নিজস্ব প্রতিনিধি : কম দামের চাল বিভিন্ন নামী-দামি কোম্পানির ব্র্যান্ডের প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। বাজারে একই ধরন ও মানের চালের সঙ্গে এসব ব্র্যান্ডের চালে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তি থাকে।
এছাড়াও ভারত, পাকিস্তানের আমদানি করা প্যাকেট বলে বিক্রি হচ্ছে আরও উচ্চমূল্যে। কম দামের চাল কৃষক, মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলারদের কাছ থেকে কিনে বেশি দামে বিক্রি করাকে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
নোয়াখালীর চালের অন্যতম বড় মোকাম চৌমুহনীর বণিক সমিতির এক নেতা বলেন, দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ বা ব্যবসায়ী এখন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় নেমেছে। প্রতিটি পণ্য আকর্ষণীয় মোড়কে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল যে দামে বিক্রয় হচ্ছে তা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে আরো বাড়তি দরে। জিরাশাইল পাইকারিতে যে দামে বিক্রি হচ্ছে ব্র্যান্ডের প্যাকেটে তাও হচ্ছে আরো বেশি দরে। অথচ এসব কোম্পানির কোনো মিল নেই। মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলারদের কাছ থেকে মজুদ করে। পলিশ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে প্যাকেটজাত করে উচ্চ দামে বিক্রি করে।
দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার অস্থির। সরকার শুল্ক কমিয়ে সরকার-বেসরকারি উদ্যোগে নেয়। বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির পরও বাজার স্থিতিশীল করা যাচ্ছে না। এ জন্য আমদানিকারক, বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, মিলার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
খুচরা ব্যবসায়ী ও মাইজদী পৌরবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্যাকেটজাত করা এক কেজি ওজনের চিনিগুড়া চাল যে ধরে বিক্রি হচ্ছে, একই চাল মানভেদে আরো বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন মানের চাল প্যাকেট-ভর্তি করে বিক্রি করছে বিভিন্ন কোম্পানি। ব্যান্ডের ওপর নির্ভর করে কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি থাকে।
খুচরা ব্যবসায়ী আবু জাহের বলেন, বাজারে ব্যান্ডের চালের নামে চলছে তেলেসমাতি। দেশীয় কোম্পানির প্যাকেটজাত চাল ভারত, পাকিস্তানী বলে চালিয়ে দিয়ে বাড়তি দামে বিক্রয় হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বড় শিল্প গ্রুপ, বড় মিলার, মধ্যস্বত্বভোগী ও নামী-দামি ব্রান্ডের কোম্পানিগুলোর কাছে প্রচুর চাল মজুত রয়েছে। কিন্তু মনিটরিং না থাকায় সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকারি শুল্ক হ্রাসের সুবিধা নিয়ে চাল আমদানিতেও জড়িত এসব সিন্ডিকেট। এসব কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বাজার মনিটরিং না থাকায় চালের বাজার স্থিতিশীল করা যাচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কম দামের চাল উন্নত ব্রান্ডের প্যাকেটে ভরে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কৃত্রিম সুগন্ধি ব্যবহার : কম দামি চাল উন্নত ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ভর্তি করে বেশি দামে বিক্রি ছাড়াও চাল মিশানো হচ্ছে কৃত্রিম সুগন্ধি। ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা এসব সুগন্ধি চট্টগ্রামেও মিশানো হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বেশি ব্যবহার করছে নামী-দামি ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো। চট্টগ্রাম ছাড়াও উত্তর বঙ্গের মিলার ও বড় ব্যবসায়ী কম দামের চাল বেশি দামে বিক্রি করার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করছেন।
চৌমুহনীর আরেক ব্যবসায়ী বলেন, চট্রগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে কয়েকটি গুদামে কৃত্রিম সুগন্ধি ব্যবহার করা হচ্ছে। অতি মুনাফার জন্য একশ্রেণির মিলার ও ব্যবসায়ী নিজেদের গুদামে এ ধরনের প্রতারণায় নেমেছেন। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। আর এ চাল তারাও কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
Leave a Reply