ভারতের ১০০ কোটি মানুষ পুষ্টিকর খাবার পায় না

  • আপডেট সময় রবিবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
  • 130 পাঠক

—————————————————-
জাতিসংঘের প্রতিবেদন

—————————————————-

দিশারী ডেস্ক। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

খাদ্য চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ভারতের একশ কোটিরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার জোগানোর সামর্থ্য ছিল না। অথচ ভারত সরকারের দাবি, শুধু ৮১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের খাদ্য সহযোগিতা প্রয়োজন।

খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির বিষয়ে জাতিসংঘের পাঁচটি অঙ্গসংগঠনের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে প্রায় ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ ভারতীয় অর্থাৎ প্রায় ১০৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ পুষ্টিকর খাবারের অভাবে ভুগেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০১৭ সালে ভারতের প্রায় ৭৯ শতাংশ (৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ) মানুষ সুষম খাদ্য জোগাতে অক্ষম ছিল। পাঁচ বছরে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ভারতের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বেশ কয়েক ধাপ এগিয়েছে। পাশাপাশি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে সক্ষম বাংলাদেশিদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে যেখানে বাংলাদেশের ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারত না, সেখানে ২০২১ সালে এসে সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ১২ কোটি ১৮ লাখ মানুষ সুষম খাদ্য জোগাতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১৯ লাখে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ১ কোটিরও বেশি মানুষ এই সীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পর ভালো অবস্থানে রয়েছে ভুটান। ২০১৭ সালে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারত না ভুটানে। ২০২১ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ২ শতাংশে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ইরানকেও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়েছে। দেশটির এই সূচকে অবনতি হয়েছে। ২০১৭ সালে যেখানে দেশটির মাত্র ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য জোগাতে অক্ষম ছিল, সেখানে পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশটির ৩০ শতাংশেরও বেশি মানুষ সেই কাতারে নেমে এসেছে।

তবে উন্নতি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ দেশ মালদ্বীপের। ২০১৭ সালে দেশটির মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু পাঁচ বছর পরে এসে দেশটির সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশে। একই ধারায়, অর্থাৎ সূচকে উন্নতি করেছে নেপালও। দেশটির ৮০ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য থেকে বঞ্চিত ছিল ২০১৭ সালে, কিন্তু ২০২১ সালে এসে সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশে।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ সুষম খাদ্য জোগাতে পারে না। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে পাকিস্তানে প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিল। অথচ পাঁচ বছর আগে এই অনুপাত ছিল ৮১ শতাংশ।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশ সুষম খাদ্য জোগাড় করতে পেরেছে। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য পেত না। পাঁচ বছরে সেই সংখ্যা কমেছে বেশ। ২০২১ সালেও দেশটির ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্য পেত।

খাদ্য নিরাপত্তা কর্মী এবং পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারত সরকার দেশে খাদ্যের অভাব ও পুষ্টিহীনতার বিষয়গুলো স্বীকার করছে না। এমন সমালোচনার সময়ই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!