রাসুল (সা.)-কে অবমাননার শাস্তি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
  • 41 পাঠক

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা ঈমানের অন্যতম অপরিহার্য বিষয়। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তাঁর নিকট স্বীয় পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫)

এ ছাড়া একজন মানুষকে ভালোবাসার যত কারণ থাকে, যেমন—দয়া, অনুগ্রহ, যোগ্যতা, সৌন্দর্য, অনুপম চরিত্র, ন্যায়নীতি-ইনসাফ, মায়া, মহব্বত, ভালোবাসা প্রভৃতি মহানবী (সা.)-এর মধ্যে সবার চেয়ে বেশি ছিল। তাই ঈমানদার মাত্রই তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসে।

কেউ রাসুল (সা.)-কে গালমন্দ করলে, এই ভালোবাসার দাবিতেই মুমিনদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নবীর অবমাননাকারীকে আরবিতে শাতিমে রাসুল বলা হয়।

এমন ব্যক্তির বিধান নিম্নরূপ :

কোরআনের দৃষ্টিতে নবীজির অবমাননাকারীর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করো, তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। বলুন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নির্দেশ-নিদর্শন ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে ঠাট্টা করছিলে ? অজুহাত দেখিয়ো না, তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরিতে লিপ্ত হয়েছ। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৫-৬৬)

অন্য আয়াতে এসেছে, তারা যদি চুক্তি সম্পন্ন করার পর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বিনের নিন্দা করে, তবে কাফিরদের প্রধানদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, হয়তো তারা নিরস্ত হবে। বস্তুত এরা এমন লোক, যাদের প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২)

উল্লিখিত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, যারা ইসলাম, আল্লাহ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে ঠাট্টা, বিদ্রুপ, কটূক্তি ও অপমান করবে, তারা কাফির।

হাদিসে নবীজির অবমাননার শাস্তি

ইসলামী আইনে শাতিমে রাসুলকে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। নবীজি (সা.)-এর যুগেই শাতিমে রাসুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রা.) আল্লাহর রাসুলের নির্দেশে শাতিমে রাসুল কাব ইবনে আশরাফের প্রাণদণ্ড কার্যকর করেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০৩১)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে মৃত্যুদণ্ড দাও। (জামেউল আহাদিস, হাদিস : ২২৩৬৬)

মক্কা বিজয়ের পর ইবনে খাতাল নামের এক শাতিমে রাসুলকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের পর কাবার গিলাফ ধরে থাকা সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবনে খাতালকে হত্যা করার নির্দেশ দেন, কারণ সে নবীকে গালমন্দ করেছিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৪৯)

এমনকি ইবনে খাতালের দুই দাসী ছিল, যারা রাসুলকে কটূক্তি করে গান গাইত। মহানবী (সা.) তাদেরও মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। (আসাহহুস সিয়ার : ২৬৬)

সালাফের বক্তব্যে শাতিমে রাসুলের শাস্তি

বিভিন্ন মনীষীর মতেও শাতিমে রাসুলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব। এখন যেহেতু ইসলামী হুকুমত ব্যবস্থা নেই, তাই উম্মাহর দায়িত্ব নিজেদের দেশের সরকারের কাছে শাতিমে রাসুলের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের জন্য জোর দাবি করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসুলকে কটূক্তি করবে, তাকে হত্যা করা (মৃত্যুদণ্ড দেয়া) হবে। (আস সারিমুল মাসলুল)

ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) বলেন, শাতিমে রাসুলকে হত্যা করা হবে। কারণ কোনো মুসলমান রাসুলকে গালি দিতে পারে না। যে গালি দেয়, সে মুরতাদ। (আস সারিমুল মাসলুল)

ইমাম ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, নবীজির অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড—এ বিষয়ে উম্মতের ওলামায়ে কিরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন। (আস সারিমুল মাসলুল)

শাতিমে রাসুল সম্পর্কে চার মাজহাবের ফতোয়া

হানাফি মাজহাব : শাতিমে রাসুলকে হত্যা করার অধিকার মুসলিম শাসকের আছে। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৪৫)

শাফেয়ি মাজহাব : শাতিমে রাসুলকে হত্যা করা অপরিহার্য। সে জিম্মি (মুসলিম দেশে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক) হলেও নিরাপত্তা ওঠিয়ে হত্যা করা হবে। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-১৫)

মালেকি মাজহাব : শাতিমে রাসুলের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-৮৪)

হাম্বলি মাজহাব : শাতিমে রাসুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে, সে মুসলিম হোক বা কাফির। (আস সারিমুল মাসলুল, পৃষ্ঠা-১৩)

সুতরাং যে ব্যক্তিই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মানে আঘাত হানবে, কটূক্তি, অপমান কিংবা গালমন্দ করবে, সে নিঃসন্দেহে কাফির। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে কঠিন শাস্তি দেয়া মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের অপরিহার্য দায়িত্ব। যদি কোনো মুসলিম শাসক এ ব্যাপারে উদাসীন হয়, তবে তাকে অবশ্যই মহান আল্লাহর সামনে এর জবাব দিতে হবে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ, রাজাবাড়ি, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!