দিশারী রিপোর্ট
————
যশোরের শার্শা । দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ বেলতলা আমবাজার। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সেখানে আমের ব্যাপক বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে বাজারের গোডাউনগুলোতে এখন রাসায়নিক কেমিক্যাল (ইন্ডিয়ান স্প্রে) দিয়ে আম পাকানোর মহোৎসব চলছে। কৃত্রিম উপায়ে আমের গায়ে দেয়া হচ্ছে পাকা রঙের প্রলেপ। আর কেমিক্যালযুক্ত এসব আম কিনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ ভোক্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের মো. জিনারুল বেপারি, জালাল বেপারি ও কিরণ বেপারিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী কেমিক্যাল স্প্রে দিয়ে আম পাকাচ্ছেন। স্প্রে করার ১৫-২০ ঘণ্টার মধ্যেই কাঁচা আমের গায়ে রং পড়ে সেগুলো পাকা আমে পরিণত হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বেশি লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে কেমিক্যাল স্প্রে করে আম পাকিয়ে বাজারজাত করছে। এতে আমের বিশুদ্ধতা ও প্রকৃত স্বাদ নষ্ট হচ্ছে। এভাবে মূলত ভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে। তারা ব্যাপকভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। স্প্রে দিয়ে পাকানো এসব আম খেয়ে ফলটির প্রকৃত স্বাদই ভুলে গেছেন তারা। সেই সঙ্গে বিষাক্ত এসব আম খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশ-বিদেশে যশোর তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাগআঁচড়া বেলতলা বাজারের আমের সুনাম রয়েছে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর কারণে সেই সুনাম আজ নষ্ট হতে চলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিদেশে আম রপ্তানি করে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় দেশ। তাই এ ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষকদের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। আমের যথাযথ মান নিশ্চিতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে তা সংগ্রহ করতে নিষেধ করা হয়েছে তাদের।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যেকোনো পণ্যেরই বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি। এখন আমের মৌসুম। এ সময়ে দেশ থেকে বিষমুক্ত আম সরবরাহ না করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই এ বিষয়ে অচিরেই বাজার মনিটরিং করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এবার বিদেশে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হবে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে ব্যবসায়ী মো. জিনারুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আমরা আমে স্প্রে করে থাকি।’
একই কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সব ঘরেই তো স্প্রে দিয়ে আম পাকাচ্ছে। সবাই যেভাবে পাকাচ্ছে, আমিও সেভাবেই আম পাকাচ্ছি।’
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) লক্ষিনদার বলেন, ‘আম পাকানোর জন্য সরকার-নির্ধারিত স্প্রে ছাড়া অন্য যেসব কেমিক্যাল দেয়া হয়, সেগুলো অবশ্যই মানবদেহের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।’
শার্শা উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শেফালী খাতুন বলেন, ‘বেলতলা আমের আড়তে কাঁচা আম পাকানোর জন্য কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করে কি না, সেটা আমার জানা নেই। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো বিষয় সামনে এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রতাপ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয়ে বাজার মনিটরিং করছি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি আম কেনাবেচা বা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিভিন্ন অনিয়ম তদারকি করছে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি আমে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply