নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী
দেশের বাজারে আগে থেকেই দফায় দফায় বাড়তে থাকা আটা-ময়দার দাম এক লাফে ৫০ কেজির বস্তায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর, ফাস্ট ফুডসহ বেকারি পণ্যের হোটেল-রেস্তোরাঁর বিভিন্ন খাবারের দাম বেড়েছে। বেড়েছে নুডলসের দামও। ক্রেতাদের ধরে রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠান দাম না বাড়িয়ে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে বিক্রি করছেন।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদরে গত এক মাসেই আটার দাম বেড়েছে ১৫.০৭ শতাংশ এবং ময়দায় বেড়েছে ১৫.৬৯ শতাংশ।
গম আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বে গমের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে দামও বেড়ে গেছে। যুদ্ধের আগে প্রতি টন গম ২৫০ ডলারে কেনা যেত। সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৪০০ ডলারের বেশি দামে। এর প্রভাবে আটা-ময়দা ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের দাম বাড়ছে।
বুুধবার নোয়াখালীর মাইজদী পৌরবাজারসহ বিভিন্ন বাজার এবং বিভিন্ন বাজারের ছোট-বড় হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, প্যাকেটজাত আটা এক কেজি ৫০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খোলা ময়দা প্রতি কেজি ৬৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ কম্পানির নুডলসের দাম প্যাকেটে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিভিন্ন কম্পানির বড় বিস্কুটের প্যাকেটের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।
১৫০ গ্রাম ওজনের চানাচুর প্যাকেটে ৩০ টাকা বেড়েছে। বিভিন্ন কম্পানির আকারভেদে পাউরুটিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১১০ টাকার কেক ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফাস্ট ফুডের আইটেমের মধ্যে বার্গার, পিৎজা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল ৫-১০ টাকা বেড়েছে। কিছু রেস্তোরাঁ খাবারের দাম বাড়ালেও এখনো বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ ক্রেতাদের ধরে রাখতে দাম না বাড়িয়ে পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।
সোনাপুর এলাকায় একটি হোটেলে ঈদের আগে প্রতিটি পরোটা বিক্রি হতো পাঁচ টাকায়। গতকাল গিয়ে দেখা যায় পরোটা ১০/১২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ডিম ভাজিও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। পাঁচ টাকার সিঙ্গারা, সমুচা, পেঁয়াজুর দাম না বাড়িয়ে আকার ছোট করে বিক্রি করা হচ্ছে।
হোটেল ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত বলেন, আটার দাম গত দুই মাস ধরেই বাড়ছে, তার পরও আমরা পরোটার দাম বাড়াইনি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজির আটার বস্তায় এক লাফে ৪০০ টাকার বেশি বেড়েছে। তাই এখন দাম বাড়িয়েছি। তেলের দাম বাড়ায় ডিম-ভাজির দামও বাড়ানো হয়েছে।
দত্তের হাটের একটি হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, খাবারের কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। তবে খাবারের দাম না বাড়িয়ে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে বিক্রি করছে। জানতে চাইলে নোয়াখালী রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, আমরা চাইলেই দাম বাড়াতে পারি না, তাহলে কাস্টমার হারাতে হবে। খরচ ওঠাতে অনেকে অল্প দাম বাড়িয়েছে, আবার অনেকে দাম না বাড়িয়ে খাবারের পরিমাণ কমিয়েছে।
নোয়াখালী অটো-বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, বিস্কুট উৎপাদনের প্রধান উপাদান আটা-ময়দা। এখন আটা-ময়দার দাম বাড়ায় বিস্কুট উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। বিস্কুটের কয়েকটি কম্পানি নিজ উদ্যোগে দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশন থেকে দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কারণ এটি সাময়িক সমস্যা। আশা করছি, খুব দ্রুতই কেটে যাবে।
নোয়াখালীর একটি ফুড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এবার ভোজ্য তেলের দাম বাড়া এবং ভারতের রপ্তানি বন্ধ ঘিরে গমের বাজার চড়া হয়েছে। ফলে এবার বেকারি পণ্য উৎপাদনে প্রভাব ভয়াবহ হবে। আমরা এখনো দাম বাড়াইনি।
Leave a Reply