৯৯৯, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ১ বছরে ১০২৮ ফোন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
  • 146 পাঠক

ডেস্ক, দৈনিক দিশারী

——————
নারী নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবায় প্রতিদিন ফোন আসে ৪শ’টির বেশি। এরমধ্যে স্বামীর হাতে নির্যাতনের সংখ্যাই বেশি। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ফোন কল এসেছে ১,০২৮টি। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ফোন কল এসেছে ২ হাজার ৫৫৬টি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি এসওএস বাটন অ্যাপস ৯৯৯-এ চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে বাকপ্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়বে। অ্যাপসটির মাধ্যমে সংয়ক্রিয়ভাবে ৫ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে এবং ভিডিওটি ৯৯৯-এর কাছে চলে আসবে।

জাতীয় জরুরি সেবার তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ফোন কল পেয়েছেন ১০২৮টি, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৫৩০টি, যৌন নির্যাতনের কল পেয়েছেন ২,৫৫৬টি, নারী নির্যাতনের কল পেয়েছেন ১৭ হাজার ৫৭৮টি, মোট নির্যাতনের কল পেয়েছেন ২১ হাজার ৭১২টি। গত ৫ বছরে ২ হাজার ৯৮৪টি ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ফোন কল এসেছে। চট্টগ্রামের ইপিজেড থানাধীন কাজীর গলি থেকে ২৪শে আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় একজন বাবা জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন করে জানান, তার ৭ বছর বয়সী মেয়েকে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক ধর্ষণ করেছে।ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানেই অবস্থান করছে।

দ্রুত আইনি সহায়তার জন্য ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে অনুরোধ জানান। ৯৯৯ এর কলটেকার কনস্টেবল সৌমিত মৈত্র ফোন কলটি রিসিভ করেন। সংবাদ পেয়ে ইপিজেড থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক মামুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। ভুক্তভোগী শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ইপিজেড থানা পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় জরুরি সেবা এখন মানুষের ভরসা হয়ে ওঠছে। পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, সাইবার অপরাধ, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোনো বিপদে মুহূর্তের মধ্যে সাড়া দিচ্ছে ৯৯৯।

জাতীয় জরুরি সেবার তথ্যনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় জরুরি সেবায় সারা দেশ থেকে ৪ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৮৩টি কল এসেছে। এরমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই নভেম্বর পর্যন্ত অহেতুক কল এসেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৯০টি। এসব কলের মধ্যে মিসকল দিয়েছে ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৮৫টি। ব্লাংক কল এসেছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ৩০৯টি। এরমধ্যে পুলিশি সহায়তা পেতে কল এসেছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৩টি। এ ছাড়া চলতি বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯৩ হাজার ৫৯০টি, এম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ১ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫টি কল আসে।

জরুরি সেবার জন্য ফোন এসেছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৯টি। নারীদের ফোনের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২১৬টি এবং শিশুদের ৯ লাখ ৫২ হাজার ৮০৪টি ফোন কল। ৯৯৯ দেশের যেকোনো জায়গায় ২৪ ঘণ্টা নাগরিকের জরুরি মুহূর্তে ও প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এম্বুলেন্স সেবা প্রদানে সবসময় প্রস্তুত থাকে।

এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে কাজ করছেন সাড়ে ৪শ’ জন কর্মী। এখন একসঙ্গে ফোনদাতাদের ১০০টি ফোন গ্রহণ করতে পারে সংস্থাটি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশিক্ষক পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার মানবজমিনকে বলেন, যে বিষয়গুলোতে আমরা সবচেয়ে বেশি কল পেয়ে থাকি তা হলো নারী নির্যাতনের। নারী নির্যাতনের অনেকগুলো সাব-ইভেন্ট আছে তারমধ্যে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং। ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি অ্যাপস চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে বাকপ্রতিন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়বে। কোনো বাকপ্রতিবন্ধী নারী ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির শিকার হলে ওই মুহূর্তে ফোন করে তার বিপদের কথা বলার মতো পরিস্থিতি অনেক সময় থাকে না। ওই সমস্ত ক্ষেত্রে তারা অ্যাপসটির সহায়তা নিলে সংয়ক্রিয়ভাবে ৫ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে এবং ভিডিওটি ৯৯৯-এ চলে আসবে। এই অনুযায়ী ৯৯৯ তাদের দ্রুত সহায়তা করতে পারবে।

সেবাটির সঙ্গে চলতি মাস থেকেই অটোমেটিক লোকেশন সিস্টেমটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। অটোমেটিক কলার লোকেশনের মাধ্যমে কলদাতার অবস্থান জানতে পারলে আমাদের সেবা দিতে আরও সুবিধা হবে। তিনি বলেন, এ ছাড়াও ৯৯৯ এ ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২২-২৩ হাজার সেবা গ্রহীতার ফোন কল আসে। প্রতিদিন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় ফোনদাতার দেয়া ঠিকানায় গিয়ে কিছুই পাওয়া যায় না। দিনে ব্লাঙ্ক কল আসে (ভুতুরে) ২০ থেকে ৫০টা। মানুষ কিছু বিষয় নিয়ে বেশি ফোন করে। সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ, মারামারি, এম্বুলেন্স, চুরি, আত্মহত্যা ও জায়গা-জমি সংক্রান্ত।

আমাদের কাছে সেবা না চেয়ে অযাচিত যে ফোন আসে তাতে আমরা বিরক্ত হচ্ছি সেটি নয়, তবে এটি আমাদের সেবাকে বিঘ্নিত করছে সন্দেহ নেই। যখন এই ফোনগুলো রিসিভ করা হয় তখন লাইন ব্যস্ত থাকে। এই সময়টাতে তো অগ্নিকাণ্ড বা অনেক বড় কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তাদেরকে আমরা এই মুহূর্তে সেবা দেবো কীভাবে? ফোন করে সেবা না চেয়ে উল্টাপাল্টা কথা ও গালাগাল করে এটাও কিন্তু বিভ্রান্তকর। তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে এই ধরনের অযাচিত কলের সংখ্যা আরও অনেক বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমেছে।

এই বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার। প্রতিদিন অনেক শিশু ফোন দিয়ে চেঁচামেচি করে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত। একটার পর একটা মিস্‌ড কল দেয়ার সংখ্যাও অনেক। এ

কই নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসলে তাদের কিছুদিনের জন্য ব্লক করে রাখা হয়। এরআগে তাদেরকে মেসেজ দিয়ে সতর্ক করা হয়। এই ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!