স্ত্রীর মোহরানা কি ঋণের অন্তর্ভুক্ত ? ইসলাম যা বলে

  • আপডেট সময় রবিবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
  • 14 পাঠক

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ 

ঋণ নেয়া এমন কোনো মামুলি বিষয় না যে ইচ্ছামতো নিয়ে ভোগ করলাম, পরে আর তা পরিশোধ করলাম না; বরং ঋণের দায়বদ্ধতা বড় কঠিন এবং এর পরিণতি ভয়াবহ।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঋণকে ‘ মহব্বত ও ভালোবাসার কাঁচি ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ঋণ আত্মীয়তা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বিনষ্ট করে দেয়। এ জন্য যথাসম্ভব ঋণ না নিয়ে অল্পে তুষ্ট থাকা উচিত।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ঋণগ্রহীতার মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের আগে ঋণ আদায় করার কথা বলেছেন। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)

ঋণ বান্দার হকের অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য পরিশোধ করা ছাড়া এর দায়বদ্ধতা থেকে ঋণগ্রহীতা কোনোভাবেই মুক্তি পাবে না। আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ! আল্লাহর রাস্তায় কেউ শহীদ হলো, সে পুনরায় জীবিত হলো, আবার শহীদ হলো, অতঃপর জীবিত হয়ে আবার শহীদ হলো, তবু সে জান্নাতে যাবে না, যতক্ষণ না সে স্বীয় ঋণ পরিশোধ করবে।’ (সহিহ বুখারি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় ঋণ থেকে আশ্রয় কামনা করতেন এবং একে কুফরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় ঋণ ও কুফর থেকে আশ্রয় চাইতেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল ! উভয়টা কি সমান ? তিনি বলেন, হ্যাঁ, উভয়টা সমান।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই এই দোয়া করতেন—‘ হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে আশ্রয় চাই। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনার ঋণ থেকে বেশি পরিমাণে আশ্রয় চাওয়ার কারণ কী ? তিনি বললেন, মানুষ যখন ঋণগ্রস্ত হয়, তখন সে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদার বরখেলাপ করে।’ (সুনানে নাসায়ি)

ঋণ গ্রহণ অপমানের প্রতীক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ যখন আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে চান, তখন তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন।’ (সুনানে আবু দাউদ)

সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। আর জুলুমের শাস্তি ভয়াবহ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ যে ব্যক্তি অযথা ঋণ আদায় করবে না, সে জালিম।’ (সহিহ মুসলিম)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ আদায়ে গড়িমসি করবে, সে প্রতিদিন, প্রতি শুক্রবার এবং প্রতি মাসে জালিম উপাধিতে ভূষিত হবে।’ (সুনানে তাবরানি)

মনে রাখতে হবে যে স্ত্রীর মোহরানাও ঋণের অন্তর্ভুক্ত। এটি অনাদায়ে স্বামীর ঘাড়ে তা ঋণস্বরূপ বহাল থাকবে। শুআইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ যে ব্যক্তি বিয়ের সময় মোহরানা নির্ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তা আদায়ের নিয়ত ছিল না, তবে সে ব্যক্তি ব্যভিচারী হয়ে মরবে।’ (সুনানে তাবরানি)

আল্লাহ তাআলা আমাদের ঋণমুক্ত জীবন দান করুন।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!