দিশারী ডেস্ক। ১০ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।
চট্রগ্রামে ১৩ দিনের নির্যাতিত বৃদ্ধ বাবাকে উদ্ধার করা হয়েছে চকবাজার থানা ছাত্রদলের সহায়তায়।
জানালার গ্রিল ও কাঠের সাথে হাত-পা রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন। গলায় মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে টেপ। যাতে কান্নার শব্দ বাইরে না যায়। সত্তোরোর্ধ্ব খুইল্ল্যা মিয়ার ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটেছে নগরীর বাকলিয়া থানার শান্তি নগর নিরাপদ হাউজিং সোসাইটিতে। মদিনা ভবনের দ্বিতীয় তলায়। শুক্রবার রাত ১১টার সময় খুইল্ল্যা মিয়াকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত রোববার।
খুইল্ল্যা মিয়ার অভিযোগ বাইরের কেউ নয় ; সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় নিজের ছেলেরা গত ১৩ দিন ধরে তাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালাচ্ছে। ছাত্রদলের স্থানীয় নেতারা মুমূর্ষু অবস্থায় এই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ খুইল্ল্যা মিয়ার দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। তারা হলেন- আবদুল আউয়াল (৩০) ও আব্দুল রহিম (১৮)।
সম্পত্তিই কাল হল খুইল্ল্যা মিয়ার
জীবনে উপার্জিত সব অর্থ দিয়ে নগরীর পশ্চিম বাকলিয়ার শান্তিনগরে দুটি ভবন গড়ে তুলেন খুইল্ল্যা মিয়া। রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও আছদগঞ্জেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। এরমধ্যে শান্তি নগরের নিরাপদ হাউজিং সোসাইটির চারতলা নিজস্ব ভবনের দুই তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। খুইল্ল্যা মিয়ার তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী আছে। এরমধ্যে এক মেয়েকে লোহাগাড়ায় বিয়ে দিয়েছেন। বাকিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় তার সঙ্গে থাকেন।
জানা গেছে, খুইল্ল্যা মিয়ার সব সম্পত্তি লিখে দিতে বেশ কিছুদিন ধরে সন্তানেরা চাপ দিচ্ছিলেন। খুইল্ল্যা মিয়া সন্তানদের বুঝাতে চেষ্টা করছিলেন- তিনি মারা গেলে নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তি তারাই পাবেন। তবে এসব কথা মানতে রাজি ছিলেন না সন্তানেরা। তারা ১৩ দিন আগে খুইল্ল্যা মিয়াকে ঘরের একটি কক্ষে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালান। তাকে আটকে রাখেন।
খুইল্ল্যা মিয়াকে উদ্ধার পরবর্তী থানা পুলিশকে খবর দেন নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাদের। তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাত আনুমানিক ১১টার সময় সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম ফোন করে জানান, মদিনা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক বৃদ্ধকে ঘরের ভেতরে বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে। পাশের ভবন থেকে লোকজন বিষয়টি দেখেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই।
তিনি বলেন, ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ওঠে একটি কক্ষের ভেতরে জানালার গ্রিল ও কাঠের সাথে রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা অবস্থায় খুইল্ল্যা মিয়াকে উদ্ধার করি। বাকলিয়া থানাকেও খবর দেয়া হয়। বৃদ্ধ খুইল্ল্যা মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। চমেক হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় তাকে মেহেদীবাগের একটি বেসরকারি হাসাতপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন জানান, খুইল্ল্যা মিয়া নামে এক বৃদ্ধকে ঘরের কক্ষে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে সন্তানেরা নির্যাতন করছে- এমন অভিযোগ পেয়ে তাকে আমরা উদ্ধার করি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার দুই সন্তানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে মামলা দিলে ওই মামলায় দুই সন্তানকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
ওসি ইখতিয়ার জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় ওই বৃদ্ধকে তার সন্তানেরা ঘরের ভেতর হাত-পা বেঁধে কয়েকদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল। গ্রেপ্তার দুই সন্তানকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
Leave a Reply