দেশে দুই কোটি প্রবীণ, ভাতা অপ্রতুল

  • আপডেট সময় রবিবার, অক্টোবর ১, ২০২৩
  • 162 পাঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক। ০১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি.।

দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তবে এই বয়সী মানুষের সমস্যা মোকাবেলায় নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। প্রয়োজনমতো বাড়ছে না তাঁদের স্বাস্থ্যগত সুযোগ-সুবিধা কিংবা ভাতার পরিমাণ। যদিও চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির তুলনায় এটি অত্যন্ত অপ্রতুল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গৃহগণনা ও জনশুমারির তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে প্রবীণ (ষাটোর্ধ্ব) জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন এক কোটি ৯৮ লাখ। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা বেশি না হলেও ১১.৬৬ শতাংশ। তবে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমে বাড়ছে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের প্রাক্কলন হিসেবে ২০২৫-২৬ সালে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে দুই কোটি। ২০৫০ সালে ওই সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি, যা তখনকার জনসংখ্যার ২১ শতাংশ হবে।
.
বয়স বিভাজন নিয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মোট জনগোষ্ঠী বর্তমানে ১০.১০ শতাংশ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীর হার ৯.১৭ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীর হার ৯.১৭ শতাংশ। দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে বর্তমানে তরুণ জনগোষ্ঠীর হার ২৭.৯৬ শতাংশ। সংখ্যায় যা পৌনে পাঁচ কোটি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রবীণদের চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। যেসব হাসপাতালে সবার চিকিৎসা হয়, সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা করা হয়। প্রবীণদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা দরকার।

তিনি বলেন, প্রবীণরা সাধারণত নানা ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে অন্যতম কিডনি, লিভার, হার্টের সমস্যাসহ অনেক কিছু। এ ছাড়া প্রবীণদের পুষ্টির ঘাটতি লক্ষণীয়। এ কারণে রোগব্যাধি আরো বাড়ে।

বে-নজির আহমেদ বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে। হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য আলাদা বহির্বিভাগ আছে। আমাদের দেশেও প্রবীণদের চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ আট কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন। মোট জনগোষ্ঠীর যা ৪৯.৫১ শতাংশ। অন্যদিকে নারীর সংখ্যা আট কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৫০.৪৩ শতাংশ। পুরুষের তুলনায় নারী ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৭ জন বেশি।

জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য মতে, দেশে খানার আকৃতি বা পরিবার ছোট হয়ে আসছে। এতে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। বার্ধক্যের কারণে উপার্জন কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ লোক উপার্জনহীন হয়ে পড়েন। অর্থনৈতিকভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। অথচ এই প্রবীণদের জন্য দেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো শুরু করা যায়নি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন না প্রবীণরা। এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।

দেশের প্রবীণদের একটি অংশ বয়স্ক ভাতা পায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ এক হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫৮ লাখ এক হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে প্রবীণদের এই ভাতার পরিমাণ অত্যন্ত অপ্রতুল। আবার সরকার ভবিষ্যৎ প্রবীণদের জন্য বেসরকারি খাতে প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২৭ শতাংশের বেশি কর নির্ধারণ করল, সেটিও অযৌক্তিক। সুতরাং শুধু ভাতা নয়, সরকারের নীতিমালায়ও পরিবর্তন প্রয়োজন। সরকারকে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

হিসেব মতে দেশে পুরুষের গড় আয়ুর চেয়ে নারীর গড় আয়ু প্রায় দুই বছর বেশি। অথচ সবচেয়ে কষ্টে জীবন কাটান বয়স্ক বিধবারা। তাঁদের প্রায় সবাই প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এক বছরের কম বয়সী সব শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সব প্রবীণকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নির্বাচনের পর চারটি বাজেট পাস হয় জাতীয় সংসদে। তবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কোনো বরাদ্দের কথা শোনা যায়নি।

প্রবীণদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অল বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মহাসচিব মো. ফজলুল হক বলেন, প্রবীণদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আর আমরা একটি প্রবীণবান্ধব সমাজ চাই। আমরা চাই হাসপাতালগুলোতে প্রবীণদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, প্রবীণদের জন্য দেশে নীতিমালা আছে। তবে সেই নীতিমালা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। প্রবীণদের বিশেষ সুবিধা দিতে তাঁদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট করা হোক।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!