থাইরয়েড : নিরাময় না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, মে ২৫, ২০২৩
  • 336 পাঠক

দিশারী ডেস্ক

————

আজ ২৫ মে। বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে পুরো বিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। দিনকে দিন থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ তাদের অর্ধেকই জানেন না, তারা এ সমস্যায় ভুগছেন।

সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের মধ্যে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ শতাংশ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকেন। তবে প্রাপ্তবয়স্কের পাশাপাশি নবজাতক শিশুদের মধ্যেও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে। আর শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন ঘাটতির কারণে দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের বিভিন্ন থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ড্রোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি)। তবে এসব রোগীর অর্ধেকের বেশিই জানেন না তারা এ সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া পুরুষদের তুলনায় নারীরা চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছেন থাইরয়েড বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ হরমোন নরমাল থেকেও থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে, যাকে আমাদের সাধারণ ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়। বাংলাদেশে যদিও আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া হচ্ছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বেশির ভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে।’

থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ অজ্ঞতার কারণে থাইরয়েডের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় অনেকে দেরিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকে নানাজনের পরামর্শে ওষুধ খান। এতে অনেক সময় ভুল ওষুধ খাচ্ছেন। ফলে তার রোগের জটিলতা বাড়ছে।’

অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, ‘ বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ থাইরয়েড সমস্যা। তাই গর্ভধারণে সমস্যার ক্ষেত্রে গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শের পাশাপাশি থাইরয়েডের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। অন্যথায় নবজাতকের মানসিক ও শাররিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’

থায়রয়েড হলো প্রজাপতি আকৃতির একটি গ্রন্থি, যা আমাদের কণ্ঠনালির সামনে অবস্থিত। এখান থেকে যে রস নিঃসৃত হয় তাকে বলা হয় থাইরয়েড হরমোন। এই হরমোন আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। যেমন শরীরের মেটাবলিজম বা শিশুদের ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ, বয়ঃসন্ধির লক্ষণ এই হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। থাইরয়েড নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ, মাসিক নিয়মিত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

যখন থাইরয়েড হরমোন আমাদের শরীরে বেড়ে যায়, তখন তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। আর যখন থাইরয়েড হরমোন কমে যায়, তখন তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।

থাইরয়েড রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অধিকাংশ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে অবগত নয়।

কারণ

জেনেটিক বা বংশগত, অটোইমিউনিটি ডিজিস, আয়োডিনের স্বল্পতা, থাইরয়েড সার্জারি, কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।

লক্ষণ

কোনো কারণ ছাড়া ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, কাজে অনীহা বা ক্লান্ত বোধ, মানসিক অবসাদে ভোগা/ ঘুম ঘুম ভাব, মুখ ও পা ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত মাথার চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, গলার স্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া, শীত শীত লাগা/ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, গলা ফোলা ভাব/গলগণ্ড, নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক অনিয়মিত হওয়া, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া থাইরয়েডিজমের লক্ষণ। আর শিশুদের ক্ষেত্রে সঠিক বয়সে রোগ চিহ্নিত করা না গেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।

রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নির্ণয়ের মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং এর নিয়ন্ত্রণও সম্ভব। মনে রাখতে হবে, হাইপোথাইরয়েডিজম একটি সারা জীবনের রোগ। এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়। তাই নিয়মিত ওষধ সেবনের মাধ্যমেই সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।

লেখক: ডায়াবেটিক ও হরমোন বিশেষজ্ঞ। এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!