দেশে বাতরোগে ভুগছেন ৭ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ

  • আপডেট সময় বুধবার, জুলাই ১৭, ২০২৪
  • 50 পাঠক

ল্যানসেটের তথ্য

————————————————–

দিশারী ডেস্ক। ১৭ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

দেশে বাতরোগের প্রকোপ বাড়ছে। দুটি পৃথক বৈশ্বিক গবেষণা বলছে, দেশে আনুমানিক ৭ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বাতজনিত রোগে ভুগছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, সঠিক পরিসংখ্যান তৈরির পাশাপাশি দেশে বাতের চিকিৎসার সুযোগ–সুবিধা বাড়াতে হবে।

গেঁটেবাত (গাউট) এবং পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাত (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ের কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বাতরোগবিশেষজ্ঞদের নিয়ে দুটি আন্তর্জাতিক মোর্চা ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গেঁটেবাত এবং পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাতের বৈশ্বিক পরিস্থিতি পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করেছে। পাশাপাশি ২০৫০ সাল নাগাদ পরিস্থিতি কোথায় যাবে, তার প্রাক্কলন করেছে।

পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাত বিষয়ে একটি প্রবন্ধ গত অক্টোবরে জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট–এ ছাপা হয়েছিল। আর গেঁটেবাতবিষয়ক অন্য প্রবন্ধটি ৯ জুলাই ল্যানসেট–এ ছাপা হয়েছে। দুটি প্রবন্ধের সম্পূরক পরিশিষ্টে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে।

এ দুটি রোগ নিয়ে দেশে জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আবু শাহীন বলেন, ‘ গাউট নিয়ে দেশে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের ১ থেকে ২ শতাংশ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ভুগছে।’

————————————————————————————————————————————–

কাজের ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও হয়। সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অসংক্রামক রোগ নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের উচিত হবে বাত প্রতিরোধে গুরুত্ব দেয়া। মো. আবু শাহীন, চেয়ারম্যান, রিউমাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

—————————————————————————————————————————————

গেঁটেবাত বা গাউট পরিস্থিতি

জ্বালাময় বা দাহযুক্ত বাতই হচ্ছে গাউট বা গেঁটেবাত। এর ফলে এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, লালচে ভাব হয় এবং ওই সব স্থানে গরম অনুভূত হয়। নারীর চেয়ে পুরুষের এই রোগ বেশি হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকি বাড়ে। তবে বাতগ্রস্ত কম বয়সী মানুষের মধ্যে স্থূলতা, বিপাকজনিত জটিলতা বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের উপস্থিতি দেখা যায়। গেঁটেবাতের সঙ্গে হৃদ্‌রোগ ও স্নায়ুরোগ, বিপাক জটিলতা ও কিডনি রোগের সম্পর্ক দেখা যায়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়, মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়।

ল্যানসেট–এর প্রবন্ধ অনুযায়ী, দেশে গেঁটেবাত বা গাউটের রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৬৫ হাজার। দেশের ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৩৯৯ জনের এ রোগ আছে। এ সংখ্যা ১৯৯০ সালের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি।

বৈশ্বিকভাবে গেঁটেবাতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২০ সালের চেয়ে ২০৫০ সালে ৭০ শতাংশ বাড়বে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গেঁটেবাত আগের চেয়ে বেশি হারে বাড়বে। সেই হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে গেঁটেবাতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে হবে ৯ লাখ ৫৭ হাজার।

গবেষকেরা বলছেন, গেঁটেবাত প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে, বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে। যেসব কারণে এ রোগ হয় বা বাড়ে, সে ক্ষেত্রে নীতিগত অবস্থান দৃঢ় করার পাশাপাশি আগেভাগে রোগ নির্ণয় করার ব্যবস্থা ও চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাত পরিস্থিতি

ল্যানসেট–এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাতে ভুগছেন ২ লাখ ১২ হাজার মানুষ। প্রতি ১ লাখ বাংলাদেশির মধ্যে ১৯ জন এ রোগে ভুগছেন। ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রোগী বেড়েছে ৫৫ শতাংশের বেশি।

এ রোগে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধি ফুলে যায় এবং কখনো কখনো অস্থিসন্ধি শক্ত ও অনমনীয় হয়ে যায়। এ ধরনের বাতে শরীরের যেকোনো অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ সমস্যা শুরু হয় সাধারণত হাত ও পায়ের বিভিন্ন সন্ধি থেকে। নারী–পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হলেও নারীদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বিশ্বব্যাপী এ রোগে মৃত্যুহার কমে গেছে। এ রোগে ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি থাকে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি

২০২০ সালে সারা বিশ্বে গেঁটেবাতে আক্রান্ত মানুষ ছিলেন ৫ কোটি ৫৮ লাখ। গবেষকেরা প্রাক্কলনে বলেছেন, ২০৫০ সালে গেঁটেবাতে আক্রান্ত রোগী ৭০ শতাংশ বাড়বে। এর প্রাথমিক কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি।

অন্যদিকে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাতে আক্রান্ত ছিল ১ কোটি ৭৬ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কিছু বাড়লেও এতে মৃত্যু আগের চেয়ে কমবে।

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আবু শাহীন বলেন, ল্যানসেট–এ প্রকাশিত গবেষণার বিষয়বস্তু ও তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। বাতে আক্রান্ত মানুষ কাজ করতে পারে না। কাজের ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও হয়। মানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের উচিত হবে বাত প্রতিরোধে গুরুত্ব দেয়া।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!