প্রাকৃতিক দুর্যোগে নোয়াখালীতে কমবে আমন উৎপাদন

  • আপডেট সময় রবিবার, অক্টোবর ২৭, ২০২৪
  • 44 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

চলতি বছর নোয়াখালীতে ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ।

চলতি বছর নোয়াখালীতে ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। সে অনুপাতে বীজতলাও প্রস্তুত করেছিলেন কৃষক। তবে আগস্টের বন্যা ডেকে আনে বিপর্যয়। তলিয়ে যায় সেসব বীজতলা। দীর্ঘমেয়াদে জলাবদ্ধতার কারণে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে পারেননি চাষীরা।

এ অবস্থায় আমন আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ৫০ হাজার ৪১৮ হেক্টর জমিতে এবার আমন আবাদ হয়নি, যার প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ ধানও উৎপাদন হবে না বলে মনে করছেন কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ৩০-৩৫ শতাংশ উৎপাদন কমতে পারে।

——————————————————

৫০ হাজার ৪১৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়নি

—————————————————–

স্থানীয় কৃষক বলছেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আমন ধান উৎপাদন হবে না। বীজতলা প্রস্তুতের সময় অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে বেশির ভাগ জমি অনাবাদি রয়েছে। কোথাও কোথাও আবাদ করলেও ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এতে আর্থিক সংকটে পড়তে হবে কৃষককে। তবে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ব্যাপক ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সবজি ও রবি শস্যে সরকারের দেয়া প্রণোদনা ক্ষতির কাটিয়ে ওঠতে সহায়ক হবে।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, বন্যার আগে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৮৬০, বেগমগঞ্জে ৩৩৬, সেনবাগে ৫ হাজার ৬২০, চাটখিলে ১৩০, কোম্পানীগঞ্জে ২৩ হাজার ১৪০, হাতিয়ায় ৭৭ হাজার ৮২৭, সোনাইমুড়িতে ২২, সুবর্ণচরে ৩৮ হাজার ৭১০, কবিরহাটে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে ধান উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয় ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ টন।

আগস্টের বন্যার পর আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমি। সেখানে ১৭ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে।

এছাড়া বেগমগঞ্জে ৩৩৩ হেক্টর কমে আবাদ হয়েছে ৩ হেক্টর। সেনবাগে ৫ হাজার ৬০৬ হেক্টর কমে আবাদ হয়েছে ১৪ হেক্টরে। চাটখিলে আবাদকৃত ১৩০ হেক্টর সবটুকুই নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে সেখানে আর আবাদ হয়নি। কোম্পানীগঞ্জে ৭ হাজার ৯৪০ হেক্টর কমে আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর।

হাতিয়ায় আবাদ কমেছে ১ হাজার ১২৭ হেক্টর। সোনাইমুড়িতে নির্ধারিত লক্ষ্যের ২২ হেক্টর জমির ধানই নষ্ট হয়েছে। সুবর্ণচরে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর কমে আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৯১০ এবং কবিরহাটে লক্ষ্যমাত্রার ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর কমে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টরে। দুর্যোগ-পরবর্তী আবাদ অনুযায়ী ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭ হাজার ২৮০ টন।

কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন মূলত শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে আবাদ শুরু হয়। এর আগেই বীজতলা প্রস্তুত করেন কৃষক। কিন্তু বীজতলা প্রস্তুত করার পর যখন চারাগুলো বড় হতে শুরু করে, তখন থেকেই বৃষ্টি দেখা দেয়। অতিবৃষ্টিতে বীজতলা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে অনেকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।

দ্বিতীয় দফায় বীজতলা প্রস্তুত করা হলেও বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। তার পরও কিছু কৃষক জমিতে আমন আবাদ করেছেন। যারা আগাম বীজতলা করেছেন, তারা শ্রাবণের শুরুতে আবাদ করতে পেরেছেন। অনেক কৃষক এ বছর তিন দফায় আমন আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ কৃষকের ধান নষ্ট হয়েছে। ২৫ শতাংশ কৃষক আবাদকৃত আমন পুরোটাই নিশ্চিত করতে পেরেছে। অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ কৃষকের আবাদ করা ফসলের আংশিক টিকেছে।

সুবর্ণচর উপজেলার পশ্চিম চরজব্বার গ্রামের কৃষক কাদের মিয়া বছরজুড়ে সন্তাদের পড়ালেখা ও সংসার খরচের পুরোটাই জোগান দেন কৃষি খাত থেকে। গবাদিপশুর খাদ্যের জোগান আসে এ খাত থেকে। প্রতি বছর নিজের ও বর্গা মিলিয়ে ৩০ একর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেন। এ বছরও ৩০ একর জমিতে চাষ করেন।

প্রথম দফায় ১৫ একর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেন। তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। দফায় দফায় বৃষ্টিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ১৫ একর জমিতে একে একে তিনবার আবাদ করেন। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১ একর জমির আমন কিছুটা টিকেছে। সব মিলিয়ে এ বছর তার ২৯ একর জমিই অনাবাদি রয়ে গেছে।

আগামী এক বছর কীভাবে সংসার চালাবেন, গবাদিপশুর খাদ্যের জোগান দিবেন কীভাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না। রবি মৌসুমেও আবাদ করতে পারবেন না। কারণ আমন বিক্রির অর্থ দিয়েই মূলত রবি মৌসুমে বিভিন্ন শস্য আবাদ করেন।

কথা হয় চরজুবলির কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি শুধু কৃষক নন, সুবর্ণচরের কৃষককের নেতাও। এ বছর অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ ধানও উৎপাদন হবে না বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, একদিকে তিন দফায় আবাদ করেও কৃষক ফসল টেকাতে পারেনি। যারা টিকিয়েছে তাদের ধানও পরিপূর্ণ হবে না। এতে সংকটে পড়বে পুরো উপজেলার কৃষি খাত। আর্থিকভাবে লোকসানে পড়তে হবে কৃষককে। অনেকের পরিবার এবার বছরজুড়ে নিজেদের যে খাদ্যের জোগান দেয, তাও পাবে না।

——————————————————————————-

সৌজন্যে : ভিন্ন দৈনিক।

——————————————————————————-

একই অবস্থা সদর উপজেলা, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জে। কবিরহাট উপজেলার সোন্দলপুর ইউনিয়নের কৃষক আবেদ আলী জানান, তিনি সাত একর জমিতে আবাদ করেছেন দুই বার। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে পুরো জমিই অনাবাদি পড়ে রয়েছে।

তবে আমন উৎপাদন কম হবে স্বীকার করলেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও হবে না—এমন কথা মানতে নারাজ জেলা কৃষি বিভাগ। তাদের দাবি, হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জে তেমন ক্ষতি হয়নি। ফলে লক্ষ্যমাত্রার ৬৫-৭০ শতাংশ ধান উৎপাদন হবে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাস বলেন, আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক ও কৃষি বিভাগ একসঙ্গে কাজ করছে। শীতকালীন সবজি ও রবি মৌসুমে আগাম বোরো ধানের বীজ প্রণোদনা দিয়ে কৃষককে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া যাবে। এরই মধ্যে সরকার শীতকালীন সবজি ও বোরো ধানের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা দিয়েছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!