ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না নোয়াখালীর প্রায় ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
  • 428 পাঠক

নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী : ঘুষ ছাড়া কোনো ভূমির খতিয়ান খজনা-খারিজের কাজ করেন না নোয়াখালীর প্রায় উপজেলার ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা। ভূমি-সংক্রান্ত সব কাজে সেবাগ্রহীতাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ, নয় তো পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তিতে।

অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানি ও জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠেছে এ জেলার প্রায় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ভূমি দপ্তরের চৌহদ্দিতে ঢুকলেই নায়েব ও তহশিলদারের নিজের করা আইন মানতে হয় ভূমিসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে। কেউ এর প্রতিবাদ করলে ওই ভূমি কর্মকর্তার রোষানলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। এতে অসহনীয় বিপত্তি পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের।

সূত্রে জানা গেছে, এ জেলার প্রায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, খাজনার দাখিলার জন্য (ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ) সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলেও রসিদ দেয়া হয় সরকারি হিসেবে। এসবের মাধ্যমে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা। দৌরাত্ম্য বেড়েছে দালাল সিন্ডিকেটেরও।

জেলার সদরের এক ইউনিয়নের কৃষক মো. সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন তার জমির একটি খতিয়ান সৃজন বাবত নায়েবকে বাধ্য হয়ে নগদ ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু সে আমাকে কোনো রসিদ না দিয়ে আগামী মাসে দেখা করতে বলেন। আমি প্রায় পাঁচ মাস ধরে খতিয়ানের জন্য ভূমি অফিসে ঘুরেও এখনও কাগজ হাতে পাননি। নায়েব ‘দেই’, ‘দিচ্ছি’ বলে নানা টালবাহানা করছে। ঘুষ দিতে না চাইলে গালিগালাজ এমনকি হুমকিও দেয়।

আরেকটি উপজেলার সবুজ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার ইউনিয়নের কর্মকর্তা জমির খাজনা বাবত তিন হাজার টাকা নিলেও কোনো রসিদ দেন না এবং হোল্ডিং ও অফিস খরচ বাবত দাবি করেন আরও দুই হাজার টাকা। আমি নিজেকে গরিব মানুষ বলার পরে তিনি এক হাজার টাকা দিতে বলেন।

আরেক ভুক্তভোগী কৃষক আকবর হোসেন বলেন, আমার ১৫ শতক জমির খারিজ করার জন্য ভূমি অফিসে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। কিন্তু এখনও খারিজের কাগজ পাইনি। নাম খারিজের বেলায় সরকারি নির্ধারিত ফি এক হাজার ১৫০ টাকা হলেও অতিরিক্ত হিসেবে আট থেকে ১০ হাজার টাকা এমনকি ব্যক্তিভেদে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন প্রায় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। দাবিকৃত ঘুষের অর্থ দিতে অস্বীকার করলে নানা টালবাহানা করে জমির মালিকদের হয়রানি করেন তারা।

ঘুষ নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বলেন, অফিসের পিয়নরা হয়তো ছোটখাটো কাজের জন্য কিছু টাকা নেয়। কিন্তু জমি খারিজের জন্য আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনা। যারা বলছে তারা মিথ্যে অভিযোগ করছে।

এ নিয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব ) বলেন, আমার কাছে কেউ কোন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ করলে আমি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খাঁন বলেন, আমার কাছে এখনও এ ধরনের কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!