মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
——————–
রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে। রিজিক বাড়ানো ও কমানোর মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই রিজিকে রবকত চাইলে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে রিজিক উপার্জন, খরচ ও জমা করতে হবে। রিজিকে বরকত লাভের অন্যতম উপায় হলো, সদকা করা।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)
তাই সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে গিয়ে কখনো পিছ-পা হওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন রকম কুপরামর্শ দিয়ে মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা থেকে বিরত রাখা শয়তানের কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান তোমাদের দরিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদের তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৮)
অর্থাৎ কারো মনে যদি এ ধারণা জন্মে যে দান-সদকা করলে ফকির হয়ে যাবে, বিশেষত আল্লাহ তাআলার তাকিদ শুনেও স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করার সাহস না হয় এবং আল্লাহর ওয়াদা থেকে মুখ ফিরিয়ে শয়তানি ওয়াদার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন বুঝে নেওয়া উচিত, এ প্ররোচনা শয়তানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
যদি দেখা যায় যে কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্য দান-সদকায় অনুৎসাহী করছে, আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা না করার জন্য বিভিন্ন রকম কুটচাল চালছে, তাহলে বুঝতে হবে, তার ওপর শয়তান ভর করেছে। সে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা থেকে বিরত রেখে কোনো উপকার করছে না, বরং ক্ষতি করছে। আল্লাহ প্রদত্ত বরকত থেকে বঞ্চিত করছে।
তারা এগুলো করে মূলত অর্থলোভ ও কৃপণতা থেকে, যা মুমিনের জন্য ধ্বংসাত্মক। এ ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, যখন তারা তাই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)
তাই কোনো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এমনকি প্রিয়তমা স্ত্রী/স্বামীও যদি কল্যাণের কাজে বাধা দেয়, তাহলে বুঝতে হবে, সে ভুলের সাগরে ডুবে আছে। আমাদের উচিত, তাকে উত্তম নসিহতের মাধ্যমে এই ভুল মনোভাব থেকে ফিরিয়ে আনা। অন্যথায় তার প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
সাধ্যমতো আল্লাহর রাস্তায় সদকা করা, পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করা আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকের শুকরিয়া জ্ঞাপনের একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে নিজেদেরই বেশি উপকার হয়। পরিবারের হোক কিংবা বাইরের, দুর্বলদের উপকার করলে মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) সাদ (রা.)-কে নসিহত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা দুর্বলদের অসিলায় সাহায্যাপ্রাপ্ত ও রিজিকপ্রাপ্ত হচ্ছ। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৬)
Leave a Reply