দিশারী ডেস্ক। ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পুলিশ সংস্কার কমিশন ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক এক অনলাইন জরিপ পরিচালনা করে। গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত ১৯টি প্রশ্নের ওই জরিপে অংশ নেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন মানুষ। এর মধ্যে ৮৯.৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান তারা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারকে আইনের অপব্যবহার বলেছেন ৮২.৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপে সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়েছেন ২৪ থেকে ৩৪ বছরের ব্যক্তিরা। আর নারীদের মধ্যে জরিপে অংশ নিয়েছেন মাত্র ৫.১ শতাংশ। পেশাভিত্তিক উত্তরদাতাদের মধ্যে চাকরিজীবীরা ৩৬.৪ শতাংশ, ছাত্র ২৭.২ শতাংশ, ব্যবসায়ী ৭.৬ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ার ৭.১ শতাংশ।
——————————————————————————————————–
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
——————————————————————————————————–
জনমত জরিপের ফলাফল পুলিশ সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.prc.mhapsd.gov.bd) পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্যের সহিংস ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীর সংস্কারে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠন করে। পুলিশ সংস্কার কমিশন দেশের সাধারণ মানুষের মতামত জানতে ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনমত জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করে পুলিশ চাওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি ক্ষেত্রে সর্বাধিক জোর দেয়া হয়েছে।
——————————————————————————————————–
একটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, দ্বিতীয়টি আইনের প্রতি অনুগত ও নিরপেক্ষ এবং তৃতীয়টি দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চায় সাধারণ মানুষ।
জরিপে উঠে এসেছে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯.৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৪.৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
——————————————————————————————————–
ভুয়া বা গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার চান ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
একই কাজে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর্থিক লেনদেন বন্ধ চান ৮১.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি, অনিবাসী বা নিরপরাধ ব্যক্তির নামে অভিযোগ দায়েরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চান ৭৪.৫ শতাংশ উত্তরদাতা। সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা সংস্কার করে থানার ওসির কাছে প্রাক-যাচাইয়ের আইনগত ক্ষমতা প্রদান সমর্থন করেন ৬৯.২ শতাংশ উত্তরদাতা।
বিক্ষোভ মিছিল মোকাবেলা ও বিরোধী মত দমনে বল প্রয়োগ করায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তি চান ৭১.৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ৬৮.৮ শতাংশ উত্তরদাতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ ছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্ম মূল্যায়নে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৮.২৭ শতাংশ উত্তরদাতা।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৫৪ ধারায় পুলিশকে প্রদত্ত বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের ক্ষমতাকে আইনের অপব্যবহার মনে করেন ৮২.৫ শতাংশ উত্তরদাতা, আর ১৭.৫ শতাংশ উত্তরদাতা তা মনে করেন না।
——————————————————————————————————–
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটির সংস্কার চান ৯১.৭ শতাংশ উত্তরদাতা। ৮০.৯ শতাংশ নারী উত্তরদাতা নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের পক্ষে মত দিয়েছেন। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় স্বচ্ছ কাচের কক্ষের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮০.২ শতাংশ উত্তরদাতা।
——————————————————————————————————–
তল্লাশির সময় পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা বিনা সার্চ ওয়ারেন্টে তল্লাশি করতে চাইলে তার প্রতিকারে কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা।
পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন সংগঠনের মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছেন ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা। বর্তমানে এ ধরনের স্বাধীন কোনো সংগঠন নেই।
পুলিশকে জবাবদিহিমূলক ও প্রভাবমুক্ত রাখতে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৫৮.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। অন্যদিকে পুলিশের জন্য স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন ৪১.১ শতাংশ উত্তরদাতা।
Leave a Reply