অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পলেথিন বাজারজাত

  • আপডেট সময় রবিবার, আগস্ট ৬, ২০২৩
  • 146 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ০৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিনমুক্ত নোয়াখালী  গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সজাগ রয়েছে জেলা প্রশাসন। তারও আগে থেকে পলিথিন নির্মূলে মাঠে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত অভিযানের পরও বাস্তবতা হচ্ছে, নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ হচ্ছে। অভিযানগুলো গুদাম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কারাখানা বা পলিথিনের উৎপাদন পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোনও অভিযান পরিচালিত হয়নি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পলিথিন নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

নোয়াখালীতে নিষিদ্ধ পলেথিন ব্যবহারে পঞ্চপান্ডবদের বখরা দিয়েই কারখানাগুলোতে পলেথিন উৎপাদন করছে অভিযোগ ওঠেছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে চৌমুহনীতে। আবার এসব পলেথিন চৌমুহনী বাণিজ্য বিতান মার্কেটের নিচতলায় সাঁটিহাটা যোগীতে শতাধিক গুদাম রয়েছে। এসব গুদাম থেকে পলেথিন বিভিন্ন উপজেলা ও জেলাতে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এসব কারখানায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন।

জানা যায়, মাসিক অর্থ নেয়া এসব পঞ্চপান্ডবদের বখরার একাংশ যাচ্ছে প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তার হাতে। অপর অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে, অন্য অংশ কথিত সাংবাদিক পরিচয়কারীদের মাসিক খামে, অপর অংশ নিষিদ্ধ পলেথিন সমিতি কাছে বাকি অংশ পলেথিন নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট চক্রের কাছে।

এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা বন্ধ করতে কি ভূমিকা রাখছে জনমনে নানা সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দিছে। পঞ্চপান্ডবের কাছে কি তাহলে প্রশাসন অসহায়! নাকি টাকার কাছে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে চলছে নিষিদ্ধ পলেথিন কারখানা চলছে সাধারণ মানুষ বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবেই দেখছে।

এছাড়াও চৌমুহনীসহ বিভিন্ন স্থানে গোপনে গড়ে তোলা হয়েছে নিষিদ্ধ পলেথিনের কারখানা। এসব কারখানা থেকে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে দৈনিক লাখ লাখ টাকার নিষিদ্ধ পলিথিন। যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও কাঁচাবাজারে। এমন এলাকা পাওয়া দুষ্কর যেখানে পলেথিন ব্যাগের ব্যবহার নেই। এর ব্যবহার চলছে দেদারছে।

শহর কিংবা গ্রামের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই, সব জায়গায় ক্রেতারা বাজার করতে যায় খালি হাতে। আর ফিরে আসে পলেথিনের ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নিষিদ্ধ পলেথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন।

তবে নিয়মিত অভিযান না থাকায় পলেথিনের বিক্রি ও ব্যবহার আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে গেছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। চৌমুহনীতে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলেথিন ব্যাগ। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে পলেথিন ব্যাগ দেদারছে ব্যবহার করছেন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, নিষিদ্ধ পলেথিন ব্যবহারে শাস্তির বিধান রেখে আইন করা হলেও কমেনি পলেথিন ব্যাগের ব্যবহার। পলেথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারে পরিবেশের তির কথা চিন্তা করে ২০০২ সালে পলেথিন নিষিদ্ধ করা হয়। তখন বিকল্প হিসেবে কাগজ ও পাটের ব্যাগের প্রচলন শুরু হয়।

পরবর্তী সময়ে আইনের প্রয়োগ না থাকায় পলেথিন বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েছে জ্যামিতিকহারে। পলেথিন ব্যাগ বন্ধের আইন ও বিধিমালা রয়েছে। যারা এটা কার্যকর করবে তারা এটা করছে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযান না চলার কারণে প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে পলেথিন।

অভিযান বিষয়ে জানা যায়, গেলো বছর ২০২২ সালের ১৬ মার্চে চৌমুহনী দক্ষিণ বাজারের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে একটি অবৈধ পলেথিন কারখানাকে ২ লাখ টাকা অর্থদন্ড করেছিল বেগমগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান চৌধুরী। পরের মাসে (২৫ এপ্রিল) সোমবারে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামসুন্নাহার চৌমুহনী বিসিকে নিষিদ্ধ পলেথিন তৈরির করার অভিযোগে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এসপি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানাকে ১ লাখ টাকা, ভাই ভাই প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংকে ১ লাখ ও আল মদিনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানাকে ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করে। কিন্তু অভিযান পরবর্তী কারখানাগুলো ফের নিষিদ্ধ পলেথিন তৈরি করছে প্রশাসনের নাগের ডগায়।

অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, চৌমুহনী শ্রী শ্রী রামঠাকুর মন্দিও গেটের পূর্ব গলিতে একটি পলেথিন কারখানা রয়েছে। চলে নিষিদ্ধ পলেথিন তৈরি। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমতি।

জানা গেছে, প্রশাসন অভিযান দিয়ে জরিমানা করে টাকা নিয়ে যায়। গোপনে পলেথিন তৈরি তারা। সব জায়গায় তৈরি হলে এখানে উৎপাদন হতে সমস্যা নেই তাদের। এসব নিয়ে নিউজ করে কোনো লাভ নেই বলেও মন্তব্য করেন এক মালিক।

অপরদিকে চৌরাস্তা বিসিক নগরীর ভেতরে কয়েকটি নিষিদ্ধ পলেথিন কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ গোলাবাড়িয়াও কয়েকটি নিষিদ্ধ পলেথিন কারখানা রয়েছে। সিলগালা না করায় অভিযানের পর ফের চালু করে পলেথিন তৈরি করে এসব কারখানা। অনেকের মতে প্রভাবশালী ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নাকি চলে এসব কারখানা।

বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ (এক) বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড (জরিমানা) বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদন্ড বা ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদন্ড (জরিমানা) বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন অপরাধীরা।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সামগ্রী উৎপাদন, বিক্রয় ইত্যাদির উপর বাধা-নিষেধ’ শীর্ষক আইনের ৬ (ক) ধারায় বলা হয়, সরকার মহাপরিচালকের পরামর্শ বা অন্য কোনোভাবে যদি সন্তোষ্ট হয় যে সকল বা যেকোনো ধরনের পলেথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি অন্য কোনো সামগ্রী বা অন্য যেকোনো সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তাহলে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে সারাদেশে বা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এ ধরনের সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বা প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত শর্তাধীনে ওই সকল কার্যক্রম পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্দেশ জারি করতে পারবে এবং ওই নির্দেশ পালনে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি বাধ্য থাকবেন। তখন শর্ত থাকে যে, ওই নির্দেশে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

ওই প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত সামগ্রী রফতানি করা হলে বা রফতানি কাজে ব্যবহৃত হলে, কোনো নির্দিষ্ট পলিথিন শপিং ব্যাগের ক্ষেত্রে ওই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না মর্মে ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হলে। পলেথিন শপিং ব্যাগ’ বলতে বোঝানো হয়েছে পলিইথাইলিন, পলিপ্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোনো ব্যাগ, ঠোঙ্গা বা অন্য কোনো ধারক যা কোনো সামগ্রী কেনা-বেচা বা কোনো কিছু রাখা বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায়। নিষিদ্ধ পলেথিনের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, যদিও এ অপরাধ বন্ধে সচেতনতারই বেশি দরকার,তবুও আইনের প্রয়োগও বাড়াতে হবে। কিন্তু বর্তমানে নিষিদ্ধ পলেথিন উৎপাদন, প্রকাশ্যে পলেথিনের ব্যবহার হলেও এ আইনের কোনো যথার্থ প্রয়োগ নেই।

নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার নিয়ে স্বাস্থ্যবিদরা কি বলছেন : পলেথিন বর্তমান সময়ে অপরিহার্য উপাদান। প্রায় সব জায়গাতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। পলেথিনে খাবার সংগ্রহ করে তা গ্রহণের ফলে মানব শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগ। বর্তমানে ছোট-বড় সব ধরনের হোটেল বা রেস্তোরাঁতে দেখা যায় পলেথিনের ব্যবহার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পলেথিনে গরম খাবার ঢালার সঙ্গে সঙ্গে বিসফেলন-এ তৈরি হয়। বিসফেলন-এ থাইরয়েড হরমোনকে বাধা দেয়, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। বিসলেন-এ গর্ভবতী নারীর রক্তের মাধ্যমে ভ্রূণে চলে যাওয়ার কারণে ভ্রূণ নষ্ট হতে পারে এবং দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব।
সদ্যোজাত শিশুও বিকলাঙ্গ হতে পারে। পলিথিনের ব্যাগে করে ফ্রিজে রেখে দেয়া খাবার গ্রহণ করলেও সমান তি হতে থাকে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নোয়াখালী জেলার সহ-পরিচালক বলেন, নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মূল ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টিয়ে ভ্রাম্যমাণভাবে পলেথিন উৎপাদন করছে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!