হনুমানের কীর্তনে রাবনের চিতায় আগুন ?

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫
  • 76 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান নায়কখ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবনে গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরোক্ষ উসকানিই দায়ী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। আন্দোলনকারী ছাত্রদের একটি অংশ দীর্ঘ ছয় মাস পর হাসিনার পুরোনো কর্তৃত্ববাদী আচারণে মোটেই সন্তোষ্ট হয়নি বলে ধারণা করা হয়। যে প্রতিক্রিয়ায় নিজেরাও যেন আরেকটি ঘৃণ্য ইতিহাসের ভিন্নতায় জড়িতে যায় ? এ যেন অনেকটাই হনুমানের কীর্তনে রাবনের চিতায় আগুন ?

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অপ্রতিরোধ্য গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা তার দলের ছাত্র সংঘটন ‘ছাত্রলীগ’ কর্তৃক গোপনীয়ভাবে পরিচালিত একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দিল্লি থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিনটি বেছে নেন। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ‘ছাত্রলীগ’ও বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী দিল্লি থেকে দেশে এবং বিদেশে তার দলের কর্মীদের কাছে ফোন করছিলেন যা ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ফাঁস করা হয়েছিল এবং এইভাবে, তিনি জনগণের সহানুভূতি এবং সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। আশ্চর্যজনকভাবে প্রশ্নে, টেলিফোনিক কথোপকথনে, জুলাই আগস্টের আন্দোলনে প্রায় এক হাজার মানুষকে হত্যা করার জন্য (যাদের বেশিরভাগই যুবক) এবং প্রায় ২০ হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে আহত করার জন্য কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।

————————————————————————————————————

অন্য সম্পাদকীয় মমার্থ

————————————————————————————————————-

আজকাল বিদেশ থেকে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা নিজেদের কোনো ভুল স্বীকার না করেই বক্তৃতা দিচ্ছেন যেমন। নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার না বলে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, গোপনে থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য কিছু ছাত্রদের যথেষ্ট ক্ষুব্ধ করে তোলে। বিশেষ করে যারা আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম সারিতে ছিল। এমন ক্ষোভের বিষন্নতায় তারাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধান প্রতীক শেখ মুজিবের বাড়ি ভেঙে দেয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন এবং যথারীতি তিনি তার কোনো দোষ খুঁজে পাননি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া, হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠানো, অনেক নাগরিককে অবৈধভাবে আটক এবং জোরপূর্বক গুম করা, ব্যাংক খালি করার পাশাপাশি লুণ্ঠন ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত ও দলীয় লাভের জন্য ব্যবহার করা-বক্তব্যে কোনো কিছুই তুলে ধরেননি হাসিনা। তরুণ আন্দোলনকারীরা, তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, মুজিবের ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে হামলা করে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী নেতাদের একাংশের বাসা, বাড়িতেও ব্যাপক লুটতরাজকতাসহ আগুনে জ্বলিয়ে দেয়। তাদের এমন প্রকাশ্য বাহুবলের প্রদর্শনের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যত নীরব ছিল, যা ব্যাপকভাবে জনগণের কাছে ব্যাখ্যার দাবি রাখে। অথচ যে সময়ে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দেশের আইন আদালত তথা বিচার ব্যবস্থা এগিয়ে যাওয়ার কথা, সে সময়ে এমন ঘটনা কোনভাবেই অভিপ্রেত বলে আমরা মনে করিনা।যা পক্ষান্তরে দেশের আইন,আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকে সাময়িক হলেও কিছুটা ভয়ভীতি কিংবা জনভীতি প্রদর্শনের নামান্তর হয়।

মুজিবের বাসা ভেঙে দেয়া হয়তো আওয়ামী লীগ কর্মীদের কিছু সময়ের জন্য দমিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু বিদেশে বসবাসকারী দলের কর্মীরা এই ঘটনাটিকে সহানুভূতি অর্জনের জন্য কাজে লাগাবে। তবে যে যুবকরা রাজনৈতিকভাবে বাসাটিকে ভাঙার নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের ধ্যানমানের দরকার ছিল যে, ঐতিহাসিক এই বাড়িটি একটি ‘জাতীয় সম্পত্তি’।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের সূচনা করেছিলেন তা সত্য, তবে এটাও সত্য যে, পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত করার জন্য তার মৌলিক অবদান ছিল। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশিরভাগ মানুষ তার আহ্বানে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিল। শেষে বলতে হয়, ‘ইতিহাস’ মুছে ফেলার প্রচেষ্টা ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে না। বরং এটি জনগণকে তার ঐতিহাসিকভাবে বৈধ লক্ষ্য অর্জনে বিভ্রান্ত করতে পারে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!