২৫০ শয্যার নোয়াখালী হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণহীন দালাল

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
  • 173 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

ক’দিন আগে জেলার চাটখিল থেকে এসেছিলেন বিষখাওয়া এক রোগী। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে আসা মাত্র দালালরা এখানে উন্নত চিকিৎসা নেই বলে অভিযোগ করে তাকে নিয়ে যান একটি বেসরকারী ডায়াগনেষ্টিকে। একপর্যায়ে, ওই ডায়াগনেষ্টিকে মৃত্যু হয় ওই রোগীর।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল আশপাশের জেলার কোটি মানুষের ভরসাস্থল। হাসপাতালটি ঘিরে বেড়েছে বিভিন্ন কথিত ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসির দালালদের উৎপাত চরমে। দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের কিছু কর্মচারীও জড়িত আছে বলে জানা গেছে। ইতোপূর্বে, দালাল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। দালালদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীদের বদলি ও শোকজ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, এক সময়ের ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটি ধীরেধীরে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ হাসপাতালে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের রোগী আসে। এখানে এসে তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন কথিত ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসির দালালের খপ্পরে পড়েন। কোনো একজন রোগী এলে দালালরা তার সঙ্গে এমন অভিনয় করেন যেন পরম আত্মীয়। দৌড়ে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসবে। টেস্ট না লাগলেও টেস্ট করাতে নিয়ে যাবে।

গ্রামের সরল রোগী ও তার স্বজনরা ভাবতে শুরু করেন, এখনো সমাজে এত ভালো মানুষ আছে! তাদের মোহভঙ্গ হয় ওষুধ বা টেস্টের বিল দেখে। ৫০০ টাকার ওষুধ দিয়ে ৩ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেন। যার সাধারণ এক্স-রে করার দরকার নেই তার হাতে এমআরই রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা। তারা নিরক্ষর রোগী ও তাদের স্বজনদের বেশি বেকায়দায় ফেলছেন।

সূত্র আরও জানায়, দালাল চক্রের উৎপাত বেশি হয় বিকেল বেলায়। কারণ, তখন ডাক্তারদের ডিউটি কম থাকে। রোগীকে ডাক্তার নেই বলে কথিত ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনে। এক রোগীর স্বজন হাতিয়ার জহির উদ্দিন বলেন, প্রশাসন ইচ্ছা করলে এখানে দালালমুক্ত করতে পারে।

পরিবেশ আন্দোলনের নোয়াখালীর একজন নেতা বলেন, নোয়াখালীর সরকারী হাসপাতাল ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বল্পমূল্য সেবা নিতে আসেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন। সেখানে তাদের ভোগান্তিতে ফেলে দালালরা। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের সামনে স্থাপিত বেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতাল মানহীন। তাদের দালালদের তৎপরতা বেশি নজরে পড়ে। এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

আবাসিক চিকিৎসক সৈয়দ মহি উদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আসেন। সবার প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেয়া সম্ভব হয়না। এ কারণে তারা সচেতন হওয়া জরুরী। তারা সচেতন হলেই দালালদের দালালী থাকবেনা।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, দালালের উৎপাত রয়েছে- এটা সত্য। আমরা হয়তো এক দিনেই তা নির্মূল করতে পারব না। এটা নির্মূল করতে সময় লাগবে। আমরা দালাল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। ইতোপূর্বে অনেকজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তারা ছাড়া পেয়ে এসে আবার শুরু করে। অভিযান চালিয়ে তাদের দৌড়ের ওপর রাখছি। আমাদের কিছু দুষ্ট স্টাফ আছে, তাদের বিরুদ্ধেও বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখায় বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর সামনে কিছু ক্লিনিক গড়ে ওঠেছে। এগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!