———————–
নোয়াখালীতে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে ওঠছে কিশোর গ্যাং। সংঘটিত হচ্ছে খুনের মতো ঘটনা। এ ছাড়াও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। একে অপরের ক্ষমতা দেখাতে কয়েক জন মিলে পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন নামে গ্যাং-গ্রুপ গড়ে তুলছে।
আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, মাদক ও প্রেম নিয়ে বিরোধের জেরে তারা অহরহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অর্থের বিনিময়ে অর্থদাতার প্রতিপক্ষের ওপরও আক্রমণ চালাচ্ছে ওঠতি বয়সি ছেলেরা। এমনকি কিছু অর্থের বিনিময়ে খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়ছে তারা।
কিশোর গ্যাংয়ের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। নিজেদের আধিপত্য প্রকাশ করতে তারা পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছে। নোয়াখালীতে খুনোখুনিতে কিশোর ও তরুণদের ব্যবহারের ঘটনাও বাড়ছে।
আবার, তারা স্থানীয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই জেলা শহরের কোনো না কোনো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কোনো না কোনো অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তাদের ভয়ে রীতিমতো স্কুল-কলেজে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে অনেক ছাত্রীও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহরের মাইজদী বাজার, নাপিতের পোল, হাসপাতাল রোড়, সিএসজি স্ট্যান্ড, নোয়াখালী সুপার মার্কেট, মাইজদী কোর্ট স্টেশন, হরিনারায়ণপুর, দত্তের হাট, উত্তর সোনাপুর, সোনাপুর কলেজ মোড়, সোনাপুর সুপার মার্কেট, কাঠপট্রি, কালিতারাসহ বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডারস্থল। মাদক সেবন, স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উক্ত্যক্ত করা, উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল চালানো, হর্ন বাজানো, ‘বড় ভাই’দের নির্দেশে মারধর করাসহ প্রতিনিয়ত তারা নানা অনৈতিক কার্যক্রম করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধে জড়িত কিশোরদের বিরাট অংশ নিম্নবিত্ত পরিবারের। তবে উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোরদেরও এখন ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
একজন শিক্ষক বলেন, নোয়াখালীতে এখন বড় সমস্যা কিশোর গ্যাং। পরিবারকে জানতে হবে তার ছেলে বা মেয়ে কার সঙ্গে মেশে, কখন কী করে, কোথায় যায় এটা পিতা-মাতার দায়িত্ব।
নোয়াখালী জজ কোর্টের এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভূঁঞা বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। এ বিষয়ে সন্তানদের ওপর বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের নজরদারি রাখা খুব জরুরি।
জেলা পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম বলেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার মানুষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে কিশোর অপরাধ হ্রাস করা সম্ভব। আশা করি, নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব বেশি দিন থাকবে না।
Leave a Reply