানলে পড়তে হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মী ও খোদ প্রশাসন কর্মকর্তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় শতাধিক ইট ভাটা রয়েছে। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার কার্তিক মাসের শুরু থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস মাটি পরিবহন ও ইট তৈরির কাজ চালিয়ে আসছে ইটভাটার মালিকরা। ওইসব ইটভাটায় সারা বছরের মাটি জোগান দিচ্ছে এ জেলার কৃষি জমি ও অরক্ষিত খাল ও সুবিশাল চর।

মৌসুম জুড়ে ইটভাটায় মাটি সরবরাহে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রালি যুক্তি অবৈধ ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক। আর ভারি যানবাহনের চাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো যেন বালুময়।

সেনবাগ উপজেলার এক স্কুল ছাত্রী তাহমিনা আক্তার জানান, আমাদের গ্রামে বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত অবধি চলছে মাটির গাড়ি। কাঁদামাটি পাকা রাস্তায় পড়ে বিভিন্ন স্থানে পিচঢালা রাস্তাও দেখা যাচ্ছে না। আর মাটির রাস্তাগুলোর ধুলোতে পা দেবে যায়। একদিন স্কুল থেকে আসলেই ড্রেস ময়লা হয়ে যাচ্ছে, এমনকি মাস্ক বা নেকাবের ভেতরেও ধুলোবালি প্রবেশ করছে। আমরা এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।

সম্প্রতি সদর উপজেলার এক ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যানকেও এহেন অপরাধে আটক শেষে মুছলেকায় ছেড়ে দেয়ায় বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের এমন সাহসী কর্মকান্ডে জেলা জুড়ে প্রশাংসার ফুলঝুড়ি ঝরছে।

একটি উপজেলার নির্বাহী জানান, কোন ইউনিয়নের ফসলী জমি ও জলাশয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কৃষি জমি থেকে গভীর গর্ত করে মাটি উত্তোলনের ফলে ফসল ও জমির ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। এধরণের অভিযোগ এলাকার অসংখ্য কৃষক করে আসছে। কৃষক ও ফসল বাঁচাতে আমরা কাউকে ছাড় দেবোনা। কৃষকদের বৃহৎ স্বার্থে প্রশাসন এধরণের অভিযান অব্যহৃত রাখবে।

নোয়াখালীর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবদুস সাত্তার ফরায়েজী জানান, ধুলোবালিতে নানা জীবানু মানব দেহের ফুসফুসে সংক্রামণ করায় শ্বাস কষ্ট, হৃদ রোগ ও ক্যান্সার থেকে শুরু করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটছে বায়ূ দূষণের ফলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশেও বায়ূ দূষণে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এই বায়ূ দূষণে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মহলকেও আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, কৃষি জমিতে মাটি কেটে শুধু মাটিই নিচ্ছে না। কেটে নিচ্ছে কৃষির হৃদপিন্ড। যেসব জমির টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে ওইসব জমিতে উর্বরতা আবার আগের অবস্থায় আসতে ২০-৫০ বছর সময় লাগে। অনেক মুনাফা লোভী কৃষক রয়েছেন যারা মনে করছেন উপরের ২/১ ফুট মাটি বিক্রি করে কিছু টাকা পাবেন, জমি তো রয়েই যাবে ; ওইসব কৃষক জমির টপ সয়েলের গুরুত্ব বুঝেন না। আবার কিছু দালাল রয়েছে তারা লেখাপড়া না জানা বা স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে বাগিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের স্বার্থ। তিনি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়া বন্ধ করতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!