যে কারণে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৬ শতাংশ

  • আপডেট সময় রবিবার, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
  • 76 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

গত এক বছরে দেশে ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।

মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এমআরএ) গবেষণায় বলা হয়েছে, দারিদ্র্যপীড়িত লোকজন তাদের অবস্থানের উন্নতি ঘটাতে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে থাকে। সংসারের নানা প্রয়োজন মেটানো, বেকার জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তি ও পারিবারিক ব্যবসা সম্প্রসারণসহ শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ক্ষুদ্র ঋণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

তবে, ক্ষুদ্রঋণ নিম্নআয়ের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্ষুদ্র ঋণকে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবেও বর্ণনা করা হয়।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মন্তব্য করে বলেছেন, মানুষের অর্থের চাহিদা বেড়েছে। কারণ, যে হারে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সে তুলনায় আয় বা কর্মসংস্থান বাড়েনি। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দেশে টানা যে হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এমন পরিস্থিতি আগে কখনো আসেনি। তাই মানুষের আয় ও ব্যয়ে সংগতি থাকছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ ঋণ করছে।

সারা দেশে এমনিতেও ঋণ গ্রহণের অনুপাত বেড়েছে। কেউ প্রয়োজন মেটাতে আবার কেউ পরিশোধ করতে ঋণ নিচ্ছে। এতে ঋণগ্রহীতা একটি দুষ্টচক্রেও আটকে যাচ্ছে।

এমআরএর তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুনশেষে দেশে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা ছিল ২ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার। এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনশেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ। এমআরএর অনুমোদিত ৩৭৯ বেসরকারি সংস্থার হিসাবের ভিত্তিতে এ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন ঋণদান সংস্থার তথ্য বিবেচনায় নিলে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে।

তথ্য অনুযায়ী, এমআরএ নিবন্ধিত এনজিওগুলো গত এক বছরে ঋণ বিতরণ করেছে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুলাই মাসের পূর্বে এক বছরে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ১ হাজার ৯১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

এনজিওগুলোর বিতরণ করা ক্ষুদ্র ঋণের টাকায় উদ্যোক্তা তৈরির কাজে লাগানো হয়। গৃহস্থালিকেন্দ্রিক আয়বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে কৃষি, মৎস্য চাষ, পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, মৃৎশিল্প, পাট, বেতের কাজ, বুটিকস, তাঁত, জামদানি, দর্জি, মুদি দোকান, বাজারকেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসা, কচুরিপানা ও জৈব সার চাষ এবং মৌসুমি ব্যবসা- উল্লেখযোগ্য।

এনজিওগুলোর জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঋণ নিতে আসা পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবাসফেরত, কৃষক, ভূমিহীন কিছু বসতভিটা আছে এমন ব্যক্তি, শিক্ষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ব্যবসা করতে আগ্রহী লোকজন।

ব্র্যাকের একটি শাখার এক ব্যবস্থাপক বলেন, অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে গৃহনির্মাণ ও ফসলি জমি ক্রয় করে নগদ টাকা শেষ করে ফেলেন। পরে ব্র্যাক বা অন্য কোনো এনজিও থেকে ঋণ নিতে আসে দেশেই একটা আয় রোজগারের ব্যবস্থা করতে। এর মধ্যে সচরাচর যেসব প্রস্তাব আমরা পাই তার মধ্যে আছে ভ্যান, অটোরিকশা বা অন্য কোনো যাত্রী পরিবহন কিনতে ঋণ চান। এ ছাড়া অনেকে ব্যবসা শুরু করতেও ঋণ নিতে আসে। তিনি বলেন, আমরা এসব ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করে দিয়ে থাকি।

সরকারের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) এক ইউনিয়ন শাখার কর্মী আকবর হোসেন বলেন, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আমরা উদ্যোক্তা নারী ও পুরুষ উভয়ের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেই। তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোনো ব্যবসায়ী যারা ব্যবসা বাড়াতে চায় তাদেরও ঋণ দেই।

বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা আশার একজন আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক ঋণ কর্মকর্তা বলেন, এনজিওগুলোর ঋণ বিতরণের আগের ধারা পাল্টে গেছে। এখন সচেতন মানুষ বেশি আসে ঋণ নিতে। এদের অনেকেই পূর্বে ঋণ নিয়ে ফেরত দিয়েছে। ঋণ নিয়ে তারা উপকৃত হয়েছে। তাদের সন্তান বড় হয়েছে। সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে এনজিওর ঋণসংশ্লিষ্ট আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখে বড় হয়েছে।? এখন ওইসব পরিবারের তরুণ সদস্য ঋণ নিয়ে আয় রোজগারের ব্যবস্থা করতে চায়।

অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানির আরেক ব্যবস্থাপক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী উদ্যোক্তারা বেশি আসছেন ঋণ নিতে। তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি অনেক পরিবারে কৃষিজমি থেকে প্রাপ্ত ধান ও অন্যান্য ফসলে সারা বছর চলছে না। ওইসব পরিবারের নারী সদস্যরা স্বামী ও স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেদের ব্যবসায় জড়াতে ঋণ নিতে আসে।

এনজিওর কর্মীরা জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ঋণের চাহিদা বেড়েছে। অনেকেই অভাবে আছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, পরিবহন খরচ, ওষুধ ও পোশাক-পরিচ্ছদ ক্রয় করতে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের সঙ্গে সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষ পেরে উঠছে না। অর্থাভাবে সন্তানের পড়ালেখার খরচ, জমি ক্রয়, চিকিৎসা ব্যয় এমনকি সন্তানের বিয়েতেও ঋণ করতে আসছে। তবে, সবাইকে ঋণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এর কারণ হিসেবে তারা জানান, এনজিওগুলোর প্রতিটি শাখায় ঋণ বিতরণ ও আদায়ে একটি টার্গেট দেয়া হয়। শাখাগুলোর প্রতিটি আবার সেই টার্গেট প্রত্যেক কর্মীর ওপর আনুপাতিক হারে বিভাজন করে দেয়।

কর্মীদের এই ঋণ বিতরণ এবং আদায়ে একেকটা এলাকা ও পরিবার বা খানা সংখ্যাও নির্ধারণ করা থাকে। এতে করে কখনো কখনো চাহিদা বেশি থাকায় তহবিলে ঘাটতি পড়ে। আবার কখনো কখনো ঋণ নিতে আগ্রহীদের অতীতে খেলাপি হয়ে পড়ার রেকর্ড থাকায় তাদের নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এতে করে ওই এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মীর হাতে তহবিল থাকলেও ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয় না।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!