মাইমুনা আক্তার। ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
মুসলমান মুসলমানের ভাই। তাই কোনো মুসলমান তার কোনো মুমিন ভাইয়ের বিপদে বসে থাকতে পারে না। কারণ সাধ্যমতো কারো দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ তোমরা নিজেদের জন্য উত্তম যা-ই অগ্রিম পাঠাবে, আল্লাহর কাছে গিয়ে তোমরা তা আরো উৎকৃষ্ট অবস্থায় এবং মহা পুরস্কাররূপে বিদ্যমান পাবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)
উল্লেখিত আয়াতের ‘ তোমরা নিজেদের জন্য উত্তম যা-ই অগ্রিম পাঠাবে ’ ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লেখেন, এখানো উদ্দেশ্য হলো, অন্যান্য ফরজ আমলের পাশাপাশি দান-সদকা করা বা অন্যান্য সৎ কাজে ব্যয় করা। যেগুলোর প্রতিদান মহান আল্লাহর কাছে জমা হয় এবং পরকালে এগুলোকে বহুগুণে বাড়িয়ে প্রতিদান দেয়া হবে। যারা তাদের জান-মাল দিয়ে মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে সহযোগিতা করে, তারা আল্লাহর প্রিয় মানুষ। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা মানুষের উপকারে অগ্রগামী। (সহিহুল জামে, হাদিস : ১৭৬)
তবে কারো দুশ্চিন্তা দূর করতে গিয়ে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। কেননা মহান আল্লাহ গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া যেমন হারাম করেছেন, তেমনি গুনাহের কাজে কাউকে সহযোগিতা করাও হারাম করেছেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা করো। মন্দ কর্ম ও সীমা লঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা কোরো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুসলমানদের পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার ভিত্তি ঠিক করে দিয়েছেন।
কারো উপকার করার ক্ষেত্রে এই নীতির বাইরে যাওয়া যাবে না। কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কারো জুলুমে সহযোগিতা করা যাবে না; বরং সম্ভব হলে জালিমকে জুলুম থেকে বিরত রেখে তার উপকার করার চেষ্টা করতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালিম হোক অথবা মাজলুম।’ তিনি (আনাস) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ! মাজলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালিমকে কি করে সাহায্য করব ? তিনি (সা.) বলেন, ‘ তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৪)
অতএব, মুমিনের উচিত সর্বাবস্থায় অন্য মুসলমান ভাইয়ের দুঃখ-দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করা। তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে অপর ভাইয়ের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, একদা আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি সওয়ারিতে (বাহনে) আরোহণ করে তাঁর কাছে এলো এবং ডান দিকে ও বাঁ দিকে তাকাতে লাগল।
তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার কাছে আরোহণের কোনো অতিরিক্ত বাহন থাকে, সে যেন তা দিয়ে তাকে সাহায্য করে যার কোনো বাহন নেই। আর যার কাছে অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য থাকে সে যেন তা দিয়ে তাকে সাহায্য করে, যার খাদ্যদ্রব্য নেই। তারপর একইভাবে বিভিন্ন প্রকার সম্পদ সম্পর্কে বলতে লাগলেন। আমাদের মনে হলো যে অতিরিক্ত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকারই নেই। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০৯)
নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে অপর ভাইয়ের সহযোগিতায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার কারণেই সাহাবায়ে কিরামের মনে হয়েছে, তাঁদের কাছে থাকা অতিরিক্ত সম্পদে তাঁদের অধিকার নেই।
————————————————————————————————–
নবীজি (সা.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার পারলৌকিক বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করবেন। কোনো ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষ গোপন রাখলে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কষ্ট-কাঠিন্য সহজ করে দেয়, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার কষ্ট সহজ করে দেবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় রত থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তায় রত থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৫)
———————————————————————————————–
তাই আমরা যদি আমাদের জীবনে সমৃদ্ধি চাই, আখিরাতে মুক্তি চাই, ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা চাই, সুখি জীবন চাই, আমাদের উচিত ইখলাসের সঙ্গে অন্যের দুঃখ-দুশ্চিন্তা দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply