সম্পাদকীয়
———–
গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়ার চর্চা। শুধু নোয়াখালী নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামীণ এলাকায় একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
এখন আর সন্ধ্যের পর একজনের পড়া শুনে আরেকজন পাল্লা দিয়ে বই পড়ে না। কোনো মা-বাবা তাঁর সন্তানকেও বলেন না যে অমুকের পড়ার আওয়াজ শোনা যায়, আর তুই বসে আছিস ! অথচ ৮ থেকে ১০ বছর আগেও সন্ধ্যের পর চারপাশ থেকে বিভিন্ন স্বরে বই পড়ার আওয়াজ শোনা যেত। পরীক্ষা কাছাকাছি থাকলে তো কথাই নেই। কোনো সহপাঠী বন্ধু দিনে ও রাতে কতক্ষণ পড়ালেখা করে, গোপনে খোঁজ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা হতো। সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটিও দিনে বা রাতে কিছুটা সময় হলেও পড়তে বসত। যেকোনো বোর্ড পরীক্ষার আগে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ার চর্চাটাও আর নেই। এ চর্চার জন্যই অ্যালার্ম ঘড়ির আলাদা একটা কদর ছিল।
পাঠ্যবই ছাড়াও বোর্ড পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের দেয়া নোট, নিজের বা বন্ধুদের বানানো নোট, বাজারের ভালো মানের গাইড বইয়ের খুব কদর ছিল। সেগুলো সংগ্রহ করে পড়াশোনা চলতো। আগের বছর পাস করা ভাইবোনদের কাছে সাজেশনস বা পরামর্শ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলতো।
মাত্র ৮ থেকে ১০ বছরের ব্যবধানে সবই প্রায় বিলীন হয়ে গেল। সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের বাজারে তো দূরের কথা, ঘরের বাইরে দেখলেই সবাই অবাক হতো, শাসন করত। আর এখন বাড়ি গেলে দেখি, অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেরা বাজারে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। সন্ধ্যের পর এখন দল বেঁধে ছাত্ররা মুঠোফোনে ব্যস্ত। কোথাও কোনো পড়ার শব্দ নেই। গ্রুপ চ্যাটিং, অনলাইন বা অফলাইন গেমস, পাবজি, ফ্রি ফায়ার, টিকটক, পাড়া-মহল্লায় ও বাজারে আড্ডাবাজি, গ্রুপিং করা, শিক্ষকদের অসম্মান করা এখন তাদের পছন্দের তালিকায়।
বলা হয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা শিক্ষার্থীরা ওঠে আসে গ্রাম ও মফস্বল শহর থেকে। এখন গ্রামের শিক্ষার্থীদের যদি এ হাল হয়, ভবিষ্যতে একটি শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণ প্রজন্ম পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের শঙ্কিত হতে হয়।
Leave a Reply