দিশারী ডেস্ক। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।
ফসলি জমিতে পাশাপাশি দুটি গোলাকার লোহার ‘বয়া’ নিয়ে ৭৮ বছরেও রহস্য কাটেনি। লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জের চরউভূতি গ্রামে এ বয়াগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বয়াকে ঘিরেই চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘বয়ারচর’।
—————————————————————————————-
৭৮ বছরেও কাটেনি বয়ারহস্য
—————————————————————————————-–
জানা গেছে, খোলা আকাশের নিচে মাথা উঁচু করে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে লোহার দুটি ‘বয়া’। পাশাপাশি অবস্থিত লোহার হাতল ও গোলাকার মোটকা সদৃশ এ বস্তুটিকে ঘিরে কৌতূহলী মানুষ। স্থানীয় চরউভূতি গ্রামের এই স্থানে এক সময়ে নদী থাকলেও এখন চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে ঘেরা।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধসহ এলাকাবাসীর ভাষ্য, এই অঞ্চলে এক সময়ে প্রমত্তা ভুলুয়া নদীর অবস্থান ছিল। নদীতে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। ১৯৪৭ সালে ভয়াবহ ঝড়ে দুটি বয়া এসে আটকে যায় এই স্থানে। এর পর পূর্ব দক্ষিণ দিকে নদীটি সরে গিয়ে এদিক দিয়ে চর জেগে ওঠে। তখন বয়াগুলোর অস্তিত্ব ফুটে ওঠে। এই বয়া দুটো এখানে আসার পর থেকেই নদী সরে যায়। বয়াগুলোর অস্তিত্ব মাটির ঠিক কত নিচ থেকে তা জানা নেই কারও।
————————————
অন্য দৈনিক
———————————–
কয়েকজন এলাকবাসী জানান, ’৮০-এর দশকে স্বপ্ন দেখে এক নারী (ধইন্যার মা) ওই এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে বয়ার খেদমত শুরু করেন। তার দেখাদেখি অলৌকিক ভেবে এগুলো ঘিরে মানত আর মিলাদ করতেন অনেকে। উরস পালনও শুরু করা হয়। নগদ টাকাও রেখে যেতেন কেউ কেউ। এসব টাকা রাখালরা নিয়ে খরচ করতেন। পরে স্থানীয়রা লোহার শিকল ভেঙে ফেলে নিয়ে যান।
সম্প্রতি ওই নারী ও তার স্বামী মারা যাওয়ার পর এখন আর দেখার কেউ নেই। তবে এখনো দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ মনোবাসনা পূর্ণ করতে এখানে ছুটে আসেন। কেউ মানত করে বয়ার পাশের মাটি খেয়ে ফিরে যান।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী সানাউল্যা সানু বলেন, বয়া হলো নেভিগেশন ইকুয়েপমেন্ট। এগুলো লোহার তৈরি শিকল ও অ্যাঙ্কর দিয়ে আটকানো থাকে। যা জাহাজ চলাচলের জন্য বিপজ্জনক ও বিপদমুক্ত পথের নির্দেশনা দিত। এগুলো ১৯৪৭ সালের এক ঝড়ে কোথাও থেকে ছিঁড়ে এসে এখানে আটকে যায়। এই স্মৃতিচিহ্নটিকে গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply