দিশারী ডেস্ক। ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার ভাতা দেয়া হয়নি। ২০২২ সালের তথ্যে ৭৩ শতাংশ ভাতাভোগী দরিদ্র ছিল না বলে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। অর্থাৎ বাজেটে দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের দেয়া সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সাত হাজার কোটি টাকাই আসল ভাতাভোগীরা পাননি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে এক কোটি ২০ লাখ উপকারভোগী ভাতা পাওয়ার কথা। চলতি বাজেটে ভাতাভোগীদের জন্য ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তিরাও ঢুকে পড়েছেন। যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য নন, তারাও পাচ্ছেন। অথচ প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
—————————————————————————————————–
ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের তালিকার ৪৩ শতাংশই ত্রুটিযুক্ত। অর্থাৎ এরা ভাতা পাওয়ার অযোগ্য। অনেক সচ্ছল ব্যক্তির নাম এই তালিকায় রয়েছে।
—————————————————————————————————–
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় একই ধরনের চিত্র ওঠে এসেছে। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, উপকারভোগীদের মধ্যে নিজেদের বয়স্ক দাবি করা প্রায় ৩০ শতাংশ এবং বিধবা দাবি করা প্রায় ৩৩ শতাংশ এ ভাতা পাওয়ার অযোগ্য।
এ বিষয়ে শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স এবং ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাতার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ টাকাই চলে যাচ্ছে সচ্ছলদের পকেটে। আসল ভাতাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা আমাদের প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে এনেছি। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এ রকম সচ্ছল ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে যারা এখন ভাতাভোগীর তালিকায় আছেন, তারা আসলেই ভাতা পাওয়ার যোগ্য কি না, তা দেখতে বলা হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৬০ লাখ। মাথাপিছু এরা মাসিক ভাতা পান ৬০০ টাকা। চলতি বছর বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে চার হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বিধবা ভাতা পান প্রায় ২৮ লাখ। মাথাপিছু এরা ভাতা পান ৫৫০ টাকা। বাজেটে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৩২ লাখ। মাথাপিছু এদের ভাতা ৮৫০ টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ তিন হাজার ৩২১ কোটি টাকা।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পান ১৩ লাখ। এদের মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৬০০ টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ ৯ কোটি টাকা। বেদে জনগোষ্ঠীর ছয় হাজার জন ভাতা পান। এদের মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা। বাজেটে বরাদ্দ সাড়ে তিন কোটি টাকা। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পান ৬০ হাজার। এদের মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ আছে ৩৬ কোটি টাকা। সাধারণত তিন মাস অন্তর উপকারভোগীদের ভাতার টাকা দেয়া হয়।
——————————————————————————————————
সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, ভাতাভোগীর তালিকায় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় বিধবা ও প্রতিবন্ধী তালিকায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় এসব অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে বিধবা হওয়ার পর আবার বিয়ে করেন। অনেকে প্রতিবন্ধী না হয়েও এ তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। একটি স্বচ্ছ তালিকা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার তালিকা পর্যালোচনা করে।
——————————————————————————————————
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর তালিকায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজনই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ জেনে বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘ ইউনিসেফ আমাদের কাছে একটা জরিপ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচিত উপকারভোগীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তারা হওয়ার মত নন। এখানে অন্য লোক ক্রাইটেরিয়ায় আসার কথা। আমরা এখন এটা রিভিউ করব।’
————————————————————————————————————-
জানা গেছে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে সরকার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভাতা বিতরণ করে থাকে। ১৯৯৬ সালে প্রথমে বয়স্ক ভাতা চালু করা হয়। পরে ধীরে ধীরে চালু করা হয় অন্যান্য ভাতা।
———————————————————————————————————–
বর্তমানে এক কোটি ২০ লাখ উপকারভোগীর মধ্যে যারা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পান, তারা মাসে ৫০০ টাকা এবং যারা প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী তারা পান ৮৫০ টাকা। এই অর্থ উপকারভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে সরাসরি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
চলতি অর্থবছরের সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে এক লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি।
Leave a Reply