মহানবী (সা.) যাদের বদদোয়া করতে নিষেধ করেছেন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
  • 22 পাঠক

মাইমুনা আক্তার। ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

আমরা অনেক সময় না বুঝে চরম হতাশা, দুশ্চিন্তা, অসুস্থতা বা ক্রোধ থেকে বদদোয়া করে থাকি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা অনুভব করি যে কাজটা একেবারেই ঠিক হয়নি। আবার অনেকে এসব বদদোয়াকে কিছুই মনে করেন না। অথচ এই বদদোয়াগুলো কখনো কখনো অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

নিম্নে পবিত্র হাদিসের আলোকে এমন কিছু জিনিস তুলে ধরা হলো, যেগুলোকে বদদোয়া দেয়ার ব্যাপারে নবীজি (সা.) সতর্ক করেছেন এবং আমরাও বেশির ভাগ সময়ে অধৈর্য হয়ে এসব জিনিসকেই বেশি বদদোয়া করি।

নিজেকে বা সন্তানকে বদদোয়া করা : আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ক্ষোভ ও হতাশা থেকে নিজেরা নিজেদের ওপর বদদোয়া করে বসি, তা আমাদের নিজেদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন।

জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, নিজেদের সন্তান-সন্ততির বিরুদ্ধে, নিজেদের ধন-সম্পদের বিরুদ্ধে বদদোয়া কোরো না (কেননা, হয়তো এমন হতে পারে যে), তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন একটি সময় পেয়ে বসো, যখন আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে, তোমাদের জন্য তা কবুল করে নেবেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১৫০৫)

সাধারণত সন্তানরা তাদের মায়ের কাছে বেশির ভাগ সময় থাকে, ফলে মাকেই বেশি বিরক্ত করে। সংসারের চাপ, মানসিক অশান্তি, অসুস্থতা, ক্লান্তির মধ্যে সন্তানরা যখন খুব বেশি জ্বালাতন করে, তখন অনেক মা তাঁদের নিজের সন্তানকে বদদোয়া দিয়ে বসেন, যা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। কেননা মায়ের অনিচ্ছাকৃত দেয়া এই বদদোয়াও তার বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে।

————————————————————————————–

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, (পূর্ববর্তী যুগে) এক মহিলা তার ছেলেকে ডাকল। তখন তার ছেলে গির্জায় ছিল। বলল, হে জুরায়জ ! ছেলে মনে মনে বলল, হে আল্লাহ ! (একদিকে) আমার মা (এর ডাক) আর (অন্যদিকে) আমার নামাজ ! …(এভাবে একাধিকবার ডেকে সাড়া না পেয়ে) মা বললেন, হে আল্লাহ ! পতিতাদের সামনে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত যেন জুরায়জের মৃত্যু না হয়। এক রাখালিনী যে বকরি চরাত, সে জুরায়জের গির্জায় আসা-যাওয়া করত। সে একটি সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এ সন্তান কার ঔরসজাত ? সে জবাব দিল, জুরায়জের ঔরসের।
জুরায়জ তার গির্জা থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করল, কোথায় সে মেয়েটি, যে বলে তার সন্তানটি আমার ? (সন্তানসহ মেয়েটিকে উপস্থিত করা হলে) জুরায়জ বলেন, হে বাবুস ! তোমার পিতা কে ? সে বলল, বকরির অমুক রাখাল।(বুখারি, হাদিস : ১২০৬)

————————————————————————————–

অধীনদের বদদোয়া করা : উল্লিখিত একই হাদিসের অপর বর্ণনায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা তোমাদের খাদিমদের বদদোয়া কোরো না এবং তোমাদের ধন-সম্পদের ওপরও বদদোয়া কোরো না। কেননা ওই সময়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে কবুলের মুহূর্তও হতে পারে, ফলে তা কবুল হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৩২)

ব্যবহৃত জিনিসপত্রকে বদদোয়া করা : অনেক সময় আমরা অধৈর্য হয়ে ব্যবহৃত জিনিসপত্রকে বদদোয়া করি। একবার নবীজি (সা.)-এর এক সফরে এক সাহাবি তাঁর উটের ওপর বিরক্ত হয়ে তাঁর উটকে অভিসম্পাত করে বসেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘ তুমি এর থেকে নেমে যাও। আর অভিশপ্ত উটটি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবে না। তোমরা তোমাদের সন্তানদের ওপর এবং নিজের ধন-সম্পদের ওপরও বদদোয়া কোরো না। এমন যেন না হয় যে তোমরা এমন মুহূর্তে বদদোয়া করবে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হয় এবং তা কবুল হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৪০৫)

মুমিনকে বদদোয়া করা : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ঈমানদারকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার সমতুল্য। (বুখারি, হাদিস : ৬১০৫)।

————————————————————————————–

কোনো মুমিনের জন্য এ ধরনের কাজ করা শোভা পায় না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা পরস্পর পরস্পরকে আল্লাহ তাআলার অভিসম্পাত, তার গজব ও জাহান্নামের বদদোয়া কোরো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৬)

————————————————————————————–

পরিবেশকে বদদোয়া দেয়া : প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমরা অনেক সময় পরিবেশকে বদদোয়া করে বসি। অথচ নবীজি (সা.) এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মহানবী (সা.)-এর যুগে এক ব্যক্তির চাদর বাতাসে ওলটপালট হয়ে গেলে সে বাতাসকে অভিশাপ দিল।

নবী (সা.) বললেন, ‘ তুমি বাতাসকে লানত কোরো না, কেননা সে নির্দেশপ্রাপ্ত। যা অভিশাপযোগ্য নয়, কেউ তাকে অভিশাপ দিলে তা অভিশাপকারীর ওপরই পতিত হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৮)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!