ইসলামে যেসব ব্যক্তির প্রশংসা করা নিষিদ্ধ

  • আপডেট সময় বুধবার, নভেম্বর ২০, ২০২৪
  • 34 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
২০ নভেম্বর, ২০২৪

শরিয়তের মূলনীতির মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তির প্রশংসা করা বৈধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ একাধিক নবীর প্রশংসা করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘ যখন জাকারিয়া কক্ষে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বলল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। সে হবে আল্লাহর বাণীর সমর্থক, নেতা, স্ত্রী-বিরাগী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৯)

ইসলামে ব্যক্তির প্রশংসা বৈধ, তবে তা অবশ্যই সীমা রক্ষা করে করতে হবে। এমনকি নবী-রাসুলের প্রশংসার ক্ষেত্রেও ইসলাম সীমালঙ্ঘন অনুমোদন করে না।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘ তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না, যেমন ঈসা ইবনে মারইয়ামের ব্যাপারে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই বোলো—আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৪৫)

যেসব প্রশংসা নিষিদ্ধ

শরিয়ত বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে কখনো কখনো ব্যক্তির প্রশংসা নিষিদ্ধ করেছে ; যেমন—

১. আত্মপ্রশংসা : আত্মপ্রশংসা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, তিনিই সম্যক জানেন কে আল্লাহভীরু।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)

২. অতিপ্রশংসা : কারো অতিপ্রশংসা করা ইসলামে নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ আল্লাহর শপথ ! আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন তার চেয়ে উঁচু মর্যাদা আমাকে দান করো সেটা আমি পছন্দ করি না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২১৪১)

৩. পাপিষ্ঠ ব্যক্তির প্রশংসা করা : যে ব্যক্তি প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত, যে মানুষের ওপর অত্যাচার করে, তার প্রশংসা করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন কোরো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৭৭)

৪. সামনে প্রশংসা করা : কোনো ব্যক্তির সামনে তার প্রশংসা করতে ইসলাম নিরুৎসাহ করেছে। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বলেন, ‘ তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে বা তোমরা লোকটার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৬৩)

৫. তোষামোদ ও চাটুকারিতা : কোনো ব্যক্তির ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে শুধু তার প্রশংসা করা বা কারো চাটুকারিতায় লিপ্ত হওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘ তোমরা পরস্পরের অতিপ্রশংসা ( তোষামোদ ও চাটুকারিতা ) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা হত্যাতুল্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭৪৩)

৬. প্রশংসাপ্রত্যাশীদের প্রশংসা : পবিত্র কোরআনে প্রশংসাপ্রত্যাশীদের নিন্দা করা হয়েছে। সুতরাং এমন ব্যক্তিদের প্রশংসা পরিহার করা আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘ যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে—এমন তুমি কখনো মনে কোরো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৮)

প্রশংসা কখন বৈধ হয়

সদুদ্দেশ্যে সীমার মধ্যে থেকে একজন মুমিন অপর মুমিনের প্রশংসা করতে পারে ; যেমন—

১. অন্যের কৃতজ্ঞতা আদায় করা। ইসলাম অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা আদায়ে উৎসাহিত করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে (যথাযথভাবে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২১৩৩১)

২. ব্যক্তিকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘ আবদুল্লাহ কতই না উত্তম ব্যক্তি, যদি সে তাহাজ্জুদ আদায় করত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৫৬)

৩. মানুষ যেন তার প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা ও অবস্থান লাভ করে এ জন্য প্রশংসা করা বৈধ। মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে শোয়াইব (আ.)-এর এক কন্যা বলেছিলেন, ‘ হে পিতা ! আপনি একে মজুর নিযুক্ত করুন। কেননা আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৬)

আল্লাহ সবাইকে ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!