৩ হাজার ৯৯৪ কিলোমিটার মহাসড়কে বসছে সিসি ক্যামেরা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, আগস্ট ৮, ২০২৩
  • 99 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ০৮ আগস্ট ২০২৩।

ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আসছে দেশের ৩ হাজার ৯৯৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক। বিশেষ এ সেন্সরযুক্ত ক্যামেরায় যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট গতিসীমা ক্রস করা যানবাহনের নামে ভিডিও মামলা দেয়ার সুবিধা রয়েছে।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭২টি নতুন হাইওয়ে থানার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি একই সঙ্গে জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যানবাহন বন্ধে জোরালো অভিযানও চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, মহাসড়কে শৃঙ্খলা আরও উন্নতি করতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। পুলিশ সদর দপ্তর আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। সারা দেশের মহাসড়কগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ওই ক্যামেরার মাধ্যেমে সব যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো যানবাহন যদি গতিসীমা ক্রস করে তাহলে তাৎক্ষণিক শনাক্ত করে ওই যানবাহনের নামে ভিডিও মামলা দেয়া হবে এবং তার কাগজপত্রে থাকা ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হবে। সেখানে মামলার কারণ উল্লেখ থাকবে। প্রয়োজনে অপরাধের ধরন যানবাহনের মালিক নিজেই তার মোবাইল ফোনে দেখতে পাবেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ক্যামেরা বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কেও শিগগিরই ক্যামেরা বসবে আশা করছি। সড়কে যেসব যান আইন অমান্য করবে সহজেই তারা আইনের আওতায় আসবে। এ ছাড়া মহাসড়কে যান চলাচল আরও মসৃণ করতে নতুন করে ৭২টি থানার প্রস্তাব করা হয়েছে। আসা করা যাচ্ছে দ্রুতই তা অনুমোদন পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমান ৯৬টি জাতীয় মহাসড়কের পরিধি ৩,৯৯৪ কিলোমিটার ও ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়কের পরিধি ৪৮৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া জেলা সড়ক রয়েছে ১৩,৫৯২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সব থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে জাতীয় মহাসড়কে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এ সড়কে অবাধে ত্রি-হুইলার যানবাহনের চলাচল, বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ বিচরণ। এ কারণে দেশের মহাসড়কে তথা হাইওয়েতে নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পুলিশের বিশেষ ইউনিট ‘হাইওয়ে পুলিশ’ বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সব মহাসড়ক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো। এই ক্যামেরায় ১ মাস পর্যন্ত ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

সূত্রমতে, এরইমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও খুলনা মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। পর্যায়ক্রমে বাকি সড়কগুলোতেও কাজ শুরু হবে। এক বছরের মধ্যে মহাসড়কের আনাচে-কানাচে ক্যামেরার আওতায় আসবে। যেসব সড়কে সিসি ক্যামেরা থাকবে, সেখানে কোনো গাড়ি আইন অমান্য করলে সেটির নম্বর প্লেট কন্ট্রোল রুমে সিসি ক্যামেরার পর্দায় (স্ক্রিনে) ভেসে ওঠবে। ফলে ‘অটোমেটিক ডিটেকশন ব্যবস্থা’ ব্যবস্থায় গাড়িগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলার আওতায় আসবে। এরপর ঠিকানা যাচাই-বাছাই হওয়ার পর মামলার কাগজপত্র চলে যাবে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায়। এসব বিষয়ে তদারকির জন্য প্রতিটি জোনে বসানো হবে আলাদা আলাদা কন্ট্রোল রুম। একই সঙ্গে বিষয়গুলো আরও তদারকির জন্য নতুন করে ৭২টি হাইওয়ে থানা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এডিপির অর্থায়নে প্রস্তাবিত থানাগুলো হচ্ছে— কক্সাবাজারের মেরিন ড্রাইভ, সাবরাং, মহেশপুর, রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, বান্দরবানের চিম্বুক, নীলাচল, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, নওগাঁর মান্দা, পত্নীতলা, নওহাটা, বগুড়ার মহাস্থানগড়, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, জয়পুরহাটের কালাই, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, রংপুরের কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের নাগেরশ্বরী, লালমনিরহাটের সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, দিনাজপুর সদর, ঘোড়াঘাট, ঠাকুরগাঁও সদর, নীলফামারীর জলঢাকা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী, টাঙ্গাইলের নাগরপুর, এলেঙ্গা, গাজীপুরের চন্দ্রা, নরসিংদীর ঘোড়াশাল, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ, মুক্তাগাছা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, শেরপুরের গৌড়দ্বার, ফরিদপুরের মুন্সিবাজার, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, শরীয়তপুরের জাজিরা, বাগেরহাটের মোল্লাহাট, খানজাহান আলী, মোংলা, সাতক্ষীরার সদর, ঝিনাইদহের আরাপপুর, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়ার গড়াই, চুয়াডাঙ্গার সদর, দর্শনা, মেহেরপুর সদর, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, যশোরের খাজুরা, পিরোজপুর সদর, ঝালকাঠির গাবখান, দপদপিয়া, ভোলার বাংলাবাজার, চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর পায়রা, লেবুখালী, কুয়াকাটা, বরগুনার আমতলী, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, সিলেটের চারখাই, ফেঞ্চুগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ, হবিগঞ্জের মাধবপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দাবাদ।

