পবিত্র কোরআনে দ্বিন শব্দের বিভিন্ন অর্থ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫
  • 32 পাঠক

উম্মে আহমাদ ফারজানা। ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ 

দ্বিন শব্দটি আরবি ভাষায় বিচার, প্রতিফলন বা প্রতিদান অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রবাদ রয়েছে ‘ যেমন কর্ম তেমন ফল’। (ইবন মানজুর আল-আফরিকি, লিসানুল আরাব, ১৩শ খণ্ড, বৈরুত : দারুল ফিকর, পৃষ্ঠা-১৬৯)

আল-কোরআনে ‘ দ্বিন ’ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো বিশ্লেষণ করলে ‘ দ্বিন ’ শব্দের বহুমুখী অর্থ বেরিয়ে আসবে।

যেমন—
এক. প্রতিফল বিচার বা ফায়সালা করা : যেমন আল্লাহ তাআলা হলেন বিচার দিবসের মালিক। (সুরা : ফাতিহা, আয়াত : ৪)

ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে ‘দ্বিন’ দ্বারা প্রতিফল এবং হিসাব নেওয়াকে বোঝানো হয়েছে। (আল-তাবারি, জামিউল বায়ান ফি তাফসিরিল কোরআন, বৈরুত : দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবি ২০০১ খ্রি., ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯২)

অন্য আয়াতে এসেছে : ‘ তুমি কি জান বিচার দিবস কী ? অতঃপর তুমি কি জান বিচার দিবস কী ? যেদিন কেউ কারো কোনো উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।’ (সুরা : আল-ইনফিতার, আয়াত : ১৭-১৯)

দুই. আনুগত্য, অনুসরণ, অনুগামী, আত্মসমর্পণ : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ তারা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বিন অনুসন্ধান করছে ? অথচ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমুদয় বস্তু ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আল্লাহর কাছে সমর্পিত। তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৩)

আলোচ্য আয়তে দ্বিন শব্দটি আনুগত্য স্বীকার ও অনুসরণ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

তিন. শরিয়ত বা ব্যাবহারিক নিয়ম-পদ্ধতি : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বিন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নুহকে, আর যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি তোমার প্রতি এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মুসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে তোমরা দ্বিনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ কোরো না।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১৩)

মুফাসসিরগণের মতে, আলোচ্য আয়াতে ‘দ্বিন’ মানে বিধিবদ্ধ শরিয়ত।

চার. আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্ব স্বীকার : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ। এগুলোর কোনো প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন কেবল তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে; এটাই শাশ্বত ও সরল দ্বিন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪০)

পাঁচ. আল্লাহর আদেশ পালন ও উপাসনা : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ অমি (আল্লাহ) তোমার প্রতি সত্যের সঙ্গে গ্রন্থ নাজিল করেছি। সুতরাং আল্লাহর জন্য দ্বিনকে একনিষ্ঠ করে কেবল তারই ইবাদত করো। সাবধান! দ্বিন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্যই নিবেদিত…।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২-৩)

ছয়. আত্মসমর্পণ : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ বলো, আমার প্রতিপালক সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তোমরা প্রত্যেক সিজদার সময় স্বীয় মুখমণ্ডল সোজা রাখো এবং তাঁকে খাঁটি আনুগত্যশীল হয়ে ডাক। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার যেমন সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তোমরা পুনর্বার সৃজিত হবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৯)

সাত. আইনকানুন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ ফেরাউন বলল, ছাড়ো তো আমাকে, আমি মুসাকে হত্যা করব। এখন সে তার রবকে ডাকুক। আমার আশঙ্কা, সে যেন তোমাদের দ্বিনকে বদলে না ফেলে এবং দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে না বসে।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ২৬)

উপরিউক্ত আয়াতে দ্বিন শব্দ রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

আট. মানব রচিত মতবাদ : যেমন আল্লাহর বাণী : ‘ তাদের কী এমন শরিক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্য এমন ধর্ম সিদ্ধ করেছে, আল্লাহ যার অনুমতি দেননি ? যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকত, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয়ই জালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ২১)

নয়. মনোনীত জীবনবিধান : আল্লাহর বাণী : ‘ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনবিধান হলো ইসলাম…।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পূর্ণ করলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণতা দান করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩)

উল্লেখিত আয়াতগুলোতে ‘দ্বিন’ শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!