সাবান ও ডিটারজেন্টের বাজারের আধিপত্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় রবিবার, আগস্ট ২০, ২০২৩
  • 99 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২০ আগস্ট, ২০২৩

দেশে বর্তমানে সাবান ও ডিটারজেন্টের বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। তবে সাবান ও ডিটারজেন্টের বাজারে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর অবস্থান এখন ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ ও উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাজারে স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নিজেদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। পণ্যে বৈচিত্র্যায়ণের মাধ্যমে সামনের দিনগুলোয় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এ বাজারে আরো বেশি অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে চাইছে।

দেশের এফএমসিজি (দ্রুত বর্ধনশীল ভোগ্যপণ্য) খাতের খাদ্যবহির্ভূত প্রধান পণ্যগুলোর অন্যতম সাবান ও ডিটারজেন্ট। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ও নগরায়ণের প্রভাবে এ পণ্য দুটির ভোগ ক্রমে বাড়ছে। কভিডকালে অ্যান্টিসেপটিক সাবানের চাহিদার গ্রাফ ছিল বেশ ঊর্ধ্বমুখী। যদিও কভিডের প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর চাহিদাও কমেছে। বছরে বাংলাদেশে ৯০ হাজার টন সাবান বিক্রি হয়ে থাকে। বৈশ্বিক ডিটারজেন্ট মার্কেটের ৩৫ শতাংশের বেশি বাজার অংশীদারত্ব এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। এ অঞ্চলের বাজারের প্রতি বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রহও এখন বাড়ছে।

দেশের সাবান ও ডিটারজেন্ট বাজারের শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পাওয়া বাজারসংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি লংকাবাংলা রিসার্চের গবেষণা প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেশের সাবান ও ডিটারজেন্ট বাজারের চিত্র পর্যালোচনা করেছে বণিক বার্তা।

দেশে বর্তমানে সাবানের বাজার আকৃতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকায়। এ বাজারে বিউটি সোপ ও অ্যান্টিসেপটিক সোপ—এ দুই ক্যাটাগরির পণ্য রয়েছে। সাবানের বাজারে জনপ্রিয় দুই ব্র্যান্ড ইউনিলিভার বাংলাদেশের লাক্স ও লাইফবয়। এর মধ্যে লাক্সের বাজার অংশীদারত্ব ২৫ শতাংশ ও লাইফবয়ের বাজার অংশীদারত্ব ২২ শতাংশ। সব মিলিয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশের বাজার অংশীদারত্বের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ।

সাবানের বাজারে ১৫ শতাংশ অংশীদারত্ব রয়েছে রেকিট বেনকিজারের ব্র্যান্ড ডেটলের। কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্র্যান্ড স্যান্ডালিনার দখলে রয়েছে ১২ শতাংশ। এছাড়া কোম্পানিটি তিব্বত ও ব্যাকট্রল ব্র্যান্ডের সাবানও বিক্রি করে থাকে। স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের মেরিল ব্র্যান্ডের সাবানের বাজার অংশীদারত্ব ৯ শতাংশ। এসিআইয়ের অ্যান্টিসেপটিক সাবান স্যাভলনের বাজার অংশীদারত্ব ৬ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে ১১ শতাংশ।

ডিটারজেন্টের বাজারের আকার বর্তমানে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এ বাজারেও রিন, হুইল ও সার্ফ এক্সেল—এ তিন ব্র্যান্ড নিয়ে শীর্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এর মধ্যে রিনের ২৯ শতাংশ, হুইলের ২৫ ও সার্ফ এক্সেলের ৯ শতাংশ বাজার অংশীদারত্ব রয়েছে।

সাবান-ডিটারজেন্টের বাজারের শীর্ষ কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কোহিনূর কেমিক্যালসের ফাস্ট ওয়াশ ও তিব্বত ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্টের দখলে রয়েছে ২০ শতাংশ বাজার। ভারতের আরএসপিএলের ডিটারজেন্ট ব্র্যান্ড ঘড়ির বাজার অংশীদারত্ব ৭ শতাংশ। স্কয়ার টয়লেট্রিজের চাকা ও সুপার হোয়াইট ব্র্যান্ডের বাজার অংশীদারত্ব ৬ শতাংশ। এছাড়া কেয়া কসমেটিকসের কেয়া লেমন ডিটারজেন্ট ও সুপার এক্সেল ডিটারজেন্টের ২ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে ২ শতাংশ বাজার।

কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ব্র্যান্ড) গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, বাংলাদেশের সাবান ও ডিটারজেন্টের বাজার অংশীদারত্বের দিক দিয়ে ইউনিলিভারের পরই কোহিনূর কেমিক্যালের অবস্থান। ক্লিনিং এজেন্ট ক্যাটাগরিতে ডিটারজেন্ট পাউডারের অংশীদারত্ব ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সাবানের বাজারের ৮০ শতাংশ বিউটি সোপ এবং বাকি ২০ শতাংশ হেলথ সোপের দখলে।

ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলেও বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাব পড়েছে সাবান ও ডিটারজেন্টের ব্যবসায়। গত বছর সাবানের মূল উপাদান সোপ নুডলসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিগুণ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাবে সাবান ও ডিটারজেন্টের দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। এতে এসব পণ্য বিক্রির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোক্তারা ভোগ কমিয়ে দিতে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে অবশ্য স্থানীয় ও বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলো পণ্যের দাম কিছুটা কমিয়েছে।

জানতে চাইলে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, স্থানীয় কোম্পানিগুলো মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে অনেক বিনিয়োগ করেছে। তাছাড়া আমরা কিন্তু বিদেশের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল আমদানি করছি। ফলে আমাদের পণ্যের গুণগত মান অনেক উন্নত হয়েছে। গ্রাহক যখন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উন্নত মানের পণ্য পাচ্ছেন, তখন তারা সেটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে দেশের সাবান ও ডিটারজেন্টের বাজারে গড়ে ১০-১৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি সামনেও অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সাবানের বাজারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সামনের দিনগুলোয় পণ্যের ক্ষেত্রে আরো অনেক বৈচিত্র্য আনতে হবে। অন্যদিকে ডিটারজেন্টের বাজারে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারত্ব ভবিষ্যতে বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!