দিশারী ডেস্ক। ১৮ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
কার্যনির্বাহী পরিষদের অপূর্ণাঙ্গতায় জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলছে অনেকটাই দায়সারাগোছে।নোয়াখালী আওয়ামী লীগের তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
অপরদিকে, জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আদৌ কোন কমিটি নেই। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি জেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগেও।
২০২২ সালের শেষ দিকে নোয়াখালী শহরের শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে সভাপতি পদে ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি ওই সম্মেলনে স্বল্পসময়ের মধ্যে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলে সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদপ্রত্যাশীদের প্রত্যাশার মিমাংসা করারও আশ্বাস দেন।
এর মাত্র ক’মাস পর একপর্যায়ে, তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্যাডে। যাতে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক ও এ পদের অপর প্রার্থী এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মনোনীত করা হয়।
এরপর গত হয়ে বেশ কয়েক মাস। কখনো রোজার পরে, কখনো কোরবানের পরে কমিটি আসার নানা গল্প গুজব আওয়ামী রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন ছড়ালেও আজও ঠিক হয়নি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ সংসার।
সূত্র জানায়, পুরোনো গ্রুপিং সংস্কৃতি টিকে রাখার দূরদর্শিতায় কমিটিতে বিভিন্ন পদে নিজ নিজ অনুসারীদের ঠাঁই দেয়ার চেষ্টা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক ক’জন নেতা। স্বস্ব বলয়ের লোকজন নিয়ে কমিটি গঠনের চিন্তা চেতনার দুরত্বে ওই তিন নেতাও একটি পূর্ণাঙ্গ, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও প্রকৃত জনবান্ধব আওয়ামী নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের বাস্তবতায় এক হতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, জেলার সাবেক ও হালকালের শীর্ষ নেতারা স্বস্ব বলয় বাড়াতে এমনদের ঠাঁই দিতে চান ; যাদের পেছনে ২জন কর্মীও নেই।
সূত্র জানায়, তিন নেতার অন্যতম সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল ও শিহাব উদ্দিন শাহীনই নিজ-নিজ অনুসারীদের নিয়েই কমিটি গঠন করতে চাওয়ায় কমিটি গঠনে বেগ পেতে হচ্ছে খায়রুল আনম সেলিমকেও। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দু’জনের ভাবদুরত্বে খায়রুল আনম সেলিমও রাজনীতি করছেন অনেকটাই ধরি মাছ না ছুঁই পানির ন্যায়।
এদিকে আওয়ামী রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন রয়েছে, পৌরমেয়র সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর মধ্যে ফের বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের খবর রয়েছে। যে খবর ভাল চোখে নেননি দলের জেলার অভিভাবকখ্যাত শীর্ষমহল।
অবশ্য এমন খবর উড়িয়ে দেন মেয়র সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল। বলেন, দলের কেহ আমার সাথে কোন বিষয়ে যোগাযোগ করলে সৌজন্যতার খাতিরে কথা বলতেই পারি। কিন্তু, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকেই স্বস্ব অবস্থান বজায় রেখেই তো রাজনীতি করছি।
এছাড়া এ মূহুর্তে দলের পদ প্রত্যাশী কেহ জেলা কমিটি হতে বাদ পড়লে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন দলের এই শীর্ষ নের্তৃত্ব। যে কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দু’বার নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে উপস্থিত হলেও জেলা কমিটি নিয়ে কোন কথাই বলেননি শীর্ষ শীর্ষ নের্তৃত্ব।
ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ার কোন লক্ষণ আপাতত নেই বলে জানান দলের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল স্বস্ব অবস্থান থেকে বলেছেন, সহসায় কমিটি আসবে। তাঁরা দাবি করেন, নিজেদের মধ্যে কোন গ্রুপিং নেই। তাঁরা বলেন, দলে যোগ্য ও ত্যাগীদেরই অবশ্যই মূল্যায়ন হবে। তাঁরা আরো দাবি করেন , জাতীয় রাজনীতির ব্যস্থতার কারণে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
——————————————————————————————————————————————–
যুবলীগ, ছাত্রলীগের কমিটি আর কত দুর, স্বেচ্ছসেবক লীগ স্বরুপে ফিরবে কবে !
——————————————————————————————————————————————–
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির রোষানলের দুর্বিপাকে নোয়াখালী জেলা যুবলীগও সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে গেছে। প্রায় একযুগের অধিককাল ধরে আহবায়ক কমিটি দিয়েই চলছিল যুবলীগ।
যুবলীগের জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও আজও যুবলীগের মাত্র পদবিশিষ্টও কোন কমিটিই দেয়া হয়নি। জানা গেছে, যুবলীগে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক , মেয়র সহিদ উল্যাহ খাঁনেরও প্রত্যাশা রয়েছে। তারা নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে শীর্ষ পদের প্রত্যাশা রাখছেন।
যুবলীগের রাজনীতির মাঠে জেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ইমন ভট্র ও একরামুল হক বিপ্লব সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচিতি রয়েছে। ইমন ভট্র সংসদ সদস্য একরামুলের প্রায় সভা, সমাবেশে বক্তৃতা করছেন। অবশ্য এদিক থেকে দলের মধ্যে যে কোন ধরনের গ্রুপিং এড়িয়ে চলছেন একরামুল হক বিপ্লব।
আবার, নাজিম উদ্দিন ও নাজমুল আলম মঞ্জুকে ঘিরেও রয়েছে সোহেল সমর্থকদের সরগরম আলোচনা। যুবলীগের এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলা আওয়ামী নেতাদের প্রেতাত্ম রাজনীতির বিপর্যয়ে আজও কোন পদ পদবী যোগ হয়নি জেলা যুবলীগের কোন পদ প্রত্যাশীরও।
অপরদিকে, নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদের সম্মেলনে পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগৃহিত হয়েছে একাধিকবার। সেস্থলেও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের স্বস্ব চাওয়া পাওয়ার প্রত্যাশার কারণে জেলা ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতা, কর্মীদের নামের সাথেও কারো কোন পদ পদবী যোগ হয়নি। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে একেকজন, একেক নেতার অনুসারী পরিচয়ে চলছে জেলা ছাত্রলীগের রাজনৈতিক পদাচারণ।
এদিকে, গত কয়েক মাস আগে নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে মরহুম রবিউল হোসেন কচির পুত্র প্রমিত কচিকে সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ নেতা রহমত উল্যাহ ভুইয়াকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কোন পদ প্রত্যাশীদের বিষয়ে একমত হতে না পরায় তাতেও গুড়েবাালি হয়ে চলছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক রাজনীতি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা রসিকতা করে বলেন, সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবেন কোথা। তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটিই না থাকলে তৃণমূলের অবস্থা তদারকির দায়ভার কে নেবে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ্যে গঠনের দাবি জানান।তিনি বলেন, এক সিপাহী এক ঘোড়ার ন্যায় কমিটি গুলো আর মানা যায়না।
একইসাথে, আগামীর রাজনীততে ছাত্রলীগ ও লীগের রাজনীতির স্রোতধারা বেগবান ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দাবি করছেন।
Leave a Reply