লক্ষীপুর : ইউপি সদস্যের দাপটে ভুলুয়াও অসহায় ! নদীর মাটি ইটভাটায়

  • আপডেট সময় রবিবার, এপ্রিল ১৭, ২০২২
  • 385 পাঠক

রিয়াজ মাহমুদ বিনু, লক্ষীপুর

————————–

লক্ষীপুরের রামগতিতে ভূলুয়া নদীর মাটি দিয়ে ইটভাটা করতে চলছেন এক ইউপি সদস্য। ইতোমধ্যেই ডজন খানেক ট্রাক্টর-টলিযোগে এ নদীর মাটি এনে পাহাড় বানিয়েছেন ইটভাটায়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর ম্যানেজ করেই চলছে এ কর্মযজ্ঞ !

ঝামেলা এড়াতে এসকিউবেটর দিয়ে রাতের আঁধারে কাটেন ভুলুয়া নদীর মাটি। সাধারণ একজন ইটভাটার শ্রমিক থেকে ইউপির সদস্য বনে যাওয়া ইটভাটার মালিক কালাম মাঝি স্থানীয় চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম আবদুর রবের ছেলে।

এলাকাবাসী জানান, কালাম মাঝি অর্থের জোরে প্রভাব বলয়ে চলেন। এই কালাম মাঝি ইউপির সদস্য হয়ে যেন আলাদীনের চেরাগ পেলেন। জড়িয়ে পড়েন দলবাজি ও দখলবাজিসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের সাথে। একজন সাধারণ সদস্যের এতো ক্ষমতা যে কেহ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা তার বিরুদ্ধে। একই দলের কতেক নেতার দাবি, তিনি অর্থের জোরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।

একদিকে সদস্য ,অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতির পদ ব্যবহার করে শুরু করেন ইটভাটা ও মাটি ব্যবসা। শুরু করেন ভূলুয়া নদীর মাটি নিয়ে মহাবাণিজ্য। ডজনখানেক ভেকু মিশিন ও ১৫ টির মতো ট্রাক্টর টলি দিয়ে একদিকে নদীর মাটি কেটে নিচ্ছেন।

অন্যদিকে, ভরাট করে দখল করছেন ভুলুয়া নদী। এ নেতা সাংবাদিক দেখেই দম্ভোক্তির সুরে বলেন, মাটি এনেছি, আরো আনবো। ছবি আর ভিডিও করলেই কি আমার ব্যবসাপাতি বন্ধ হয়ে যাবে! আমি সব ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা করছি। ইউএনও সাব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদকে ম্যানেজ করেই আমি ভূলূয়া নদী থেকে মাটি কেটে এনেছি। আপনারা কি করবেন? পারলে করেন ?

 

জানা যায়, কালাম মাঝি ওরফে আবুল কালাম মেম্বার ইটভাটা তৈরির জায়গা করতে কৌশলে চারটি হতদরিদ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করেছেন। সম্পূর্ন অনৈতিক কায়দায় নিজ পুকুর থেকে বালি উত্তোলন করে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন আদর্শ কলোনির অর্ধশতাধিক পরিবারকে। কলোনির পূর্ব পাশের রাস্তার পাড় ভেঙ্গে রাস্তাটিও প্রায় চলাচলের অনুপযোগী। নদী থেকে অবৈধ এবং অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় হুমকির মুখে পড়েছেন দু পাশের বাসিন্দারা।

হুমকির মুখে রয়েছে একটি জনগুরুত্বপূর্ন কালভার্টও। সেতুটি যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা নির্মানাধীন ইটভাটার চারপাশেই রয়েছে জনবসতি। এর মধ্যে পশ্চিম পাশে সড়ক ঘেঁষেই রয়েছে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং একটি মসজিদ। পূর্ব পাশে দখল করা হয়েছে ভূলুয়া নদীর অর্ধেক। ভূলুয়া নদীর বিশ ফুট প্রশস্থ পাড়ের ঝাউগাছ উচ্ছেদ করে দখল করছেন নদীর পাড়। গত একমাস ধরে ট্রাক্টর-টলি চলাচলের কারণে এলাকায় ব্যাপক ধূলোবালির রাজ্য হয়েছে।

কাঁচা সড়কটিতে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ট্রাক্টর-টলির অত্যাচারে আলী হাজী সড়কের দু পাশের বেশ কয়েকটি সরকারি গাছও ভেঙে পেলা হয়েছে। চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল হান্নানসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, নদীর মাটি কেটে এখানে ইটভাটা করা হচ্ছে। বর্ষায় আশপাশের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে পারে। এতে দুর্ভোগে পড়বে শত শত পরিবার। পানিতে তলিয়ে যেতে পারে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবুল কালাম জানান, আমি একজন নেতা ও মেম্বার। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করেই মাটি কেটে ইটভাটা তৈরি করছি। তারা আমাকে অনুমতি দিয়েছেন।

চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার জানান, আমার পরিষদের একজন মেম্বার ভূলুয়া নদী থেকে মাটি কেটে ইটভাটা তৈরি করছেন বলে আমি শুনেছি। আসলে ওই স্থানটি ইটভাটার জন্য উপযোগী নয়। নির্মানাধীন ইটভাটার পাশে আদর্শ কলোনি, মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে। তাই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, আবুল কালাম তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্য কথা বলেছেন। তিনি ইটভাটা তৈরী ও নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে কিছুই জানেননা বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা    এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, আরো সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে আমাকে ফোন করেছেন। আমি লোক পাঠিয়েছি। ওই মেম্বারের এ অনৈতিক কাজের কথা শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!