দিশারী ডেস্ক। ১১ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তির হার চরম হতাশাজনক। গত মার্চ মাসে ঢাকায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৭টি। আর এপ্রিল মাস শেষে ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৫৯টি। অর্থাৎ এক মাসে মামলা নিষ্পত্তির হার মাত্র দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা পৌনে এক শতাংশেরও কম।
আইন মন্ত্রণালের সলিসিটর কার্যালয়ে আসা ‘ ঢাকা জেলা জজশিপের মার্চ-২০২৪ মাসের দেওয়ানি মোকদ্দমার কার্যবিবরণী’তে এই তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিন এই বিবরণীতে স্বাক্ষর করার পর তা সলিসিটর কার্যালয়ে আসে।
মামলা নিষ্পত্তির হার এত কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) তাদের এখতিয়ারভুক্ত কাজগুলো যথাযথভাবে করলেই ট্রাইব্যুনালে মামলা কমে যাবে। কিছু করণিক ভুল আছে, যা সরকারি দপ্তরের এখতিয়ারসম্পন্ন কর্মকর্তারাই শুধরে দিতে পারেন, সেগুলো তারা যথাযথভাবে করলে আর মামলা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে না। ফলে মামলা দায়েরের সংখ্যা কমে যাবে। যেমন : নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগ-সূচিতে ভুল, ম্যাপের সঙ্গে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি অনেক ভুল সংশোধন সরকারি দপ্তরেই সম্ভব। আবার জরিপকালে বাবার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও জরিপকারদের ভুল বা অজ্ঞাত কারণে তা যদি বাবার নামে রেকর্ড হয়ে থাকে, সেটিও সরকারি দপ্তরে সংশোধন করলে ট্রাইব্যুনালে চাপ কমে যায়।
আর দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হচ্ছে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো এবং বিচারকদের জন্য প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, এই আইনের মামলা নিষ্পত্তি করা তেমন জটিল কিছু না, কিন্তু কিছু প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ তেমন জটিল না হলেও বিচারককে তো মামলাগুলো শুনতে হয়, তারপর নিষ্পত্তি করতে হয়। ল্যান্ড সার্ভের বিষয়ে মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের প্রশিক্ষণ দিলেই বিচারকদের মামলা নিষ্পত্তির হার অনেক বেড়ে যাবে।
এদিকে বিচারক নিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও। তিনি বলেন, এখানে তো ১১-১২ হাজার মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে বলছেন, কিন্তু এমনো ট্রাইব্যুনাল আছে আমি জানি, যেখানে ৩০-৪০ হাজার মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এই যে (৭৭টি মামলা) মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে, এগুলোতে ৩-৪ পৃষ্ঠা করেও যদি রায় লিখে থাকেন, আবার মামলাগুলোর তো শুনানি নিতে হয়েছে, মাসে আদালত খোলা ২০-২২ দিনে কতসংখ্যক মামলাই আর নিষ্পত্তি করা যাবে। তাই বিচারকের সংখ্যা বাড়াতেই হবে।
বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার সব আদালতেই। কিন্তু ল্যান্ড ট্রাইব্যুনালে বিচারক বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৈয়ব হোসেন খান (টিএইচ খান)। ল্যান্ড সার্ভে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই প্যানেল আইনজীবী মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতের হয়ে সশরীরে ভূমি পরিদর্শন করে থাকেন।
তিনি বলেন, প্রায় সব আদালতেই বিচারক সংকট আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আসা মামলাগুলো দেওয়ানি মামলা হলেও মামলা চলাকালে এ-সংক্রান্ত বিরোধ থেকে অনেক ফৌজদারি মামলাও হয়ে থাকে। আবার অনেক মামলা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে হওয়াতে পারিবারিক ও সামাজিক কলহও বাড়ে। তাই এসব মামলার নিষ্পত্তি যত দ্রুত হবে, ততই ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের জন্য মঙ্গল।
Leave a Reply