শিক্ষার্থীদের কোচিং ব্যয়, জরুরী না ফ্যাশন !

  • আপডেট সময় শনিবার, আগস্ট ২৬, ২০২৩
  • 144 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

শিক্ষাক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপে ক্রমেই আশঙ্কাজনক হারে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যের অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার খবর সুখকর নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ স্কুল-কলেজের চেয়ে কোচিং সেন্টার-নির্ভরতা।

তথ্য মতে, এবার শুরু হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যে পরিমাণ নিয়মিত শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, সে হিসেবে বেশকিছু ঝরেও পড়েছেন। এ বিষয়ে নোয়াখালীর একজন শিক্ষাবিদ বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে অনেকেই। ফরমপূরণ করানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। রেজিস্ট্রেশনের পরও কেন শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেনা ; তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। তারা এর উত্তর দিলে তবেই জানা যাবে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ।

নোয়াখালী সরকারী কলেজের এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, তার পুত্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। কোচিং ও টিউশন ফি হিসেবে বছরপ্রতি ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকার ওপর। এ ছাড়া পরীক্ষার তিন মাস আগে স্পেশাল কোচিংয়ের জন্য গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত আরও বাড়তি টাকা। পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই আবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য কোচিংয়ে গুনতে হবে আরও টাকা।

জিলা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, তার এক সন্তান ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। এখন প্রতি মাসে তার শুধু কোচিং ও টিউশন ফি বাবদ ব্যয় হয় কয়েক হাজার টাকা। তার আরেক সন্তান পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। তার পেছনেও কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার বাবদ ব্যয় প্রতি মাসে আরো টাকা।

অভিভাবকরা জানান, এখন অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত একজন সন্তানের পেছনে প্রতি বছর গড়ে দেড় বা দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এ টাকার পুরোটাই যায় কোচিং ও টিউশন সেন্টারে। এর বাইরে আছে যাতায়াত ব্যয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ফরমপূরণ ফি।স্কুল বা কলেজে পড়ালেখা না হওয়ায় সন্তানদের কোচিং বা টিউশন সেন্টারে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা।

এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষা এখন বড়লোকদের পণ্যে পরিণত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ মাত্র যেন নিয়ম রক্ষার প্রতিষ্ঠান। সবই করতে হয় নিজ অভিভাবকদের দায়িত্বে। তিনি বলেন, সমাজের একেকজনের দেখদেখায় অন্যরাও কোচিং, প্রাইভেট বা টিউশনী শিক্ষাকে নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য জরুরী হওয়ার চেয়ে একটা ফ্যাশন বা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবে নিয়েছে যেন।

শিক্ষার্থীদের ব্যয় বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ঠিক ; শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ব্যয় হচ্ছে তা চালানোর মতো সামর্থ্য অনেকের নেই। এ ছাড়া সন্তানকে নিয়ে সারা দিন একজন অভিভাবক বিশেষ করে একজন মা কোচিং ও টিউশন সেন্টারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

অপর একজন অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের অযোগ্যতার কারণে প্রায় শিক্ষার্থীই এখন টিউশনী বা কোচিংয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। আবার অনেক অভিভাবক মনে করেন, ছেলেমেয়ে রাতদিন একের পর এক প্রাইভেট, টিউশনী, কোচিং কারাখানায় পড়াটাই যেন একটা বাহাদুরি। তারা বিভিন্নমহলে বলেও বেড়ান, তাদের ছেলেমেয়ে ৩-৪ জন শিক্ষকের দরবারে প্রাইভেট বা কোচিং পড়ে। বস্তুত, এতে যে তাঁর ছেলে বা মেয়ে যথেষ্ঠ মেধাশূণ্যতায় রয়েছে, সে কথা তাঁরাও প্রায় ভুলে যেতে বসেছেন।

আরেকজন অভিভাবক বলেন, আমাদের সময়ে আমরা বিদ্যালয়েও গিয়েছি।সন্ধ্যের পর ঠিকমতো বাড়িতেও নিজের বই পত্র নিজেই পড়ালেখা।বিদ্যালয়ের পড়া রেডি করেই, খেয়ে ঘুমিয়ে গেছি। সে সময়ে বিদ্যালয় থেকে এসে বিকেলে খেলাধুলাও করেছি। আর একালে খেলার সময়ও লেখাপড়া, লেখাপড়ার সময় তো বিদ্যালয়ের ন্যায় আরেকটি প্রাইভেট বিদ্যালয়ে কিংবা প্রাইভেট টিউশনীতেই ব্যস্ত থাকছে শিক্ষার্থীরা।তিনি মনে করেন, এসব অনিয়মের যাঁতাকলে  ব্যক্তিগতভাবে শাররিক ও মানসিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীদের।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!