ফ্যাটি লিভার ডেকে আনছে লিভার সিরোসিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
  • 89 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ,২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।

সম্প্রতি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ২৩ শতাংশ নারী এবং ২০ শতাংশ পুরুষের মধ্যে ফ্যাটি লিভার পাওয়া গেছে। শহরে এর প্রবণতা ৩০ শতাংশের মতো।

————————————————————————————————

নীরব ঘাতক ► প্রতি চারজনে একজন আক্রান্ত ► 

———————————————————————————————–

প্রায় তিন মাস ধরে পেটে ব্যথা এবং পাতলা পায়খানার সমস্যায় ভুগছিলেন গাজীপুরের বাসিন্দা সেতারা বেগম (৫৫)। মাসখানেক আগে মলের সঙ্গে রক্ত বের হলে ভয় পেয়ে যান তিনি। সেতারা বেগমের মেয়ে ফাহমিদা আক্তার বলেন, মাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক বলেছেন, তিনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে এই ফ্যাট। সমস্যা সমাধানে ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

শুধু সেতারা বেগম নয় দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছে। প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও লিভার রোগ সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রতি চারজনে একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভার মানে হলো যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া এবং যকৃত একটু বড় হয়ে যাওয়া। ফ্যাটি লিভারের একটি বিপজ্জনক পরিণতি হলো ‘নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস’ (সংক্ষেপে ন্যাশ)।

চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালের প্রধান পুষ্টিবিদ মাহফুজা আফরোজ সাথী বলেন, যারা কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবার, বিশেষত ভাত বেশি গ্রহণ করছেন এবং সেই তুলনায় শাররিক পরিশ্রম বা হাঁটা-চলাফেরা কম করছেন, তাদের ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাই ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে শর্করা জাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার কমাতে হবে।এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ও আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। নিয়মিত হাঁটা ও শাররিক পরিশ্রম করতে হবে। জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে’।

———————————————————————————————————————————————–

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, শহর এলাকায় আমরা প্রায়শই ফ্যাটি লিভারের রোগীদের দেখা পাই। আশঙ্কাজনকহারে এখন গ্রামেও রোগী বাড়ছে। এদেশে প্রায় ৫ শতাংশ লিভার সিরোসিস রোগী ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এ থেকে লিভার সিরোসিস হলে, ১৫ শতাংশ রোগী সাত বছরের মধ্যে আর ২৫ শতাংশ ১০ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের খাদ্য তালিকা ভাত নির্ভর হওয়ায় অতিরিক্ত শর্করা শরীরে গিয়ে ফ্যাটি লিভার তৈরি করে। তাই খাদ্য তালিকা ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।

——————————————————————————————————————————————–

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএস বলছে, যকৃতে কিছুটা চর্বির উপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু একজন ব্যক্তির যকৃতের যে ওজন, তার ১০ শতাংশের বেশি যদি চর্বি হয় তখন সেটিকে ফ্যাটি লিভার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংস্থাটি বলছে, যাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি তাদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি, বিশেষ করে যাদের শরীরের মাঝখানের অংশে, পেটে অনেক চর্বি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। এ ধরনের ব্যক্তিদের শরীরকে আপেল আকৃতির শরীর হিসেবে বর্ণনা করেছে এনএইচএস।

এ ছাড়া যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি রয়েছে তাদের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু এসব অসুখ নেই এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ছে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও এটি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এনএইচএস। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বাড়ছে ফ্যাটি লিভার আক্রান্তের সংখ্যা।

 

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!