সিসি ক্যামেরার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হওয়ার পর অটোমেটিক নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ, যানবাহনের গতিপথ নির্ধারণ, হাইস্পিড ডিটেকশন ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যান দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ক্যামেরা স্থাপিত হলে অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায়ও রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনের নম্বর প্লেটের স্পষ্ট ছবি ধারণ ও সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকবে। কোথাও কোনো ঝামেলা বা অপরাধের কারণে লোকসমাগম বেশি হলে মনিটরিং সেলে আগাম সংকেত চলে আসবে। আইন অমান্য করার পর পুলিশ না ধরলেও সমস্যা নেই। যানবাহনের ঠিকানায় মামলার কাগজপত্র চলে যাবে। মামলার তথ্য চলে যাবে যানবাহনের মালিকের মোবাইলেও। বিভিন্ন উন্নত দেশে এভাবেই যানবাহনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কয়েকটি পুলিশ স্টেশনে সিসিটিভির কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর ও হাইওয়ে পুলিশের সদর দপ্তরেও আলাদাভাবে কন্ট্রোল রুম থাকবে। টমটম-নছিমনসহ ত্রি-হুইলার যানবাহন মহাসড়কে উঠলেই তা সংক্রিয় সিগন্যাল পাবে কন্ট্রোল রুম। এরপর ওই এলাকায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হবে। এবং ওই কর্মকর্তা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এ ধরনের যানবাহানের বিরুদ্ধে ডাম্পিং করার নির্দেশনা থাকবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, প্রথমিক পর্যায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসানো সিসি ক্যামেরা কার্যক্রমকে টেস্ট হিসাবে নেয়া হয়েছে। এ মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়াতে চারটি জোন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম জোন। এসব জোনের ২৫০ কিলোমিটারজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। চারটি জোনে ১৪২৭টি সিসি ক্যামেরা বসছে। এসবের মধ্যে লং ভিশন পিটিজেড ডোম ক্যামেরা ১৬টি, পিটিজেড ডোম ক্যামেরা ৪৭১টি, বুলেট ক্যামেরা ৯২৪টি ও চেক পয়েন্ট ক্যামেরা ১৬টি। বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেমসহ ৪৯০টি ক্যামেরার পোল রয়েছে। পাশাপাশি ১টি সেন্ট্রাল কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ৫টি মনিটরিং সেন্টার, ৫ পেটাবাইটের ডেটা সেন্টার, ডেটা সেন্টারের মডিউলার সিস্টেম (এসিসহ), নেটওয়ার্ক সিস্টেম, ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভিপিও অ্যানালাইসিস সিস্টেম ও অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন সিস্টেম রয়েছে। এ সুবিধাগুলো অন্য মহাসড়কগুলোর সিসি ক্যামেরায়ও রাখা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কারণেই মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা নিয়মিত নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা পায়। চাঁদার ভাগ কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জেলা-উপজেলার রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে যায়। বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে চিরতরে এসব যান চলাচল বন্ধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। এবং জোরালো অভিযান চালাতে হাইওয়ে পুলিশকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচ আর এন্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম বলেন, দেশের বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে— বেপরোয়া গতি, ত্রি-হুইলার যানবাহন ও ফিটনেসবিহীন যানবহনের কারণে। প্রতিটি দুর্ঘটনায়ই একটি পরিবার অকল্পনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ কারণে দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানো, জাতীয় মহাসড়কে ত্রি-হুইলার বন্ধ করার উদ্যোগ রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মহাসড়কের চিত্র অনেকটাই বদলিয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে আসা করা হচ্ছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!