ওয়াজ-নসিহতের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত

  • আপডেট সময় সোমবার, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫
  • 41 পাঠক

আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)
০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ 

ওয়াজ ও নসিহত মানুষকে দ্বিন শেখানো এবং আল্লাহমুখী করার একটি মাধ্যম। যুগ যুগ ধরে আলেমরা সাধারণ মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে ওয়াজ করে থাকেন। তবে ওয়াজের ভাষা সবার সমান নয়। কেউ খুব জোশালো ভাষায় ওয়াজ করেন, কেউ খুব নম্র ভাষায় ওয়াজ করেন।

আমার মনে হয়, ওয়াজের ভাষা বিনম্র হওয়াই উত্তম। কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর মারেফাত লাভের স্তরে পৌঁছে যায়, তার কাছে যুক্তিনির্ভর বিষয়গুলো সুস্পষ্ট দৃশ্যমান বিষয়ের পর্যায়ে চলে আসে। আর যে বস্তু বা বিষয় প্রকাশ্যে দৃশ্যমান তা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে কোনো মানুষ বিশেষ গুরুত্বের আশ্রয় গ্রহণ করে না। যেমন—ঠিক দুপুরের সময় সূর্যের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য কোনো জোশালো বা জ্বালাময়ী বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

এ কারণে বুজুর্গ আলেমরা কোনো জ্বালাময়ী বা জোশালো বক্তৃতা প্রদানে সাধারণত অভ্যস্ত থাকেন না। এ সম্পর্কে সুফি আলেমরা বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর মারেফাত অর্জন করতে পেরেছে, তার জবান কথা বলতে ক্লান্ত হয়ে যায়। এর সমর্থনে একটি হাদিসও পাওয়া যায়।

————————————————————————————

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ লজ্জা ও কথা বলার সংকোচ (বাক্য ব্যয়ে সংযম) ঈমানের অংশ। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)

————————————————————————————

এখানে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর মারেফাত অর্জন করার কারণে কথা বলা, ওয়াজ করা ও বয়ানের ক্ষেত্রে যে সংকোচ তৈরি হয়, এর দ্বারা অযোগ্যতা ও মূর্খতার কারণে যে অপারগতা সৃষ্টি হয় তা উদ্দেশ্য নয়। কেননা অযোগ্যতা ও মূর্খতার কারণে সৃষ্ট অপারগতা ঈমানের অংশ হতে পারে না। এটা শরিয়তের দৃষ্টিতেও নিন্দনীয়। এ ক্ষেত্রে হাফেজ সিরাজির একটি প্রসিদ্ধ কবিতা আছে। তা হলো নিজেদের বুদ্ধিমান বলে জ্ঞানকারী নদীর প্রথম পারে দণ্ডায়মান লোকেরা—আমরা যারা নদী অতিক্রম করে এপারে এসেছি তাদের অবস্থা কিভাবে বুঝবে।

কবি বলতে চেয়েছেন, যারা নদীর প্রথম পারেই দাঁড়িয়ে আছে, নদী পার হয়ে অপর পারে যেতে পারেনি, আর যে ব্যক্তি নদী পার হয়ে তার জটিলতাগুলো কাটিয়ে নদীর অন্য পারে পৌঁছে গেছে, আপাতদৃষ্টিতে যদিও সে ব্যক্তি নদীর পারেই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু উভয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। এই দ্বিতীয় ব্যক্তি সম্পর্কে কিভাবে জানবে কথাটি বলা ঠিক হবে না, কেননা সে নদী অতিক্রম করে ওপারে চলে গেছে বিধায় সে সবকিছুই জানে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে দুই কিনারে দাঁড়ানো দুজনকে দেখতে একই রকম মনে হয়।

অনুরূপভাবে একজন তো এরূপ মূর্খ যে কোনো বস্তুর প্রকৃতি ও বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুই জানে না। তার কাছে যদি কোনো প্রশ্ন করা হয় তাহলে সে তার উত্তর দিতে এবং কোনো কথা বলতে প্রকৃতপক্ষেই অপারগ হয়ে পড়ে।

আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো এই আরেফে কামেল (আল্লাহর পরিপূর্ণ পরিচয় লাভকারী) ও মহান সাধক, যার কাছে প্রতিটি বস্তুর হাকিকত এতটাই পরিষ্কার যে অদৃশ্য বস্তুগুলোও তার কাছে দৃশ্যমান বস্তুসদৃশ মনে হয়। এমন ব্যক্তিও খুব বেশি কথা বলা এবং দীর্ঘ বক্তব্য দিতে অপারগ হয়ে থাকেন। বস্তুত এটাকেই হাদিসের ভাষায় ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে।

মাজালিসে হাকিমুল উম্মত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাবানুবাদ।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!