ভিয়েতনামের উন্নয়ন সত্যিই অবাক করার মতো

  • আপডেট সময় শনিবার, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫
  • 12 পাঠক

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী।০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ভিয়েতনামে বেশ কয়েকবার ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। সংগ্রামী এই দেশকে চিনতে বেশ কষ্ট হয়। কী আমূল পরিবর্তন! জাপানের মতো করে দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেতে ভিয়েতনামের বেশিদিন লাগবে না মনে হয়।

বাংলাদেশেরও চার বছর পর ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম প্রকৃত প্রস্তাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। কিন্তু প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগে ভরপুর ভিয়েতনাম আজ উন্নতির দোরগোড়ায়। সেখানে আমাদের দেশের মতো নেই কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিরোধ, ঝগড়া-বিবাদ বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। তারা গড়তে জানে, কিন্তু ভাঙতে পছন্দ করে না।

ভিয়েতনাম আমেরিকার বিরুদ্ধে দীর্ঘ যুদ্ধ করার পরও বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে তরুণ ও পরিশ্রমী জনগণের দ্বারা চালিত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও পর্যটনের দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কাম্বোডিয়া ও লাওস থেকে দেশটি কম উন্নত নয়। দুর্দান্ত খাবার, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক আকর্ষণে সমৃদ্ধ দেশটি হচ্ছে আজকের ভিয়েতনাম। ভ্রমণকারীদের জন্য অনেক কিছু দেখার আছে এই দেশটিতে। ‘হ্যাঁ লং বে’ দেখার মতো। দুনিয়ার সেরা সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হ্যাঁ লং বে, যা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

————————————————————————————–

দেশটিতে রাজনীতি আছে, আবার তা রাস্তায় নয় পার্লামেন্টের ভেতরে। গোটা দেশটি চলে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। আইন ভঙ্গ না করার প্রবণতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক কিছুই শেখার ও জানার আছে ভিয়েতনামের কাছ থেকে। জাপানিদের মতো ভিয়েতনামিরা যথেষ্ট পরিশ্রমী। সব ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের উন্নতি চোখে পড়ার মতো।

————————————————————————————–

ভিয়েতনামের প্রধান খাদ্য ঠিক আমাদের মতো ভাত ও মাছ। তাদের লেখাপড়ার মান যথেষ্ট মানসম্মত। তারা দেখতেও থাই, জাপানি ও কোরিয়ানদের মতো। চাল-চলন, ব্যবহার, আদব-কায়দা, সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ এবং মানবতার দিক দিয়ে ভিয়েতনামিরা জাপানিদের থেকে কম নয়।

বিশেষ করে কোরিয়ান কোম্পানি হোটেল থেকে সব রকম ব্যবসায় এখন তারা ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছে। গড়ে তুলছে শিল্প, কলকারখানা ও ফ্যাক্টরি । শত শত জাপানি ও কোরিয়ান কোম্পানি বর্তমানে ভিয়েতনামে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করে ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে ভীষণভাবে চাঙা করতে সক্ষম হয়েছে।

ভিয়েতনামিদের আশা, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে ভিয়েতনাম তাদের কর্ম, পরিশ্রম ও সততা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোরিয়া বা জাপানের কাছাকাছি যেতে পারবে।

ভিয়েতনামের উন্নয়ন সত্যিই অবাক করার মতো। ছেলেমেয়েদের ছাত্রজীবনে শিক্ষাক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা যায়। দীর্ঘ ৯ বছর আমেরিকানদের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের উন্নতির জন্য তাদের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সেদেশে সরকার আসে আর যায়, তবে রাস্তায় মানুষকে দুর্ভোগ দিয়ে নয়, নির্বাচনের মাধ্যমে।

একসময়কার ফ্রেঞ্চ কলোনি ভিয়েতনামের বাসিন্দারা কর্মে বিশ্বাসী। তাদের পুরোনো বাড়িঘরের পাশাপাশি প্ল্যান অনুযায়ী নতুন নতুন বাসাবাড়িগুলো ইউরোপের স্টাইলে গড়ে উঠছে। ভিয়েতনামের সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভীষণ সুন্দর।

খেলাধুলা থেকে শুরু করে বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাদের, যা আমাদের দেশে কম বলা যায়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভিয়েতনামের মেয়েরা দিনরাত রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলাফেরা করছে, ভ্যাসপা-হোন্ডা, গাড়ি, দোকানপাট, এমনকি ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, তবে কোথাও তাদের নিরাপত্তার অভাব দেখিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের ছেলেমেয়ে ও পুরুষ-মহিলা একসঙ্গে কাজ করলেও মহিলাদের বেশি প্রাধান্য দেখা যায়। কতিপয় বাংলাদেশিকে ভিয়েতনামি মেয়ে বিয়ে করতে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে।

এখানে উল্লেখ্য, পরিকল্পিত বাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভিয়েতনামকে বোঝায়। এরই মধ্যে দেশটির অর্থনীতি বেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভিয়েতনাম কৃষিপণ্যের রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশটির জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। তাছাড়া এ খাতে দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কাজ করে থাকে।

————————————————————————————–

ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিল্পের অবদান বেশি। বর্তমানে দেশটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সিগারেট, তামাক কেমিক্যাল ও গার্মেন্ট-টেক্সটাইল খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করেছে। এছাড়া দেশটির কৃষি খাতও বেশ উন্নত।

————————————————————————————–

ভিয়েতনাম ভ্রমণ করার পর আমার মনে হলো দেশটির কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। দুর্নীতি, মিথ্যা কথা, প্রতারণা, ফাঁকি, অবহেলা, উদাসীনতা, অলসতা—এর কোনোকিছুই ভিয়েতনামে দেখতে পেলাম না।

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে গাড়ি, ঘোড়া বা বাসের পরিবর্তে ছেলেমেয়ে সবাইকে হোন্ডা-ভ্যাসপা চালাতে দেখেছি। হাজার হাজার হোন্ডার শহর হ্যানয়, কিন্তু নেই কোনো যানজট। ট্র্যাফিক আছে, তাও আবার নগণ্য। ভিয়েতনামে ক্রাইমের সংখ্যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। প্রায় ৯৮ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা-অধ্যুষিত ভিয়েতনামের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কোনো জুড়ি নেই।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!