এতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে যৌনতার উদ্দেশ্যে পাচার নতুন কিছু নয়। এক দশকে ১২ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বালিকা ও নারীকে যৌনতা বিষয়ক চক্র পাচার করেছে ভারতে। কিন্তু টিকটকের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পাচারের ঘটনা প্রথম জানা গেছে। এই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর কয়েকদিন পরেই আরেক বাংলাদেশি নারীকে ভারতে পাচার করার পর তিনি পালান। ৭৭দিন পরে তিনি দেশে ফিরে এসে দেশের পাচার প্রতিরোধ ও নির্যাতন বিরোধী আইনের অধীনে মামলা করেন।
এই দুটি ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশকে বৃহত্তর অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ করে। সেই তদন্ত থেকে দেশের ভিতরে মানবপাচারকারী চক্রের কুখ্যাত নেটওয়ার্কের তথ্য বেরিয়ে আসে। তাতে দেখা যায়, যুব শ্রেণি-বিশেষ করে সহজ সরল টিনেজ মেয়েদের ফুসলিয়ে পাচার করতে ব্যবহার করা হয় টিকটক। এরপর তাদেরকে ভারতে নিয়ে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেছেন, আন্তঃদেশীয় এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে ৫০ জন সদস্য। তারা গত ৫ বছরে ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী প্রায় ৫০০ মেয়েকে ভারতে পাচার করেছে। এ বিষয়টি সম্প্রতি উদঘাটন হয়েছে। আমরা টিকটক ও লাইকি’তে নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। আমরা মনে করি এসব প্লাটফরম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। আমরা শুধু তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারি।
টিকটকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এটাই প্রথম কোনো পদক্ষেপ নয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে টিকটকে প্রবেশ ব্লক করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। ২০২০ সালের আগস্টে এই মাধ্যম থেকে কর্তৃপক্ষ ১০টি ভিডিও মুছে দেয়। এসব ভিডিও দেশের ভিতর থেকে আপলোড করা হয়েছিল।
বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে টিকটক। ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে চীনের ভিডিও শেয়ারিং এই প্লাটফরম ব্যবহার করেন প্রায় ৭০ কোটি মানুষ। এর ব্যবসায়িক ধারণা অন্য অ্যাপগুলোতে ফিচার যোগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। লাইকি অ্যাপও বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছ। এই অ্যাপটি বিশ্বে ব্যবহার করেন কমপক্ষে ১৫ কোটি মানুষ।
টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভের মতো প্লাটফরম যুবসমাজের ক্ষতি করছে মর্মে এসব অ্যাপ বন্ধ করে দিকে গত ডিসেম্বরে হাইকোর্টের আছে একটি রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশে বন্ধ রয়েছে টিকটক।
কর্তৃপক্ষ পর্নোগ্রাফি, অসামঞ্জস্য কন্টেন্ট এবং ধর্ম অবমাননাকর কন্টেন্টের জন্য ২০১৮ সালের জুলাইয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ করে টিকটক। কিন্তু এই অ্যাপের পক্ষ থেকে সেখানে কন্টেন্ট সেন্সর করতে ২০ জন স্টাফকে মোতায়েন করা হবে- এমন ঘোষণা দেয়ার পর নিষেধাজ্ঞার ৮ দিন পরে তুলে নেয়া হয়।
পাকিস্তানেও টিকটক অস্থায়ী সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। টিকটক তাদের অ্যাপ থেকে আপত্তিকর কন্টেন্ট মুছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২৯ শে জুন থেকে ভারতে টিকটক বন্ধ আছে।
বাংলাদেশেও কি নিষিদ্ধ হবে?
তিনি মনে করেন টিকটক বা লাইকি’র মতো অ্যাপের বিরুদ্ধে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে তা এখন আর কাজে আসবে না। কারণ, জনগণ ভিপিএনের সাহায্য নিয়ে এসব অ্যাপের নাগাল পেয়ে যায় সহজেই।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওমেন লয়ার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং মনিটরিং সেলের উপদেষ্টা সালমা আলি বলেছেন, ঢাকা ভিত্তিক মেয়েদের ভারত পাচারের বিষয়টিকে একটি ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
Leave a Reply