ক্যানসার বাড়ছে যে কারণে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫
  • 28 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

দেশে প্রতিনিয়ত দূষণের মাত্রা বাড়ছে। ঢাকার বাতাস বেশির ভাগ সময়ই থাকছে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। আর খাদ্যের বিষক্রিয়া, ভেজাল খাদ্য এগুলো এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খাবারে সমস্যাজনিত কারণে হচ্ছে পেট ও জরায়ুর ক্যানসার। আর বায়ুদূষণে হচ্ছে ফুসফুসসহ শ্বাসনালির ক্যানসার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাবার, খাবারে কীটনাশক, পরিমাণমতো খাবার গ্রহণ না করা এবং বায়ুদূষণে বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি। খাবারে সমস্যাজনিত কারণে হচ্ছে পেট ও জরায়ুর ক্যানসার। আর বায়ুদূষণে হচ্ছে ফুসফুসসহ শ্বাসনালির ক্যানসার।

সম্প্রতি বিএসএমএমইউ জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি গবেষণার ফল প্রকাশ করে। তাতে দেখা গেছে, বছরে প্রতি লাখে নতুন করে ৫৩ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস।

বিএসএমএমইউর গবেষণা অনুযায়ী, নতুন করে যারা ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার মধ্যে পুরুষদের প্রধান তিনটি ক্যানসার হলো ফুসফুস, যকৃত ও স্বরযন্ত্রের ক্যানসার (যথাক্রমে ১৬.১%, ১২.৯% ও ১২.৯%)। নারীদের লিভার, জরায়ু ও খাদ্যনালির ক্যানসার (যথাক্রমে ২৩.১%, ১৫.৪% ও ১৫.৪%)।

——————————————————————————————-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ক্যানসারের জন্য মূলত খাবার ও বায়ুদূষণ দায়ী। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, খাদ্যের মধ্যে এখন কত রকমের কেমিক্যাল, ভেজাল থাকে- তাতে ক্যানসার হয়। অতিরিক্তি ওজন বৃদ্ধি পায়, এমন খাবার খাওয়া ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসনালিতে কত কিছু ঢুকছে। এতে ফুসফুস ক্যানসারের আশঙ্কা বেশি থাকে। চর্মের ক্যানসার হয়, পেটের ক্যানসার হয়। আর্সেনিকযুক্ত পানি পানে যেকোনো ধরনের ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া ধূমপান, তামাক, জর্দা সাদা পাতা, অ্যালকোহলের কারণেও মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এগুলো পরিহার করতে হবে।

——————————————————————————————-

২০২২ সালের ১৭ ও ১৮ নভেম্বর ঢাকার আর্মি গলফ ক্লাবে অনকোলজি ক্লাব আয়োজিত দুই দিনের ‘ বাংলাদেশ ক্যানসার কংগ্রেস ’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৮ দেশের ৪০ জন ক্যানসার বিশেষজ্ঞসহ ৭৫০ জন চিকিৎসক ও গবেষক অংশ নেন। উদ্বোধনী দিনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, ক্যানসারের বড় কারণ ভেজাল খাদ্য ও বায়ুদূষণ।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জি এম আব্দুস সালাম বলেন, দেশে ক্যানসারের প্রধান কারণই হচ্ছে খাদ্য ও বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার বেশি হচ্ছে। দূষিত খাবারের কারণে খাদ্যনালির ক্যানসার বেশি হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার এটার জন্য দায়ী। সবজি, ফল এবং মাছেও কীটনাশক ও ফরমালিনের ব্যবহার হচ্ছে। ওই সব কীটনাশক সব খাদ্যের মধ্যে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস যা খাচ্ছি সবই অনিরাপদ। আমরা যে রান্না করে খাচ্ছি, তাতে ওই বিষটা ঠিকমতো নষ্ট হয় না।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরুন, বেগুনখেতে এক দিন বিষ প্রয়োগের পর তিন দিন বিষ প্রয়োগ নিষেধ। কিন্তু কৃষক কী করছেন? বিষ প্রয়োগের পরদিনই বেগুন তুলে বিক্রি করছেন। এই বেগুন যেভাবে খাচ্ছি, সেভাবে খেয়ে রোগজীবাণুমুক্ত হতে পারছি না। বরং আরও বাড়ছে। কৃষকদের মধ্যে এখন ক্যানসার আক্রান্তের হার অনেক বেড়ে গেছে। আগে ৪০ শতাংশ ছিল, এখন সেখানে ৬০ শতাংশ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। গরিব মানুষের মধ্যে ক্যানসার এখন বেশি।

এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৯৮ শতাংশ শাকসবজি ও ফলমূল ক্যানসার সৃষ্টিতে সক্ষম ক্ষতিকর উপাদান দ্বারা দূষিত হয়ে পড়ে।

——————————————————————————————-

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বেগম রোকেয়া আনোয়ার বলেন, খাদ্যে ভেজালের কারণে লোকজন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাবার কম বা বেশি দুটিই ক্ষতিকর। খেতে হবে পরিমাণমতো। এখনকার দিনে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কিংবা জাংক ফুড খাওয়ায় স্থূলতা বাড়ছে।

——————————————————————————————-

তিনি বলেন, নারীদের মধ্যে যারা খাওয়া-দাওয়া কম করেন ও অপুষ্টিতে ভোগেন, অনেক দিন ডাক্তারের কাছে যান না, যাদের ইমিউনিটি কম। তাদের জরায়ুমুখের ক্যানসার বেশি হয়। কারণ এটা ভাইরাস দিয়ে হয়। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এই ভাইরাস ছেলেদের মাধ্যমে ছড়ায়। এটা শরীর থেকে বের করতে হলে খুব ভালো রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার লাগে। যার বডি রেজিস্ট্যান্স ভালো, সে খুব তাড়াতাড়ি ক্লিয়ার আউট করে ফেলে, তার তো কোনো ক্যানসার হয় না। কিন্তু যে ক্লিয়ার আউট করতে পারল না। অনেক বছর হয়ে গেল। তখন কিন্তু অন্যান্য অসুবিধা সঙ্গে নিয়ে ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অতিরিক্তও খাওয়া যাবে না, কমও খাওয়া যাবে না। ব্যালান্স ডায়েট হলো সুস্থ জীবনের জন্য সবচেয়ে ভালো পন্থা।

ঢাকার বাতাস সিগারেটের ধোঁয়ার তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে লাং ক্যানসার এবং অন্যান্য যে অকুপেশনাল হ্যাজার্ড সেগুলো করে দিচ্ছে। ঢাকায় বায়ুদুষণ খুব খারাপ। দিল্লিতে একটুখানি হলেই কিন্তু ওরা স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের এখানে কিন্তু বন্ধ করা হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে এখন কিন্তু একটা সময় চলে এসেছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে পারি। এই বায়ুদূষণ খুবই অ্যালার্মিং।

বিএসএমএমইউর জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার গবেষণার ফল অনুযায়ী দেশে ৩৮ ধরনের ক্যানসারের মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ুমুখের ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বেশি। মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যানসারের রোগী। দেশে প্রতি লাখে ক্যানসারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৬, প্রতিবছর নতুন করে আক্রা

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!