লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলছে ১১৫ ওষুধ কোম্পানি !

  • আপডেট সময় সোমবার, নভেম্বর ২০, ২০২৩
  • 183 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২০ নভেম্বর ২০২ত খ্রিস্টাব্দ।

সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তালিকা অনুসারে ১৯৮৭ সালের ২৯ আগস্ট লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দিদার ফার্মার। এরপর গত ৩৬ বছর ধরে নবায়ন ছাড়াই চালু আছে বগুড়ার কুকরুলে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে ২০০৫ সাল থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা ছাড়াই চলছে রাজশাহীর সেবা ফার্মাসিউটিক্যালস।

২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হয়েছে রাজধানীর পাশের আশুলিয়ার সুপ্রিম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের লাইসেন্সের মেয়াদ। এই প্রতিষ্ঠানও চালু আছে। এদের ৭০টি বেশি ওষুধের খোঁজ পাওয়া যায় বাজারে ও ওষুধ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।

এরিস্টোফার্মার লাইসেন্সের মেয়াদও শেষ হয় ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর। কিন্তু তাদেরও উৎপাদন সচল রয়েছে। শুধু এই চারটিই নয়, ১১৫টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই বিভিন্ন সময় থেকে। এর মধ্যে দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও আছে।

লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ ও নবায়ন না হওয়ার তালিকায় থাকা দেশের একটি শীর্ষ পর্যায়ের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খবরের কাগজকে বলেন, নবায়নের শর্ত পূরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটু ঝামেলা ছিল বলে সময়মতো নবায়ন করা যায়নি। তবে এখন প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই নবায়ন হয়ে যাবে। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নবায়ন ফি বেশি বাড়ানোর ফলে অনেকের পক্ষেই সময়মতো লাইসেন্স নবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

সঠিকভাবে বা সময়মতো নবায়ন না করা প্রসঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অধিদপ্তরের ভেতরে নবায়ন প্রক্রিয়ায় যারা যুক্ত, তাদের অনিয়ম ও গাফিলতির দায় সবচেয়ে বেশি। কারণ কোনোভাবেই বছরের পর বছর এমনটা হতে পারে না। হয়তো ২-১ মাস দেরি হতে পারে পরিদর্শন করতে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার চেয়েও দেরি করে বা আরও বেশি সময় নিতে চায়, তখন বুঝতে হবে কোনো ঝামেলা আছে। এক্ষেত্রে কারও কারও অসততাও থাকতে পারে। এখন তো ডিজিটাল সিস্টেমে সব কিছু হচ্ছে, ফলে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার প্রশ্ন আসতে পারে না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, তথ্য আপডেট না থাকারও কথা নয়। যদি তথ্য আপডেট না থাকে, সেটাই বা কেন হবে? তাহলে ডিজিটাল সিস্টেম করে লাভ কি হলো? বরং এর পেছনে কোনো কারসাজি-অনিয়ম আছে কি না সেটা খুঁজে দেখা দরকার।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০৪। এর মধ্যে ৬২ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বিভিন্ন কারণে। ১১৫টির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বিভিন্ন সময়ে। যা এখন পর্যন্ত নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলেও তাদের উৎপাদন চালু আছে স্বাভাবিকভাবেই। এর বাইরে ৬টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন স্থগিত রাখা হয়েছে। ৪টি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই অচল করে রেখেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, সময়মতো লাইসেন্স নবায়ন না করা এবং নবায়ন ছাড়াই উৎপাদন চালু রাখার সুযোগ দেওয়া দুঃখজনক। যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া এবং নবায়ন প্রক্রিয়ার ভেতর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন না করেও বছরের পর বছর চালু থাকতে পারে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। ঔষধ প্রশাসনের দিক থেকেও এতে এক ধরনের দুর্বলতার পরিচয় মিলছে। এই সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আরও অনেক অনিয়ম করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মানুষের জীবন রক্ষার ওষুধ উৎপাদনে লাইসেন্স দেয়ার সময়ে অনেক দিকে নজর রাখতে হয়। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য উপযুক্ত সব শর্ত মানা হচ্ছে কি না, সেটা খুবই জরুরি। যদি সব শর্ত মানা হয়, তবে তো লাইসেন্স দেওয়া বা নবায়ন না করার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া তথ্য যদি আপডেট না থাকে, সেটাও ঠিক না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. সালাহউদ্দীন বলেন, এতগুলো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন না থাকার কথা নয়। এটা হয়তো তথ্য আপডেট না-ও থাকতে পারে। তবে অনেক নবায়ন প্রক্রিয়া চলমান আছে।

তিনি জানান, নবায়নের আবেদন ফরম পূরণ করার পর ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আমরা টিম পাঠাই। তারা যদি প্রয়োজনীয় সব শর্ত ঠিকঠাক আছে বলে রিপোর্ট দেয়, তখনই কেবল নবায়ন অনুমোদন করা হয়। শর্ত পূরণ না হলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে সময় বাড়িয়ে দিই।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ওষুধ উৎপাদনে থাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শর্ত মানা জরুরি। কারখানার পরিবেশ কিংবা কোনো যন্ত্রপাতি ঠিকমতো না থাকলে ওষুধের ওপরও গুণগত প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. সফিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার খোঁজ নিতে হবে। তবে আপাতত আমার মনে হচ্ছে, অন্যতম কারণ হতে পারে নবায়ন ফি বৃদ্ধির।

তিনি জানান, আগে নবায়ন ফি ছিল ৫ হাজার টাকা। সেটা এখন ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আবার প্রতিটি প্রডাক্টের নবায়ন ফিও বাড়ানো হয়েছে। ফলে যাদের ১০০ আইটেম আছে, তাদের ফি কয়েক লাখ টাকা পড়ে যায়। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটা বিরাট একটা চাপ। হয়তো এ কারণেও অনেকে লাইসেন্স নবায়নে গড়িমসি করে থাকতে পারেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!