দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে নোয়াখালীর অর্ধশতাধিক খাল

  • আপডেট সময় বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
  • 127 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

দূষণ ও একের পর এক দখলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নোয়াখালীর অর্ধশতাধিক খাল। এরমধ্যে কোনোটির অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে, কোনোটি আবার নাব্যতা সংকটে পড়তে শুরু করেছে।

নোয়াখালী শহরের অধিকাংশ খালও দখল আর বর্জ্যের দূষণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আর হারিয়ে যাচ্ছে এসব খালের ঐতিহ্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, জেলার সদর, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনা্পুইমুড়ি, চাটখিল, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবণচর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় কালই অস্তিত্বহারা।

বর্তমানে সোনাপুর-চরবাটা খালের দু’পাশেই রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে প্রতিদিন গড়ে ওঠেছে কোনো না কোনো স্থাপনা বা বহুতল ভবন। ইট-বালি আর মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে খালের দু’পাশ। একই অবস্থায় ভূলুয়া, নোয়াখালী, কুমারখালী খালসহ ছোট-বড় অর্ধশতাধিক খাল।

অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলে দখল। এসব ভবনে দোকানপাট দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। এতে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে খালগুলো।

হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা তার ঐতিহ্য। এ ছাড়া খালে ময়লা আবর্জনার স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে অল্প বৃষ্টিতে এসব এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

অপরদিকে দখলদারদের হাত থেকে খালের ওপর স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও পরে আবারো দখল হয়ে যায় উচ্ছেদ হওয়া স্থানগুলো। তাই স্থায়ী উচ্ছেদ করার দাবি স্থানীয়দের।

পৌরশহরের বাসিন্দা আকবর হোসেন, রাকিবুল হাসান ও বিজয়া সেনসহ অনেকেই জানায়, এক সময় এশহরের খাল দিয়ে এক সময়ে বড় বড় পাল তোলা নৌকা, মালবাহী ট্রলার চলাচল করতো। এ ছাড়া চট্রগ্রাম ও হাতিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান-চাল গমসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতেন ব্যবসায়ীরা। দিন দিন খালগুলো ছোট হয়ে যাওয়ায় এখন আর তা হচ্ছে না।

এসব খালের পানি দিয়ে বিভিন্ন মৌসুমে ইরিগেশনসহ খাল পাড়ে সবজির চাষ করে কোটি কোটি টাকা আয় করতেন চাষিরা। এখন আর হচ্ছে না। প্রায়ই সব খাল মৃত হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে এসব খাল দখল করে গড়ে ওঠেছে বহুতল ভবন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চলে খাল দখল। এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

সদর উপজেলার প্রায় রাস্তার পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধসহ প্রচুর জায়গা রয়েছে। কিন্তু সেসব জায়গা দখল করছে স্থানীয় প্রভাবশালী। সদরের নুরু পাটওয়ারী হাট, করমুল্যাহ বাজার, উত্তর ওয়াপদা বাজার এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান,  কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দোকানঘর ও ভবন নির্মাণকাজ চলছে।

একাধিক প্রভাবশালী ওইসব স্থানে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। অবৈধ দখলদার জহির ও আবু নাছের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নিয়েছি। ওই সম্পত্তিতে আমরা দোকান করেছি। এটি আমাদের জায়গা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কাজ করা হচ্ছে। চলছে সার্ভে ও অবৈধ দখলদারদের তালিকার কাজও। ওইসব খাল খননের কাজ প্রক্রিয়াধীন। খাল খনন হলে ইরিগেশন থেকে শুরু করে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া খাল অস্তিত্ব ফিরে পাবে এই অঞ্চলের মানুষ।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!