হলফনামা বিশ্রেষণ : প্রার্থীদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
  • 118 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

গত ৫ থেকে ১৫ বছরে প্রায় সব এমপি ও মন্ত্রীর অর্থ-সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে আয়। প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নির্বাচন কমিশনে দেয়া প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণীতে বিষয়টি স্পস্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিবরণীতে বর্তমানের প্রকৃত মূল্য আড়াল করা হয়েছে। ফলে, হলফনামা অনুসারে যাদের সম্পদের পরিমাণ ১০ গুণ বেড়েছে, প্রকৃত বাজার মূল্যের হিসাবে তাদের সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০ গুণেরও বেশি।

সাবির্কভাবে গত তিনটি নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পদের হিসেব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। আয়ের উৎস, সম্পদের হিসাব ও বাস্তব মূল্যের অসংগতি তুলে ধরে প্রতিবছর একই ধরনের তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। এতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলেও অর্থ-সম্পদের প্রকৃত তথ্য আড়াল করায় প্রার্থীদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রার্থীদের অর্থ-সম্পদ বিবরণী শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য নয়, বরং যে কোনো ধরনের অসংগতির জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত। এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সবকিছু খতিয়ে দেখার সুযোগ আছে বিধায় এই প্রবিশনটা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয় তারা ক্ষমতায় গিয়ে কিংবা ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর হলফনামা জমা দেয়ার নিয়ম কার্যকর হয় ২০০৮ সাল থেকে। যার মধ্যে প্রার্থীর আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসেব, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিগত তিনটি নির্বাচন এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেয়া হলফনামায় দেখা গেছে, অনেক প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ কয়েকশ গুণ বেড়েছে।

আবার অনেকের নিজের নামে সম্পদ দেড়-দুইগুণ বাড়লেও স্ত্রীর নামে সম্পদের পরিমাণ ৫০-৬০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এই সম্পদ বৃদ্ধির হিসেবটিও দেয়া হয়েছে অতীতে দলিলে উল্লেখ করা সম্পদ অর্জনের সময়ে মূল্যের ওপর ভিত্তি করে। এমনিতেই ভূসম্পত্তিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রকৃত বাজার মূল্য অনেক বেশি রয়েছে। এ ছাড়া ১০ বছর আগে যে মূল্য দেখিয়ে সম্পদ কেনা হয়েছে সেই মূল্যই হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সম্পত্তির বর্তমান প্রকৃত মূল্য আড়ালেই থাকছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার সম্পদ বিবরণীতে বনানী বাণিজ্যিক এলাকায় ২৯ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে জমিসহ ১৬ তলা ভবনের ১১ তলা মালিকানার মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৩ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার ২২ টাকা। যা বর্তমানে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। মোহাম্মদপুর পিসিকালচার হাউসিং সোসাইটিতে আড়াই কাঠা জমির মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৭০ হাজার টাকা। রাজধানী শুধু নয়, দেশের কোথাও ভূমির মূল্য এত কম নেই।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনসহ কয়েকটি এনজিও গত কয়েকটি নির্বাচনে হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও কোনো ফল হয়নি। কোনো কর্তৃপক্ষকে আজও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ ৪৮ প্রার্থীর সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুজন। প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকজন প্রার্থীর আয় ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৮ হাজার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

এরপর সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ ৫৩ জন প্রার্থীর (যারা দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন) হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে। এতে বলা হয়, ৫৩ জন প্রার্থীর আয় গড়ে ১০৬.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বৃদ্ধির এই হার ১০.৯১ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১৫২.০৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!